বাঁকুড়া, ৩ অক্টোবর (হি.স.): কয়েক পুরুষ ধরে বিষ্ণুপুর থানার অযোধ্যা গ্রামের জমিদার নীলকুঠীর দেওয়ান বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমিদারবাড়িতে হয়ে আসছে সাবেকি পুজো।
এই বাড়ির ২শতকের পুরোনো পুজোর রীতি রেওয়াজ এখনো একইভাবে রয়েছে। প্রাচীন জমিদারবাড়ির অনেক অংশ ভেঙে গেলেও বাড়ির পুজোয় রয়েছে ষোলোআনা বনেদিয়ানা। এই বাড়ির পুজোয় আজও ২৫ কেজি রুপোর চন্দ্রহাস পালকিতে চড়ে নবপত্রিকা বরণ করে আনা হয়। বাড়িতে আজও পুজোর ভোগ রান্না হয় রুপোর বাসনে। দেবীর নৈবেদ্যতেও থাকে জমিদারি আয়োজন।
প্রায় ২ শতক আগে বিষ্ণুপুর রকের অযোধ্যায় রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জমিদারির গোড়াপত্তন করেন, তখন থেকেই এই বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু। এখনও জমিদারির এস্টেটের আয়ে বংশের সাবেকি দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। একসময় বিষ্ণুপুরের মত রাজাদের দেওয়ান বাবু মনোহর বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবু লালমোহন বন্দ্যোপাধায় আর বাবু কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়ার সিমলাপাল থেকে হুগলির মঙ্গলঘাট পর্যন্ত ৪৫টা মৌজার ডাক নিয়ে জমিদারির গোড়াপত্তন করেন।
জমিদারি ছাড়াও এই বংশের আরো বাড়বাড়ন্তের পেছনে রয়েছে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার ইতিহাস। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জন চিক নামে বাঁকুড়ার এক নীলকর সাহেবের অগাধ সম্পত্তির মালিক হন সেসময়ের বংশের কনিষ্ঠ সদস্য গদাধর বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ায় চিক সাহেবের মোট ২২টা নীলকুঠির ম্যানেজার ছিলেন এই গদাধর। সেসময় বাঁকুড়ায় ভয়ংকর মহামারি দেখা দেয়। তাতে আক্রান্ত হয়ে জন চিক মৃত্যুশয্যায় ওই ২২টা নীলকুঠি – সহ নগদ টাকার অর্ধেক গদাধরের নামে লিখে দেন। তবে চিক শর্ত দেন, তাঁর মৃত্যু হলে তাঁকে ব্রিটেনে স্ত্রী ও আত্মীয়দের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে।
জন চিক বাঁকুড়াতেই মারা যান। গদাধর এরপরে ২১টা নীলকুঠি বিক্রি করে নিজের সম্পত্তি বাড়ান। শুধু অযোধ্যার নীলকুঠি রেখে দেন। পরে তা হয় অযোধ্যা হাইস্কুল। গদাধরের বিপুল সম্পত্তি
পেয়ে বন্দ্যোপাধ্যায় ভাইরা এই অযোধ্যাতেই বিশাল জমিদারবাড়ি তৈরি করেন। একইসঙ্গে তৈরি হয়। বাড়ির দুর্গা মন্দিরও।
এখন সেই জমিদারির কাছবিঘর থেকে সেরেস্তা ও সিংহদুয়ার ভাঙাচোরা অবস্থায় নীরবে অতীতের কথা বলে চলেছে। জমিদারবাড়ির অনেক অংশ ভেঙে পড়লেও কুলদেবী সিংহবাহিনীর দেবালয় আজও অক্ষত। দেবোত্তর সম্পত্তির পুকুর ও ধানিজমির আয়ে দেবীর পুজো হয়। প্রতি বছরের মত এবারেও সেই পুজো দেখতে আসছেন স্থানীয় মানুষরা। আসছেন দূরের আগ্রহীরাও।