নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জুলাই৷৷ মনিপুরে ভূমিধসে শহীদ রাজ্যের দুই জওয়ানের মৃতদেহ রবিবার বিমানে আগরতলায় এসে পৌঁছেছে৷ শহীদ বীর জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দরে আত্মীয় পরিজনসহ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন৷ কফিন বন্দি বীর জওয়ানদের মৃতদেহ বিমান থেকে নামিয়ে আনতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী কন্যা আত্মীয় পরিজন সহ উপস্থিত সকলেই৷ সেনাবাহিনীর শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়৷ এডি নগর পুলিশ গ্রাউন্ডে দুই জওয়ানকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়৷
বিমানবন্দর থেকে শহীদ দুই বীর জওয়ানের নিথর দেহ নিয়ে আসা হয় আগরতলায় আসাম রাইফেলস ময়দানে৷ সেখানে দেশপ্রেমিক অগণিত মানুষজন বীর জওয়ানদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান৷ শহীদদের শেষ দেখার অপেক্ষায় ছিলেন বিশালগড়ের বাইদ্যার দিঘির কসবা এবং কল্যানপুরবাসী৷ অবশেষে রবিবার বিমানে কফিন বন্দি দুই জওয়ানের মৃতদেহ এসে পৌঁছায় রাজ্যে৷ বিমানবন্দরে মৃতদেহ এসে পৌঁছতেই আকাশ বাতাস যেন ভারী হয়ে ওঠে৷ সেনাবাহিনীর তরফে ২ জওয়ানকে গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানানো হয়৷
শহীদ দুই জওয়ান হলেন বিশালগড়ের বাইদ্যার দিঘির কসবা এলাকার সঞ্জয় দেবনাথ এবং কল্যাণপুরের কোচপাড়ার প্রশান্ত দেব৷ মণিপুরে ভূমিধসে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হয়েছেন ভারতীয় সেনা জওয়ানরা৷ মৃত্যুর মিছিলে ত্রিপুরার দুই বীর সন্তান প্রশান্ত কুমার দেব ও সঞ্জয় দেবনাথ রয়েছেন৷ গত বুধবার গভীর রাতে মণিপুরের টোপুল রেল স্টেশনের কাছে আকস্মিক ভূমিধবস নেমেছিল৷ সেখানেই ১০৭ টেরিটোরিয়াল আর্মির জওয়ানরা নির্মাণ কাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন৷
ভূমিধসে ত্রিপুরার বীর সন্তান খোয়াই জেলার কল্যাণপুর ব্লকের অধিন পূর্ব কুঞ্জবন গ্রাম পঞ্চায়েতের কুচপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন টেরিটোরিয়াল আর্মির জওয়ান প্রশান্ত কুমার দেব৷ প্রয়াত কামাখ্যা দেব ও প্রয়াতা সুনিতি দেব’র একমাত্র পুত্র প্রশান্ত৷ ২০০৬ সালে দেশ রক্ষার দায়িত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই পারিবারিক সুবিধার্থে আগরতলা এডি নগরস্থিত পুলিশ কোয়াটারেই স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন৷ কল্যাণপুর এলাকার সেনা জওয়ানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী৷ দেশ সেবায় নিয়োজিত এলাকার জওয়ানের আত্মত্যাগে শোকে পাথর হয়েও গর্বিত এলাকাবাসী৷ ২৯ জুন বাড়িতে আসার নির্ধারিত কথা ছিল জওয়ানের৷ সেনাবাহিনী থেকে প্রয়োজনীয় ছুটির অনুমোদনও পেয়েছিলেন৷ কিন্তু বিধির বিধান৷ জওয়ান পৌঁছেছে ঠিকই, কিন্তু শুধুই প্রাণহীন নিথর দেহ নিয়ে৷
জিরিবাম থেকে ইম্ফল পর্যন্ত একটি নির্মীয়মাণ রেললাইনের নিরাপত্তার জন্য টুপুল রেলওয়ে স্টেশনের কাছে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল৷ কল্যাণপুর পূর্ব কুঞ্জবন গ্রাম পঞ্চায়েতের কুচপাড়ার বাসিন্দা প্রশান্ত কুমার দেব ১৯৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন৷ খাস কল্যাণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র জীবনের শুরু হয়৷ ২০০৬ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন৷
পারিবারিকভাবে রাজ্য পুলিশের কর্মরতা মহিলা কনস্টেবল স্ত্রী রিনা দাস দেব ও নাবালিকা কন্যা পৌশালীকে নিয়েই সংসার৷ সেনা জওয়ানের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই কল্যাণপুর কুচপাড়াস্থিত পূর্বতন পৈতৃক বাড়িতে এলাকাবাসীরা ভিড় জমাতে থাকে৷ শহীদের বাল্যবন্ধু, গুণমুগ্দরা শেষ দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন৷ রবিবার নিথর দেহ রাজ্যে পৌঁছতেই জওয়ানের দেহ সরাসরি এডি নগর স্থিত পুলিশ কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সবাইকে কাঁদিয়ে শেষ পর্যন্ত পঞ্চভূতে বিলীন হয় রাজ্যের বীর সৈনিক শহীদ প্রশান্ত কুমার দেব ও সঞ্জয় দেবনাথ৷
এক শোকবার্তায় কল্যাণপুর প্রমোদনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী বলেন, ওই দুর্ঘটনায় শহীদ বীর সেনা জওয়ান প্রশান্ত কুমার দেব’র ও সঞ্জয় দেবনাথ এর মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত৷ তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি৷