জলপাইগুড়ি, ৩ অক্টোবর(হি.স.) : কলকাতার পাশাপাশি এবার থিমের বহর দেখা যাচ্ছে জেলাগুলিতেও। সাড়া ফেলে দিয়েছে জেলার পুজোর থিমগুলিও। সেখানেও সমান ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেই তালিকা থেকে বাদ যায়নি জলপাইগুড়িও। সোমবার সন্ধ্যায় যেন বাঁধভাঙা উল্লাস জলপাইগুড়িতে।
জলপাইগুড়ির ভিড় উপচে পড়ছে সেরা পুজোগুলি দেখতে। এর অন্যতম আসামমোড় তারাপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজা। কিন্তু, মহালয়ার আগেই সেখানে ঘটে গিয়েছিল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ে পুজো মণ্ডপ। মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল পুজো উদ্যোক্তাদের। এরপর কোনও রকমে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ফের মণ্ডপ তৈরি করান তাঁরা। তারপর নির্দিষ্ট সময়ই দর্শকদের জন্য তা খুলে দেওয়া হয়। এবারে এই পুজো ৫৬ তম বর্ষে পড়েছে। এবারের থিম ‘বিশ্ব শান্তি’। করোনাকালে যেভাবে সারা বিশ্বে অশান্তির একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। চারদিকে মৃত্যু মিছিল শুরু হয়। কোভিডের পর বিশ্বে শান্তির জন্য এই পুজো প্যান্ডেল তৈরি করা হয়।
পান্ডাপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির এবারের থিম ‘সাত পাকে বাঁধা’। এবারে ৯৪ তম বর্ষের পুজো। বাজেট প্রায় ১২ লাখ টাকা। গোটা মণ্ডপের বাইরে ভেতরে কুলো, প্রজাপতি, টোপোর, ছোটবড়ো গাছ কৌটো, ময়ূর, বড় বৌ-এর পুতুল দ্বারা তৈরি হয়েছে মণ্ডপ সজ্জা। থিম ‘সাতপাকে বাঁধা’। মণ্ডপ সজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে কাঠের কাজ, শোলার কাজ, প্রজাপতি এবং গ্রামবাংলার কাজ তুলে ধরা হয়েছে।
জলপাইগুড়ি শহরের দুর্গা পুজোগুলোর মধ্যে বামনপাড়া সর্বজনীন দুর্গা পুজো অন্যতম। এবারের পুজো ৭১ তম বর্ষ। এবারের পুজোর থিম ‘ষোলআনা বাঙালিয়ানা’। বাজেট প্রায় ১০ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, দশকর্মা ভাণ্ডারের জিনিস পত্র দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। পুজোয় লাগে যেমন ঘট, মুচি , ঘন্টা, ঝুঁড়ি, ধুনুচি। স্থানীয় শিল্পী এবং শিলিগুড়ির শিল্পীরা পুজো মণ্ডপ তৈরির কাজ করেছেন।
কদমতলা দুর্গাবাড়ির পুজো এবছর ১০৩তম দুর্গাউৎসব। এ বছরে মণ্ডপ সজ্জার থিম সাবেকিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতার সংমিশ্রণ। পরিবেশ বান্ধব মণ্ডপ। একচালার ডাকের সাজের প্রতিমা। বাজেট প্রায় ১১ লাখ টাকা। হাতের কাজ, টেরাকোটা কাজ, পোড়ামাটির কাজ এবং ফাইবার গ্লাসের কাজ মণ্ডপ সজ্জায় তুলে ধরা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পীরা এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা এই কাজে সাহায্য করেছে।
দেশবন্ধুনগর উত্তরপল্লীর দুর্গাপুজো এবছর সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ। পুজোর বিশেষ আর্কষণ সূর্য মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ এবং কলকাতার কুমারটুলির প্রতিমা। কোচবিহারের শিল্পীরা করেছেন মণ্ডপ সজ্জা। রায়কতপাড়া বারোয়ারি ক্লাবের পুজোর মণ্ডপ সজ্জায় এ বছর নতুনত্ব রয়েছে। এবারের পুজোর প্যান্ডেল কেদারনাথ মন্দিরের আদলে করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির পাতকাটা কলোনি অগ্রণী সংঘ ও পাঠাগারের পুজো ৬৫ তম বর্ষ। গত দুই বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে বড় বাজেটের পুজো থেকে বিরত থাকার পরে এবার ফের স্বমহিমায় ফিরে এসেছে অগ্রনী সংঘ ও পাঠাগার। এবার প্রায় ৮ লাখ টাকা বাজেটে “বৌদ্ধ মন্দিরে”র আদলে মণ্ডপ সজ্জা করা হয়েছে।
জলপাইগুড়ি শহরের দুর্গা পুজোগুলোর মধ্যে বাবুপাড়া দুর্গাপুজো অ্যান্ড কালচারাল ক্লাবের সর্বজনীন দুর্গা পুজো অন্যতম। এবারের পুজো ১১১ তম বর্ষ। এবারের পুজোর থিম মহারাষ্ট্রের আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসত বাড়ির আদলে তৈরী পুজো মণ্ডপ। মণ্ডপে প্রতিমা থাকছেন ডাকের সাজের। বেতের ঝুড়ি দিয়ে তৈরি হয়েছে আলোকসজ্জাও। মণ্ডপ তৈরিতে শিল্পীর পাশাপাশি পুজো কমিটির সদস্যরাও হাত লাগিয়েছেন। মণ্ডপে ব্যবহার করা হয়েছে তেল রং।
প্রতিবারের মতো এবারও নতুন কিছু প্রয়াস নিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে দুর্গা পুজোয়। দর্শকদের মন কেড়ে নিতে এবারও নতুন থিম তুলে ধরছেন। এবারের দুর্গাপুজো ৭১তম। এবারের বিশেষ থিম “নারী শক্তি”। বাজেট প্রায় দশ লাখ টাকা। ইট ভাটার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপে। জাগ্রত সংঘ (অরবিন্দনগর) দুর্গা পুজো কমিটি পুজো এ বছর ৭৩তম। এবারের পুজোর থিম বাংলার হস্তশিল্প। বাজেট ১০ লাখ টাকা।