নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ সেপ্টেম্বর ৷৷ সুভাষপার্কে দরজা খুললো সিপিআইএমের অঞ্চল অফিসের৷ ২০১৮সালের নির্বাচনের পর থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে পার্টির সুভাষপার্ক অঞ্চল কার্য্যালয়৷ প্রায় ৫৫ মাস পর এই অফিসের দরজা খোলা উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয় জনসভা৷ জনসভায় উপস্থিত ছিলেন, সি পি আই এমের রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী, পশ্চিমবঙ্গের পার্টিনেতা শতরূপ ঘোষ, সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস৷ জনসভার শুরুতেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিআইএম বিধায়ক নির্মল বিশ্বাসের বলেন,কর্মসূচী বানচালের চেষ্টা করে শাসকদল৷ জমায়েতের জন্য এন সি অ্যাভেনিওর মোহর মঞ্চ ব্যাবহারের জন্য আবেদন করলেও মঞ্চ দেয়নি পুর পরিষদ৷ জমায়েতের দিনই মিছিল ডাকে শাসকদল৷ শেষে বিকেলের জনসভা এগিয়ে আনতে হয় দুপুরে৷ পার্টি অফিসের পাশের মাঠের ছোট্ট পরিসরের মধ্যেই মঞ্চ বেঁধে সভা করতে হয়৷ এরপরেও সভা শুরুর আধঘন্টা আগে মঞ্চের পাশে ময়লাবাহী তিনটি ভ্যানগাড়ি এনে দাঁড় করিয়ে দেয় পুর পরিষদ৷ যদিও গণ প্রতিবাদের মুখে একসময় পুর পরিষদ ময়লাবাহী গাড়ি সভাস্থল থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়৷ এদিনের জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সি পি আই এমর রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, বি জে পি — আই পি এফ টি জোটের শাসনে রাজ্য এখন সন্ত্রাসের আঁতুরঘর৷ বি জে পি সারা ত্রিপুরা রাজ্যকে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসনের ও গণতন্ত্রহীন শাসনের পরীক্ষাগার বানিয়েছে৷গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই এখানে৷মানুষকে জোর করে ঘরবন্দী করে রাখা হয়েছে৷ বিরোধী দলকে কথা বলতে দেওয়া হয় না৷বিধানসভার ভেতরে বাইরে একই অবস্থা৷দমবন্ধকর অবস্থা৷বিরোধী দলকে কর্মসূচী করতে দেওয়া হয় না৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে প্রতি ঘরে সুশাসনের কথা বলা হলো৷সুশাসনের নামে যা চলছে রীতিমতো দুঃশাসন৷অবাধে চলছে লুটপাট৷এদিনের জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পার্টিনেতা শতরূপ ঘোষ বলেন, খেটে খাওয়া মানুষ, সমস্যার ভারে নুইয়ে পড়া মানুষের পার্টি হলো সি পি আই এম৷ মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত এই পার্টির শক্তি৷ তাই লাল ঝান্ডার পার্টির ওপর এত হামলা হুজ্জুতি আক্রমণ সন্ত্রাস৷সর্বস্তরের গরীব মানুষের জন্য, শোষন বঞ্চনার অবসানের জন্য , ঐক্য সংহতির জন্য কথা বলে বলেই লাল ঝান্ডার পার্টির কর্মীদের রক্ত ঝরে অবিরত৷আর সাধারণ মানুষ আমাদের পার্টির প্রাণশক্তি বলেই এই পার্টির ঝান্ডা আজো সমুন্নত৷ চির সমুন্নত৷ অন্য কোন পার্টি হলে তা এতদিনে ধুয়েমুছে কবেই সাফ হয়ে যেতো৷ লাল ঝান্ডাকে উর্ধে তুলে ধরেই ত্রিপুরায়, পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য স্থানে শহীদের রক্তে রাঙা পথ বেয়ে এখানে আজো লড়াই হয়৷ বিগত জোট জমানায় যেমন অষ্টাশি থেকে তিরানববই সালে এরাজ্যে এত রক্তপাতের পরেও মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, এবারেও মানুষ হার স্বীকার করবেন না৷ এটাই ত্রিপুরার শিক্ষা৷ এটাই ত্রিপুরার মাটির উর্বরতা৷ নৃপেন চক্রবর্তী, দশরথ দেব, বীরেন দত্ত, বৈদ্যনাথ মজুমদারের মতো প্রবাদপ্রতিম কিংবদন্তি জননেতাদের স্মৃতি বিজরিত এই মাটি হার স্বীকার করবে কেন? ঐতিহাসিক লড়াই সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ত্রিপুরা মাথা উঁচু করেই বাঁচবে৷ শতরূপ ঘোষ বলেন, বি জে পি – শাসনে মানুষের রুজি রোজগার আয় উপার্জন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে৷ জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া৷ প্রতাদিন বাড়ছে দ্রব্যমূল্য৷ রান্নার গ্যাস, কেরোসিন, পেট্রোপণ্যের দাম দুদিন বাদে বাদেই আকাশ স্পর্শ করছে৷ব্যাংক, বীমা সহ সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, দেশের সব সম্পদ বেসরকারী মালিকানার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ অথচ এগুলো দেশবাসীর সম্পদ৷ স্বাধীনতার পর থেকে তিলে তিলে এগুলো গড়ে উঠেছে৷ আর মোদি যেন ভাবছেন এগুলো তার পিতৃসম্পত্তি৷ জলের দরে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির কাছে বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারী হাতে চলে যাচ্ছে৷ ফলে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীরা কাজ হারাচ্ছেন৷ ছাঁটাই হচ্ছেন৷নতুন করে কোন কর্মসংস্থানের পথ হচ্ছে না৷ তিনি বলেন, আমাদের সংগ্রাম বি জে পি -র কোন সাধারণ কর্মীর বিরুদ্ধে নয়৷ আমরা নীতির বিরুদ্ধে লড়ি৷বি জে পি দলের যে দু একজন নেতা দেশের মানুষকে অভুক্ত রেখে সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি আমরা৷মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে৷ তিনি বলেন, পি এম কেয়ার্সের নামে কপর্োরেট সংস্থাগুলো থেকে লক্ষ কোটি টাকা চাঁদা নিয়ে এখন সেসব কপর্োরেট সংস্থাগুলোর কর্মীদের ছাঁটাই করে দেওয়া হচ্ছে৷আদানী আম্বানিদের কাছে দেশ বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে৷ বড় বড় কপর্োরেট সংস্থাগুলোর ম্যানেজারি করছে এখন আদানী আম্বানিরা৷মোদি নিজেকে চৌকিদার বলে পরিচয় দিয়ে এখন দেশের সম্পদ পাহাড়া দেওয়ার বদলে সব সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে৷ ব্যাংকের সুদ কমিয়ে দিচ্ছে৷ ব্যাংকের টাকা তুলে দিচ্ছে তাদের হাতে, যারা টাকা নিয়ে আজ বিদেশে পালিয়ে গেছে৷ব্যাংক বীমা বেসরকারী করণের ফলে কাজ নেই এসব সংস্থার কর্মচারীদের৷ শতরূপ ঘোষ বলেন, কোভিডের মতো মারণব্যাধির সময় দেশের মানুষের চরম বিপদের সময় মোদি মুনাফার চিন্তায় পাগল হলেন৷ বলেছিল কালো টাকা আনবে৷ এলো না৷ বলেছিল দাউদ ইব্রাহিমকে ধরে আনবে৷ তাও হলো না৷পি এম কেয়ার্সের নাম এখন মানুষ বলছেন পকেটমার৷ ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের কথা বলছেন৷ কি করছে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার ? শতরূপ ঘোষ বলেন, ডাবল ইঞ্জিনের সরকার কি ত্রিপুরায় নতুন কোন বিশ্ববিদ্যালয় করেছে? কোন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় করেছে? কোন রাজ্যস্তরের বিশ্ববিদ্যালয় করেছে? এইমস-র ধাঁচে বা এইমস – মতো কোন হাসপাতাল করেছে? কিছুই করেনি৷ বামফ্রন্ট সরকার দুকিলোমিটার পর পর এ রাজ্যে সুকল করেছিল৷ আর এখন সুকলের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে৷ শিক্ষাকে বেসরকারীকরণ করে দিচ্ছে৷ শিক্ষা হয়ে যাচ্ছে বড়লোকদের ঘরের ছেলে মেয়েদের জন্য৷ সাধারণ গরীব ঘরের ছেলে মেয়েদের জন্য শিক্ষা আজ বিলাসিতা৷ বেকাররা চাকুরী চাইতে গেলে লাঠিপেটা করা হচ্ছে৷ কর্মচ্যুত শিক্ষক শিক্ষিকারা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছেনা৷
2022-09-25