মাজুলি (অসম), ৬ অক্টোবর (হি.স.) : উজান অসমের মাজুলি জেলার উদীয়মান জনপ্ৰিয় এক শিশুশিল্পী তেজস্বিতা বরুয়ার মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে গড়মুড় হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. অমূল্য গোস্বামীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মাজুলি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের নিৰ্দেশে ডা. অমূল্য গোস্বামীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ডা. অমূল্য গোস্বামীর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে ডা. কিশোর বৰ্মনকে। এদিকে আজ বিকালে শিশুশিল্পী তেজস্বিতা বরুয়ার বাড়িতে তার বাবা-মা এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সরকারের পক্ষ থেকে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে ঘটনা সম্পর্কে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস প্রদান করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত।
বুধবার মহাপুরুষ শংকরদেবের পুণ্য জন্মতিথি উপলক্ষ্যে স্থানীয় নামঘরে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বছর ১৪-এর তেজস্বিতা বরুয়া। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মাজুলির জনপ্রিয় শিশুশিল্পী তেজস্বীর অকালমৃত্যুর জন্য হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার গাফিলতিকে দায়ী করে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরই মধ্যে জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক বিপুল দাসের একটি মন্তব্যে আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেছিলেন, প্রাথমিক তদন্তে চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি নেই। তাছাড়া হাসপাতাল সূত্রের দাবি, কার্ডিও অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে তেজস্বিতা বরুয়ার। সে হৃদরোগী ছিল, এ ব্যাপারে আগে কোনও চিকিৎসা করানো হয়নি।
এদিকে আজ সকালে এলাকার বিধায়ক ভূবন গাম তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বলেছেন, ‘গড়মূড়ে অবস্থিত শ্ৰীশ্ৰী পীতাম্বরদেব গোস্বামী জেলা হাসপাতালে মাজুলির প্ৰতিভাবান শিশুশিল্পী তেজস্বিতা বরুয়ার অকালমৃত্যুতে আমার সঙ্গে সমগ্ৰ মাজুলিবাসী সহ গোটা অসমবাসী মর্মাহত। ঘটনা সম্পৰ্কে ইতিমধ্যে গড়মুড়ে জেলা হাসপাতালের প্রধান ডা. অমূল্য গোস্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মানুষ। আমি রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে ডা. অমূল্য গোস্বামীকে ওই পদ থেকে অপসারণ করে ডা. কিশোর বৰ্মনকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করার ব্যবস্থা করেছি।’
মাজুলির মেধাবী ছাত্রী, প্রতিভাবান সংগীত-নৃত্যশিল্পী তেজস্বিতা বরুয়ার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুকে সহজভাবে নিতে পারেনি রাজ্য সরকার। তাই আজ সকালে গুয়াহাটি থেকে রওয়ানা হয়ে বিকেলে মাজুলি পৌঁছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন এনএইচএম রাজ্য মিশনের ডিরেক্টর ড. এমএস লক্ষ্মীপ্রিয়া, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. নীলমাধব দাস এবং এনএইচএম-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ডা. মনোজ চৌধুরী।
মাত্ৰ ১৪ বছর বয়সে মাজুলি কমলাবাড়ির জনপ্ৰিয় শিশুশিল্পী তেজস্বিতা বরুয়ার আকস্মিক মৃত্যুকে কেউ মেনে নিতে পারছেন না। সংগীত-নৃত্যের মধ্যেই জনপ্ৰিয় শিশুশিল্পীর জীবন-সমাপ্তি ঘটে সাংস্কৃতিক কাৰ্যসূচির মাধ্যমে। গুরুদেব শ্রীমন্ত শকরদেবের জন্মজয়ন্তীতে বড়গীত পরিবেশন করতে গিয়ে মৃত্যুর শীতল কোলেত ঢলে পড়ে সে।
সংস্কৃতির পীঠস্থান মাজুলির কমলাবাড়ির দরিয়া গাঁওয়ের বাসিন্দা বাবুল বরুয়া এবং নীলাক্ষি বরুয়ার একমাত্ৰ কন্যা ছিল তেজস্বিতা। মাত্ৰ তিন বছর বয়স থেকে সে সংগীত পরিবেশন করে জনতার হৃদয় জয় করেছিল। কিন্তু প্ৰতিভা পূৰ্ণতা পাওয়ার আগেই অকালপ্রয়াণ ঘটে তার। বুকফাঁটা কান্নাভরা গলায় তার বাবা বলেন, তাঁর মেয়ে তেজস্বিতা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেত। তার যাতায়াতে সহায়তা করতে মাত্র চারদিন আগে নতুন একটি চার চাকার কার কিনে দিয়েছিলেন মেয়েকে।