কলকাতা, ১৪ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : মল্লিকা দাস, রিনি খাতুন, অঞ্জনা নন্দী— বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এই মুহূর্তে ব্যস্ততা খুব বেশি। ওঁরা হয় মহিলা ঢাকি বা অনুষ্ঠানের আয়োজক। ওঁদের ভাবনা দুর্গাপুজোর বায়না নিয়ে। সংসারের চাপ সামলিয়ে ওঁদেরও যেন পুজোর সময়টা হয়ে উঠতে হয় দশভূজা।
মল্লিকা থাকেন উত্তর ২৪ পরগণার মছলন্দপুরে। বছর চার ধরে ঢাক বাজান। স্বামী গোবিন্দ দাস ঢাকী হিসাবে নামকরা। আগামী ২২শে অষ্ট্রেলিয়া যাবেন পুজোয় ঢাক বাজাতে। গোবিন্দবাবুর বাবা মতিলালও ঢাক বাজাতেন। মতিলালডটকম নামে সংস্থা খুলে ঢাকী সরবরাহ করেন নানা অনুষ্ঠানে।
এই প্রতিবেদককে মল্লিকা বলেন, “গত দু’বছর অতিমারীর জন্য একটা অনিশ্চয়তা ছিল। এবার ঢাকীদের বাজার ভাল। বরাত আসছে। তবে শ্বশুর, অসুস্থ শাশুড়ি আর বছর পাঁচের ছেলেকে সামলে খুব সময় দেওয়ার অবকাশ নেই। দেখা যাক।“
রিনি খাতুন থাকেন বাউরিয়ার নলপুরে। বললেন, “১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু ছেলে হওয়ার পর বাবার কাছে ফিরে আসতে হয়। উপায় না দেখে ঢাক বাজাতে শুরু করি। শুভ দাস নামে এক ঢাকীর কাছে শিখি। এখন আর আমি নিজে বাজাই না। ‘স্টার ইভেন্টস’ নামে একটা সংস্থা তৈরি করে নাচ-গান হরেক অনুষ্ঠানের লোক আয়োজকদের কাছে পাঠাই।“
রিনির কথায়, “ঢাক, বাজনা, রাজস্থানী, ডান্ডি— সবেতেই পারদর্শী ছেলে, মেয়ে আমার চেনা আছে। আয়োজকদের কবে থেকে, ক’দিনের জন্য, ক’জনকে দরকার সেটা জেনে পরিকল্পনা ছকে ফেলি। বিভিন্ন জায়গার অর্ডার আসছে। বয়স্ক বাবা আর সাত বছরের মেয়েকে সামলিয়ে পুজোর সময় একটু বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি।“
লোকশিল্পের পীঠস্থান বলে খ্যাত কল্যাণগড়ের নট্টপাড়ার শিল্পীরা। দিল্লি এশিয়াডে যোগদানকারী এই পাড়ার অধিবাসী একই পরিবারের তিনজন। এও এক নজিরই বলা যায়। এই পরিবারেরই উচ্চ শিক্ষিত সজল নন্দী। নন্দী পরিবারের অঞ্জনা কিম্বা সোনা সরকারের কথায়, দিন দিন মহিলা ঢাকির দলের চাহিদা বাড়ছে। স্বগর্বে তাঁদের ঘোষণা, শুধু মহিলা বলেই যে তাঁদের লোকে ডাকছেন তা কিন্তু নয়, তাঁরাও পুরষের মত সুন্দর করে ঢাক বাজান। আর নিজেদের ঢাকটা নিজে হাতে বানানও।