পরাক্ৰমী সেনানি, দেশপ্রেমিক লাচিত বরফুকন ছিলেন সমগ্ৰ জাতির আদৰ্শ ও অনুপ্ৰেরণার উৎস, বলেছেন হেমন্তধিং

২৭ আগস্ট থেকে ৪০০ বছর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী কার্যক্রম ‘ভারতীয় ইতিহাস সংকলন সমিতি, অসম’-এর

গুয়াহাটি, ২৩ জুলাই (হি.স.) : পরাক্ৰমী সাহসী বীর সেনানি, একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক, সমগ্ৰ জাতির আদৰ্শ ও অনুপ্ৰেরণার উৎস লাচিত বরফুকনের ৪০০ বছর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ-৫১২৪’ শীর্ষক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ‘ভারতীয় ইতিহাস সংকলন সমিতি, অসম’। আজ শনিবার গুয়াহাটির ভরলুমুখ নারায়ণনগরে অবস্থিত আলোক ভবনের প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বছরব্যাপী কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরেছেন ‘ভারতীয় ইতিহাস সংকলন সমিতি’-র সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হেমন্তধিং মজুমদার, ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ-৫১২৪’ উদযাপন সমিতির কার্যনির্বাহী সভাপতি ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী এবং সাংস্কৃতিক সচিব পুনম শর্মা।

প্রথমে এ ধরনের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংগঠনের সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হেমন্তধিং মজুমদার বলেন, অসম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বহু দেশপ্রেমিক বীর সেনানি, স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম আজও অজ্ঞাত। তাঁদের ইতিহাস এক শ্রেণির মানুষ প্রচারের আলোয় আনা হচ্ছিল না। অসমের জাতীয় বীর হিসেবে খ্যাত লাচিত বরফুকনের প্রকৃত দেশপ্রেমের আদর্শ ভারত-তো বটেই, গোটা বিশ্বে প্রচার করে নবপ্রজন্মের কাছে পৌঁছনোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের পরম্পরাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নিয়ে যেতে বছরব্যাপী কার্যক্রমের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, জানান হেমন্তধিং মজুমদার।

তিনি বলেন, সত্য ইতিহাস চেপে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত তথ্য দিয়ে আমাদের দেশের বীরপুরুষ, মহাপুরুষদের আদর্শ প্রচারের আলোয় আনা হয়নি। এক সময় একটি অশুভশক্তি ছত্রপতি শিবাজি, রাণাপ্রতাপ সিং, ভগত সিংদের মতো বীর সেনানিদের ডাকাত এবং আতঙ্কবাদী বলে আখ্যা দিতেও ওই অশুভচক্রটি কার্পণ্য করেনি। এই চক্রটির অপপ্রচার থেকে বাদ যাননি লাচিত বরফুকনও। আজও এক শ্রেণির মানুষ লাচিতের অবদান ও দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলার অপচেষ্টা করেন। তাই অসমের পরাক্ৰমী সাহসী বীর সেনানি, একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক, সমগ্ৰ জাতির আদৰ্শ ও অনুপ্ৰেরণার উৎস লাচিত বরফুকনের ৪০০ বছর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ-৫১২৪’ শীর্ষক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ‘ভারতীয় ইতিহাস সংকলন সমিতি, অসম’। এতে জাতি, দেশ, এমন-কি বিশ্ব তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হবে বলে মনে করেন হেমন্তধিং মজুমদার।

তিনি জানান, গত ১৭ জুলাই আলোক ভবনে অনুষ্ঠিত একটি সভায় বীর লাচিত বরফুকনের ৪০০-তম জন্মজয়ন্তী পালন সংক্রান্ত পরিকল্পনার পাশাপাশি স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ‘আজাদি-কা অমৃত মহোৎসব’ উদযাপন করারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ওই দিন গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী বছরব্যাপী কার্যক্রমের বিস্তৃত তথ্য দিয়ে হেমন্তধিং মজুমদার, ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী এবং পুনম শর্মা জানান, প্রথম পর্বের কার্যক্রম আগামী আগস্ট মাসের ২৭ এবং ২৮ তারিখ প্রতিযোগিতাবলির মাধ্যমে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর। ছাত্রছাত্রী তথা নবপ্রজন্ম যাতে দেশপ্রমে উদ্বুদ্ধ হতে প্রেরণা লাভ করে পারে সেজন্য অসম সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভিত্তিক নানাধরনের প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত করা হবে। এছাড়া অসম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দেশপ্রেমিক বীর সেনানি, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনী সংবলিত একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করা হবে বলে জানান তাঁরা।

তাঁরা জানান, বছরব্যাপী এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পুরস্কার সহযোগে প্রতিযোগিতা অনু্ঠিত হবে। প্রথম পর্বের কার্যক্রম আগামী ২৭ ও ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে রচনা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। ১৫ আগস্ট বা তার আগে রচনাগুলো জমা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন আয়োজকরা। প্রতিযোগিতাগুলি তিনটি স্তরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১০০০ শব্দের মধ্যে রচনার বিষয় ‘বীর লাচিত বরফুকন এবং মাতৃভূমির প্রতি তাঁর প্রেম’। ২০০০ শব্দের মধ্যে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বিষয় ‘মোগল বিজয়ে বীর লাচিত বরফুকন এবং তাঁর যুদ্ধকৌশল’। ৩০০০ শব্দের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের বিষয় ‘বীর লাচিত বরফুকন সনাতন সভ্যতার রক্ষক’। এই প্রতিযোগিতার জন্য পুরস্কারের অর্থমূল্য যথাক্রমে প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার, দ্বিতীয় পুরস্কার সাত হাজার, তৃতীয় পুরস্কার পাঁচ হাজার টাকা।

এছাড়া ১০ জন অংশগ্রহণকারীকে নগদ ১,০০০ টাকা করে সান্ত্বনা পুরস্কারও প্রদান করা হবে। রচনা পাঠানোর আগে অংশগ্রহণকারীদের যে-সব নিয়মাবলি পালন করতে হবে সেগুলি যথাক্রমে রচনাটি এ-ফোর (A4) আকারের সাদা কাগজের এক পৃষ্ঠায় পরিষ্কার হস্তাক্ষরে বা টাইপ (ডিটিপি) করে পাঠাতে হবে। রচনায় উল্লেখিত তথ্যের উৎস (ইন্টারনেট, বইপত্র, পত্রপত্রিকা ইত্যাদি) পৃষ্ঠার একেবারে নীচে অথবা রচনার শেষে উল্লেখ করা প্রয়োজন। কপি-পেস্ট করার অনুমতি নেই। রচনাসমূহ পিডিএফ করেও পাঠানো যেতে পারে। তাছাড়া রচনার ভাষা হবে ভারতের সংবিধান স্বীকৃত যে-কোনও ভাষা যেমন অসমিয়া, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি এবং আদিবাসী।

পাঠাতে হবে [email protected], এই ই-মেইলে। এছাড়া ডাক বা কুরিয়ার যোগে পাঠানোর ঠিকানা আলোক ভবন, দ্বিতীয় তল, নারায়ণ নগর, ভরলুমুখ, জেলা-কামরূপ মেট্রো, গুয়াহাটি, ৭৮১০০৯, অসম।

দ্বিতীয়ত, ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা (বসে আঁকা)-য় দুটি শাখা রয়েছে। এগুলি প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি এবং পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি। এই প্রতিযোগিতার পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রথম পুরস্কার পাঁচ হাজার (৫,০০০), দ্বিতীয় পুরস্কার চার হাজার (৪,০০০) টাকা এবং তৃতীয় পুরস্কার তিন হাজার (৩,০০০) টাকা। এ-ছাড়া ২০ জন অংশগ্রহণকারীকে নগদ ২,৫০০ টাকা করে সান্ত্বনা পুরস্কারও প্রদান করা হবে।

তৃতীয়ত, দেশপ্রেমমূলক সংগীত প্রতিযোগিতা (সমবেত সংগীত, মঞ্চে)। এই প্রতিযোগিতার গান অসমিয়া, সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি ও জনজাতীয় ভাষায় হবে। কোন ভাষার কোন গান নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং নিয়মাবলি কী কী, সে সব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মানব ডেকা (ফোন নম্বর ৯৪৩৫০৪১৫২৪) এবং পুনম শৰ্মা (ফোন নম্বর ৬০০১৮৩৯৩৭৪)-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে আনুরোধ জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

প্রতিযোগিতার এই স্তরে অসমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পাশাপাশি সমস্ত সংগীত বিদ্যালয়কে অংশগ্রহণের জন্যও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রথম পুরস্কার ৩০,০০০ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ২৫,০০০ টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ২০,০০০ টাকা।

চতুর্থত দেশপ্রেমমূলক নৃত্য প্রতিযোগিতা (দলীয় অনুষ্ঠান, মঞ্চে)। নৃত্যের গানসমূহ অসমিয়া, সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি ও জনজাতীয় ভাষায় হবে। প্রতিযোগিতার এই পর্বে অসমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সমস্ত নৃত্য বিদ্যালয়কে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পুরস্কারের অর্থমূল্য যথাক্রমে প্রথম পুরস্কার ৩০ হাজার, দ্বিতীয় পুরস্কার ২৫ হাজার এবং তৃতীয় পুরস্কার ২০ হাজার টাকা। বক্তারা জানান, প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশগ্রহণের জন্য স্থান ও সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা অতি শীঘ্রই সংবাদ মাধ্যম সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *