নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ জুলাই৷৷ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী রিয়াং জাতি গোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সরকার ও প্রশাসনের তরফ থেকে এখনো পর্যন্ত বাস্তবসম্মত কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি৷ তাদের জীবনযাত্রা ও ভাগ্য যে তিমিরে ছিল এখনো সেই তিমিরেই রয়েছে৷
রাজ্যের ১৯টি জনজাতি গোষ্টির মধ্যে রিয়াং জাতিগোষ্টির লোকজনেরা বর্তমানেও অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে৷ তারা শিক্ষার আলো থেকে অনেকটাই পিছিয়ে৷ তাদের পূর্বপুরুষ থেকে সংস্কার, সংসৃকতি অর্থাৎ জীবনশৈলী এখনো পূর্বের মতই৷ তাদের কাছে বিজ্ঞান যুগের আধুনিকতা বর্তমানেও অধরা৷ তারা তাদের ঐতিহ্যের পোশাক ও পয়সার গহনাতে মজে আছে৷ শহরবাসীদের মত স্বর্ণালঙ্কারের গহনার পেছনে দৌড়ঝাঁপ করতে তারা নারাজ৷ তাদের নেই কোন রকমের বিলাসিতার মনোভাব৷ রিয়াং জনজাতির লোকজনেরা যদিও তাদের ঐতিহ্যের গহনা-কে তাদের ভাষায় ’রাংবাক’ বলে থাকে৷ ওই সব গহনা গুলিকে ’রাংবাক ’, ভাঁড়, চন্দ্র, সহ রুপোর তৈরি গহনা তারা পরিধান করতে অভ্যস্ত৷ এটা মূলত রিয়াং সমাজ ব্যবস্থার পুরোনো রীতি বর্তমান বিজ্ঞান যুগেও বহাল তবিয়তে৷ অধিকাংশ রিয়াং জনজাতির লোকজনেরা প্রত্যন্ত এলাকাতে বসবাস করে জুম-চাষ বা স্থানান্তর চাষ করার জন্য৷ তাদের জীবন-জীবিকার প্রধান মাধ্যমটি-ই হলো জুম চাষ৷ উল্লেখ্য, তেলিয়ামুড়া মহাকুমার মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের অধীন আঠারমুড়া পাহাড়ের কোলে অবস্থিত নোঁনাছড়া, কাঁকড়াছড়া, হাজরাপাড়া, ছনপাড়া, বাহাদুর-সর্দার-পাড়া, তীর্থ-মনি-রিয়াং পাড়া৷ এইসব এলাকাগুলিতে রিয়াং জন-জাতি অংশের মানুষজনদের বসবাস৷ পূর্বে এইসব এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থাও তেমন খুব একটা ভালো ছিল না৷ বর্তমানে নিয়মিত রেশন সামগ্রী সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাজারমুখী হতেও কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় না তাঁদের৷ তাদের জীবন শৈলের প্রণালীগুলি পরিত্যাগ করতে নারাজ৷ রিয়াং সমাজ ব্যবস্থার রীতি অনুসারে রুপোর তৈরির টাকার গহনা পড়তেই হবে৷ তারা বিশুদ্ধ পানীয় জলের অপেক্ষায় থাকেনা, শহরের মত রকমারীর বস্ত্রও পছন্দ করে না৷ পরিধানের বস্ত্র তারা নিজেরাই তৈরি করে৷ পাথর চুষা জলই তাঁদের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল হিসেবে বিবেচিত৷ শিক্ষার আলোর পেছনে দৌড়ঝাপ না করে জুম চাষ কিভাবে প্রসারিত করা যায় এর পেছনে দৌড়ঝাঁপ করতে প্রত্যক্ষ করা যায়৷ সকাল থেকে সন্ধ্যা জুম চাষ নিয়ে টিলাভূমিতে তারা ব্যস্ত থাকে৷ রিয়াং জাতি গোষ্ঠীর আর্থ ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার ও প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করেন৷ কেননা তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন না করে শুধুমাত্র শহর কিংবা সমতল এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করলেই সবকা সাথ সবকা বিকাশ কোনদিনও সম্ভব হবে না৷
2022-07-10

