কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের তিন বছর : লাদাখের জীবনরেখা হয়ে উঠবে জোজিলা পাস, ২০২৬-এর আগে সম্পূর্ণ হবে কাজ

কার্গিল/দ্রাস, ২৭ অক্টোবর (হি.স.): কৌশলগত এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে লাদাখ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। আগামী ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে তিন বছর পূর্ণ করবে লাদাখ। এই তিন বছরে লাদাখের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। চীন-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্তের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার কারণে লাদাখের বিশেষ কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। শীতকালে প্রবল তুষারপাতের কারণে শ্রীনগর-লেহ জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে দ্রাস, কার্গিল, লেহ এবং সিয়াচেনে পৌঁছানো কঠিন। এই ঘাটতি পূরণে জোজিলা সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হচ্ছে। হিমালয়ের এত উচ্চতায় টানেল নির্মাণের সাহস আগে কোনও সরকারই দেখায়নি। জোজিলা পাস বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রুটগুলির মধ্যে একটি। জোজিলা সুড়ঙ্গ ভবিষ্যতে লাদাখের লাইফলাইন হিসেবে প্রমাণিত হবে।

এই জোজিলা টানেল নির্মাণ করছে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড, এই সংস্থার প্রোজেক্ট প্রধান হরপাল সিং বলেছেন, “জোজিলা টানেলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৩০০ মিটার উচ্চতায় তৈরি করা হচ্ছে, যা সর্বোচ্চ উচ্চতায় দেশের দীর্ঘতম টানেল। নতুন অস্ট্রিয়ান টানেলিং পদ্ধতি ব্যবহার করে একক টিউব টানেল তৈরি করা হচ্ছে। টানেল নির্মাণের পর জোজিলা পাস অতিক্রম করতে প্রায় আড়াই ঘণ্টার কঠিন যাত্রা মাত্র ২০ মিনিটে শেষ হবে। ভারত সরকারকে এই টানেল তৈরি করে ২০২৬ সালের মধ্যে হস্তান্তর করতে হবে।

জোজিলা টানেলের কৌশলগত গুরুত্ব

প্রবল তুষারপাতের কারণে শীতকালে শ্রীনগর থেকে দ্রাস, কার্গিল এবং লেহ-কে সংযুক্তকারী জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এমন পরিস্থিতিতে লাদাখে মোতায়েন সেনাবাহিনীর কাছে সামরিক সরঞ্জাম এবং রসদ সরবরাহ করা কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। চীন ও পাকিস্তানের দিক থেকে কোনও আন্দোলন হলে সামরিক চলাচলের জন্য শুধু আকাশপথের ওপর নির্ভর করা হয়। টানেলটি নির্মিত হলে সারা বছরই পথ খোলা থাকবে। সামরিক আন্দোলন সহজ হবে। বর্তমানে লাদাখের জন্য সবজি ও রেশন অনেক আগেই সংগ্রহ করতে হয়। এই চার মাসে চণ্ডীগড় থেকে লাদাখে সেনাবাহিনীর রসদ পরিবহনে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
টানেলের বর্তমান অবস্থা
টানেলের প্রজেক্ট হেড হরপাল সিং বলেছেন, “টানেলের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার। কাশ্মীর ও লাদাখের উভয় পাশে প্রায় ৪.৫ কিলোমিটার টানেল তৈরি করা হয়েছে। যে গতিতে কাজ চলছে সে অনুযায়ী ২০২৬ সালের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে। টানেলের খরচ ৪৫০০ কোটি টাকা। প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। বাকি ৩৫০০ কোটি টাকার কাজ আগামী চার বছরে শেষ হবে। টানেলের কাজ প্রায় ৩০ শতাংশ শেষ। টানেল সংযোগের জন্য একটি ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ রোডও তৈরি করা হচ্ছে, রাস্তার প্রায় ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পাহাড় থেকে আসা তুষার থামাতে সড়কে ছোট কৃত্রিম টানেল (টিউব)ও করা হয়েছে, যাতে বরফ যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে।

গতি পাবে লাদাখের পর্যটন

টানেল নির্মাণের ফলে লাদাখে পর্যটনের পাশাপাশি শিল্পের বিকাশ ঘটবে। লাদাখ সবুজ শক্তির কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হবে। কাশ্মীর উপত্যকা শীতকালেও লাদাখের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। লাদাখের প্রায় ৩.৫ লক্ষ মানুষ সরাসরি সুবিধা পাবেন। লাদাখে আরও বেশি উচ্চতায় আরও টানেল তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যা লেহ থেকে হিমাচলকে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত করবে।
সমান্তরাল আরেকটি টানেল নির্মাণ করা হবে
জোজিলা টানেলের সমান্তরালে আরেকটি টানেল তৈরি করা হবে, সেটি একই আকারের হবে। ভবিষ্যতে যানজট বাড়লে যাতায়াতের জন্য আলাদা টানেল হবে। দ্বিতীয় টিউবের ডিপিআরের কাজ শেষ পর্যায়ে। দু’টি টানেলই একে অপরের সঙ্গে পাঁচশ মিটার দূরত্বে সংযুক্ত হবে। প্রতি ১২৫ মিটারে জরুরি ফোন করার সুবিধা থাকবে। টানেল শুরু এবং শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্যামেরা ইনস্টল করা হবে। যোগাযোগ লাইনের মাধ্যমে তাদের তথ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠানো হবে।

নতুন অস্ট্রিয়ান টানেলিং পদ্ধতিতে টানেলটি তৈরি করা হচ্ছে

আগে আমাদের সাধারণ টানেল ছিল, যেখানে দুর্ঘটনা বেশি হত। অগ্রগতি ধীর ছিল। এখন নিউ অস্ট্রিয়ান টানেলিং পদ্ধতিতে টানেলটি তৈরি করা হচ্ছে। এটি একটি খুব নিরাপদ ড্রাইভ টানেলিং সিস্টেম। কর্মী এবং কাঠামোর আরও নিরাপত্তা আছে। টানেলের স্থায়িত্ব অনেকদিন থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *