কলকাতা, ১১ জুলাই (হি. স.) : ছাত্রনেতার অস্বাভাবিক মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল রাজ্যের পুলিশ- প্রশাসনকে। আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যু কী ভাবে হল? সেই রাতে পুলিশ কেন গিয়েছিল ওই ছাত্রের বাড়িতে? এই সব প্রশ্ন তুলে রাস্তায় নামেন বহু মানুষ। অবশেষে জমা পড়ল সেই মামলার চার্জশিট। উলুবেড়িয়ার ওই ছাত্রনেতার মৃত্যুর পর তদন্ত করছিল কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট। সোমবার ঘটনার ১৪৪ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা পড়ল উলুবেড়িয়া আদালতে।
আনিস খান মৃত্যুর তদন্তে নয়া মোড়। আদালতের নির্দেশে হাওড়ার ছাত্রনেতার মৃত্যুর তদন্ত করছিল সিট। সেই সিট-এর চার্জশিটে চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ, ‘খুন হননি আনিস খান’। পরিবারের দাবি খারিজ সিটের করা হয়েছে চার্জশিটে ।
চলতি বছরের আঠেরোই ফেব্রুয়ারির রাতে, নিজের বাড়িতেই ছাত্রনেতা আনিস খানের রহস্যমৃত্যু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলে, সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবার। শুনানি চলাকালীন একাধিকবার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আদালত। শেষ পর্যন্ত, রাজ্য পুলিশের সিট-এর তদন্তে আস্থা রাখে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই আনিস-কাণ্ডে উলুবেড়িয়া আদালতে চার্জশিট জমা দিল তদন্তকারীরা। চার্জশিটে নাম রয়েছে আমতা থানার তৎকালীন ওসি দেবব্রত চক্রবর্তীর নাম । চার্জশিটে নাম রয়েছে এক এএসআই, এক হোমগার্ড ও দুই সিভিক ভলান্টিয়ারের। পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ পরিবারের
আনিসের মৃত্যুর পর পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলে নিহত ছাত্রনেতার পরিবার। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ঘটনার দিন স্থানীয় একটি জলসায় যান আনিস। রাতে সেখান থেকে ফেরার পর, তাঁর খোঁজে বাড়িতে আসেন চার জন। এঁদের মধ্যে একজন পুলিশের পোশাকে ছিলেন। হাতে ছিল বন্দুক। বাকি তিন জন সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাক পরে ছিলেন। পরিবারের আরও অভিযোগ, বাবাকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে আটকে রেখে আনিসকে তিন তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর, বাড়ির নিচ থেকে আনিসকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর!
চার্জশিটে সিটের দাবি, ‘আনিসের মৃত্যু হয়েছে উপর থেকে পড়েই মৃত্যু। পুলিশের গাফিলতির জেরে মৃত্যু আনিস খানের’। দাবি, ‘কর্ণাটকে হিজাব-বিতর্ক নিয়ে আনিসের পোস্টের পর পুলিশ হানা দেয় আনিসের বাড়িতে ’। ‘পুলিশের হানার পর উপর থেকে পড়ে আনিসের মৃত্যু’ উল্লেখ উলুবেড়িয়া আদালতে জমা দেওয়া সিটের রিপোর্টে ।
আনিসের মৃত্যুর পরই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এক সিভিক ও এক হোমগার্ডকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁরা আপাতত জামিনে মুক্ত। তবে চার্জশিটে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ অর্থাৎ খুনের ধারা নেই। আছে ৩০৪এ ধারা অর্থাৎ গাফিলতির জেরে মৃত্যু। এ ছাড়া চার্জশিটে ৩৪১ ( অবৈধভাবে পথ আটকানো), ৩৪২ (অবৈধভাবে আটকে রাখা), ৪৫২ (জোরপূর্বক বাড়িতে প্রবেশ করে আটকে রাখা) ও ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারার উল্লেখ থাকছে।