Jishnu Debbarma:ট্রেডা কেন্দ্রীয় পুরস্কারে ভূষিত, ত্রিপুরার গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর লক্ষ্যে প্রশংসনীয় কাজের ফল, বললেন উপমুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ১৬ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : ত্রিপুরা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উন্নয়ন সংস্থাকে (ট্রেডা) কেন্দ্রীয় সরকার তিনটি পুরস্কারে ভূষিত করেছে। যেসব বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে সেগুলি হল, সেরা পারফর্মিং স্টেট নোডাল এজেন্সি, প্রধানমন্ত্রী কুসুম প্রকল্পের অধীনে সর্বাধিক সংখ্যক সোলার পাম্প স্থাপন এবং দ্বিতীয় সর্বাধিক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন। আজ সচিবালয়ের সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরার উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা রাজ্যের এই সাফল্যের সংবাদ জানিয়েছেন। গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প সফল রূপায়ণের ফলস্বরূপ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বিভিন্ন এজেন্সির মধ্যে ত্রিপুরা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উন্নয়ন সংস্থাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, বলেন তিনি।
এদিন উপমুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরার গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর লক্ষ্যে ট্রেডা প্রশংসনীয় কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী কুসুম প্রকল্পে ভুর্তুকিতে নতুন সোলার পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা করে তাদের দ্বিগুণ ফসল ও দিগুণ আয়ের জন্য অগ্রণী পদক্ষেপ নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় যেখানে গ্রিড পাওয়ার নেই সেখানে ৪,০০০টি সোলার পাম্প স্থাপনের জন্য ট্রেডা উদ্যোগ নিয়েছে। এরজন্য ব্যয় হবে ১১২ কোটি টাকা।

তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রী কুসুম-পাম্প সোলারাইজেশন প্রকল্পের আওতায় গ্রামোন্নয়ন বিভাগ, কৃষি বিভাগ এবং টিটিএএডিসি দ্বারা স্থাপিত ২,৬০০টি পাম্পকে সৌরপাম্পে রূপান্তর করা হবে। এমএনআরই, ভারত সরকার বেঞ্চমার্ক খরচের ৫০ শতাংশ প্রদান করবে এবং নাবার্ড-আরআইডিএফ’ এর মাধ্যমে রাজ্য সরকার বাকি ৫০ শতাংশ খরচের ব্যবস্থা করেছে। এতে ভোক্তাদের কোনও অর্থ দিতে হবে না।

তিনি জানান, রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তায় ত্রিপুরার প্রত্যন্ত জনজাতি অধ্যুষিত পাহাড়ি গ্রাম / পাড়া যেখানে বহুবছর ধরে ভৌগোলিক কারণে প্রচলিত বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বা হচ্ছে না ঐ সমস্ত গ্রামগুলিতে সোলার মাইক্রোগ্রিড প্রকল্প স্থাপন করে ট্রেডা বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এরকম ১২টি গ্রামে বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ১.২০ কোটি টাকা। এরকম আরও ৫০টি প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম / পাড়াকে সোলার মাইক্রোগ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকার ৫০০টি প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম / পাড়াকে সোলারের মাধ্যমে মাইক্রোগ্রিড স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
তাঁর দাবি, গ্রামীণ কৃষিজ অর্থনীতির উন্নতিতে ত্রিপুরায় ‘গ্রামীণ বাজার আলোক জ্যোতি প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় মোট ১,২৯১টি গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকার বাজারকে ১৫,০০০টি সোলার স্ট্রিট লাইটিং সিস্টেম স্থাপন করার মাধ্যমে আলোকিত করা হবে। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৩৩ কোটি টাকা।

তিনি জানান, ত্রিপুরা ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ জনগণের উন্নত জীবন জীবিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন হাসপাতাল, হোস্টেল, মোটরস্ট্যান্ড, বিশিষ্ট রাস্তা এবং অন্যান্য জনসমাবেশের স্থানগুলিতে ২২,৫০০টি সোলার স্ট্রিট লাইটিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। তাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা।
তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের সবকয়টি হাসপাতাল, পঞ্চায়েত অফিস, বিডিও অফিস, হোস্টেল, ভ্যাকসিন সেন্টার, আদালত কমপ্লেক্স, কলেজ এবং অন্যান্য সরকারি অফিসে বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ২.৬৮ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ভবনে এখন পর্যন্ত প্রায় ২.৫ মেগাওয়াট গ্রিড সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি জানান, প্রত্যন্ত গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয়জলের সমস্যা মেটাতে কমিউনিটি সোলার ড্রিংকিং ওয়াটার প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের জন্য ৯টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে ধলাই জেলার কিল্লা ব্লকের অন্তর্গত ছাইমারুয়া এবং দুর্গা চৌমুহনি ব্লকের ধনচন্দ্র পাড়াতে প্ল্যান্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ১.৩০ কোটি টাকা।
এদিন তিনি দাবি করেন, বাড়িঘরে রান্নার কাজে গ্রামীণ এলাকায় বায়োগ্যাস বা গোবর গ্যাস এক বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করছে যা এলপিজি সিলিন্ডারের পরিপূরক। তাই গোবর্ধন স্কিমের আওতায় প্রতি জেলায় দুটি করে মোট ১৬টি গ্রামে গুচ্ছবদ্ধভাবে মোট ৭৩২টি এক ঘনমিটারের বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। তাতে রাজ্য সরকারের ব্যয় হয়েছে ৩.২০ কোটি টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রামীণ বাজার, মোটরস্ট্যান্ড ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় সোলার হাই মাস্ট স্থাপন করার কাজ এগিয়ে চলছে। এ পর্যন্ত ধলাই জেলায় এই রকম ৫টি সোলার হাই মাস্ট বসানো হয়েছে।

উপমুখ্যমন্ত্রী জানান, গোমতী জেলার কিল্লা আরডি ব্লকের খরান সিং কামি পাড়াকে (ছাইমারুয়া গ্রাম) সৌর গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর রূপায়ণের কাজ এই মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে মোট ৭০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও রাজ্যের ১২টি জৈব গ্রামে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, সোলার পাম্প, সোলার স্ট্রিট লাইট, সৌর স্টাডি ল্যাম্প এবং উন্নত রান্নার চুলা ইত্যাদি স্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা।