জেনেভা, ১ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : এত দিন পশ্চিমী দুনিয়ার দাবি আর সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেই অভিযোগ সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার চিনের শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম নিপীড়নের অভিযোগ তোলা হল রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদে। ঘটনাচক্রে, যে পরিষদের সদস্য চিনও। রিপোর্ট বলা হয়েছে, ‘শিনজিয়াংয়ে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে চিনের বিরুদ্ধে।’
রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিশনারমিশেল ব্যাশলেট তার মেয়াদের শেষ দিনে ৩১শে আগস্ট চিনে মানবাধিকার সংক্রান্ত বহুল প্রতীক্ষিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। ৪৮ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে চিনের ওপর ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলা হয়েছে। চিনের তৎপরতাকে গুরুতর আখ্যায়িত করে এগুলোকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। চিনের প্রত্যন্ত শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম সংখ্যালঘুদের নিয়ে এই প্রতিবেদনে বিপুল সংখ্যক উইঘুর মুসলিম নিখোঁজ রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
রিপোর্ট পেশ করে চিলির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মিশেলের ঘোষণা, ‘‘আমি বলেছিলাম কার্যকালের মেয়াদ শেষের আগেই আমি এটি পেশ করব। আমি কথা রাখতে পেরেছি।’’
চল্লিশের দশকে স্বাধীন রাষ্ট্র পূর্ব তুর্কিস্তান দখল করে শিনজিয়াং প্রদেশ নামকরণ করেছিলেন চিনের প্রয়াত চেয়ারম্যান মাও জে দং। তার পর থেকেই সেখানকার বাসিন্দা উইঘুর মুসলিমদের একাংশ চিনা দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের লড়াই শুরু করেন। আর তখন থেকেই শুরু হয় ‘বিদ্রোহ দমনের’ অছিলায় লালফৌজের নৃশংস অত্যাচার। গত ছ’দশকে চিনা সেনার হামলায় সেখানে লক্ষাধিক মুসলিম ভূমিপুত্র নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ।
গত কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ উঠেছে, উইঘুর এবং তুর্কিভাষী ১০ লক্ষেরও বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীকে শিনজিয়াংয়ের বিভিন্ন ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’ বন্দি করে রাখা হয়েছে। বলপূর্বক তাঁদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টেও উইঘুরদের বন্দি করার অভিযোগে নিশানা করা হয়েছে শি জিনপিং সরকারকে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন জানানো হয়েছিল, আন্তর্জাতিক চোরাবাজারে বিক্রি হওয়া কিডনি, লিভার-সহ বিভিন্ন মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বড় অংশের মালিক চিনের বন্দিশিবিরে আটক হতভাগ্য উইঘুর মুসলিমরা! জোর করে তাদের অঙ্গ কেটে বিক্রি করছে বেজিং!
সাম্প্রতিক কালে চিন সরকার শিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় ১৬ হাজার মসজিদ ধ্বংস করেছে বলেও অভিযোগ। এর মধ্যে গত চার বছরেই অধিকাংশ মসজিদ ভাঙা হয়েছে। নষ্ট করা হয়েছে, মাজার, কবরস্থান এবং ইসলামিক তীর্থযাত্রার পথ ছিল শিনজিংয়া প্রদেশের রাজধানী উরুমকি এবং বাণিজ্য শহর কাশগড়ে প্রকাশ্যে নমাজ পাঠ, রোজা পালনের মতো ধর্মীয় কর্মসূচিতেও নানা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।-