দুর্গাপুর, ২৭ অক্টোবর (হি. স.) চার মাস আগে আবেদন করা হয়েছিল। সেই মত মঞ্জুর হয়েছিল। কিন্তু, অনুমোদনের পরও মিলল না রক্তদানের মোবাইল বাস। তবে সেই প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারে নি রক্তদান আন্দোলনে। বাধা টপকে সাত পরিবারের এক উঠোনের কালিপুজোয় নিয়ম করে অনুষ্ঠিত হল রক্তদান শিবির। উৎসবের মেজাজে সাত পরিবার ছাড়াও আরও অনেকে সেচ্ছায় রক্তদান করলেন। বৃহস্পতিবার ভাইফোঁটার এমনই নজিরবীহিন ঘটনার সাক্ষী রইল গোটা শিল্পশহর দুর্গাপুরের সঙ্গে গোটা রাজ্য। একই সঙ্গে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলাতিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
ভাইফোঁটা। বোন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে মঙ্গল কামনা করে। কোন এক সময় দুর্গাপুর জেসপ গেট সংলগ্ন গুরুং পরিবার রক্ত সঙ্কটের শিকার হয়। আর তার পর থেকে অঙ্গিকার নেয় প্রতিবছর উৎসবের সঙ্গে রক্তদান পালিত করবেন। একইরকম ভাবে রক্তদানে সামিল হয় সাহা পরিবার ও অন্যান্য সব পরিবার। শিল্পশহর দুর্গাপুর ছাড়াও গোটা রাজ্যে এমনই ব্যতিক্রমি রক্তদান শিবিরের নজির রেখেছে দুর্গাপুর জেসপ গেট সংলগ্ন কালি পূজা কমিটি। মুলত সাত ঘর এক উঠোন। সব পরিবার মিলে কালিপুজো করেন। এই সাত পরিবারের বাস হলেও কালি পুজোকে উপলক্ষে করে উন্মাদনা আর হৈ-হুল্লোড় যেন যমজমাট করে রাখে। সব পরিবারের ভাই বোন আত্মীয় স্বজন এই সময়ে এসে একসঙ্গে জড়ো হয়। সেখানেই ভাই বোনেরা গত পাঁচ বছর ধরে “যত আছি ভাই ও বোন এসো করি রক্তদানের পণ” স্বেচ্ছা রক্তদানের অঙ্গীকার করে আসছে। পরিবারের সকলে মিলে রক্তদান করার এই উৎসবে তারা হারিয়ে যায়। উদোক্তাদের পক্ষে যিশু গুরুং নেগেটিভ গ্রুপের রক্তদাতা। যিনি বছরে চারবার রক্তদান করে রক্তরত্ন সম্মান পেয়েছেন। নেগেটিভ গ্রুপের পরিবারের সাতজন এবারে রক্তদান করেন। একইরকম ভাবে সাহা পরিবারের দুই ভাই ও তাদের স্ত্রী সহ তিন কন্যা ও এক ভাই সহ আটজন রক্তদান করলেন। এদিন ১১ টি পরিবারের ৪৪ জন রক্তদান করেন। তাদের মধ্যে ১১জন বোন নেগেটিভ গ্রূপ এর ৪জন। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল ব্লাড সেন্টারের মেডিকেল টীম রক্ত সংগ্রহ করে। শিবির পরিচালনায় দুর্গাপুর ব্লাড ডোনার্স কাউন্সিল। তবে রক্তদানের উৎসাহ থাকা স্বত্ত্বেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলাতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে এদিন শিবিরে দেখিয়ে দিল। গত কয়েকবছর ধরে রক্তদান শিবিরের জন্য বিশেষন মোবাইল বাসের ব্যাবস্থা করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সেই মত গত ৬ জুলাই মোবাইল বাসের জন্য আবেদন করে দুর্গাপুর ব্লাড ডোনার্স কাউন্সিল। এবং অনুমোদনও পায়। কিন্তু, আশ্চর্য্যজনকভাবে সেই বাস এদিন আসেনি।
আর প্রশ্ন এখানেই, আগাম অনুমোদন দেওয়ার পরও কেন রক্তদানের মোবাইল বাস পাওয়া গেল না? দুর্গাপুর ব্লাড ডোনার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক সজল বোস জানান,” দুর্ভাগ্যজনক। শেষ মুহুর্তে জানানো হয়, চালক নেই। তাই বাস পাঠানো হয়নি।” প্রশ্ন, রক্তদান জীবন দান। সঙ্কট মেটাতে ঢালাও ফিরিস্তি। অথচ রক্তদান মোবাইল বাসে একজন চালক কেন? দুর্গাপুর ব্লাড ডোনার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক সজল বোস আক্ষেপের সঙ্গে বলেন,” স্বাস্থ্য দপ্তর ব্লাড সেন্টারে বাস দাঁড় করিয়ে রাখলেও ড্রাইভার ব্যবস্থা করতে পারলেন না কেন জানিনা? তবুও ততক্ষনাৎ খাটের ব্যবস্থা করে শিবির করা হয়েছে। উৎসাহের সঙ্গে রক্তদান করেছে সকলে। স্বাস্থ্য দফতর মোবাইল বাস না পাঠিয়ে যেটা করল, এরকম হলে আগামীদিনে রক্তদান আন্দোলনে প্রভাব পড়বে। আজকের শিবির পশ্চিমবঙ্গের বুকে অন্যতম নজির রাখল। ভাই বোনেদের এই সামাজিক ভাবনাকে কুর্নিশ জানাই।”
যদিও পশ্চিম বর্ধমান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সেখ মহম্মদ ইউনুস জানান,” বিষয়টি শুনেছি। মেবাইল বাস রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে। এদিন ঘটনার বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নজরে আনা হয়েছে।”