আগরতলা, ২৮ জুন (হি. স.) : গভীর সংকটে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা। আইনি গ্যারাকলে আজ তাঁর শপথ নেওয়া হল না। কারণ, এখনো তিনি রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। ফলে, আজ সদ্য নির্বাচিত তিন জন বিধায়ক পদে শপথ নিলেও, কয়েকদিন বাদে মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন। আজ বিজেপির নির্বাচিত সদস্য হিসেবে বিধায়ক পদে শপথ নিয়েছেন স্বপ্না দাস এবং মলীনা দেবনাথ। কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে বিধায়ক পদে শপথ গ্রহণ করেছেন সুদীপ রায় বর্মণ।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা বলেন, কিছু সমস্যার কারণে আজ তাঁর শপথ নেওয়া হচ্ছে না। তবে, শীঘ্রই তিনি বিধায়ক হিসেবে শপথ নেবেন। সাথে তিনি যোগ করেন, উন্নয়নের প্রশ্নে উপনির্বাচনে জনাদেশ বিজেপির অনুকূলে গেছে। আগামী দিনেও উন্নয়নের ধারা তিনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
প্রথম বিধায়ক হয়ে শপথ নেওয়ার পর অনুভূতি তুলে ধরেন বিজেপির নির্বাচিত সদস্য স্বপ্না দাস ও মলীনা দেবনাথ। তাঁদের বক্তব্য, জনগণের আশীর্বাদে পবিত্র বিধানসভায় স্থান পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে।
এদিন সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আবারও আমাকে তাঁদের সেবা করা সুযোগ দিয়েছেন, আমায় ভরসা করেছেন। তিনি বলেন, অতীতে বহুবার মানুষের স্বার্থে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পিছপা হইনি। শাসক দলে থেকে সরকার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি। সেই ধারা আগামীদিনেও জারি থাকবে।
এদিকে, বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী বলেন, উপনির্বাচনে চার নবনির্বাচিতদের মধ্যে তিনজন আজ শপথ নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা বিধায়ক পদে এখনই শপথ নিতে পারছেন না। কারণ, তিনি এখনো রাজ্যসভার সাংসদ রয়েছেন। ফলে, সাংসদ পদে ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত তিনি বিধায়ক হিসেবে শপথ নিতে পারবেন না।
সাথে অধ্যক্ষ যোগ করেন, নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে বিধায়ক পদে শপথ নিতে হবে। এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহার ওই সময়ের আগেই সাংসদ পদে পদত্যাগ করে বিধায়ক হিসেবে শপথ নিতে হবে। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই ডা: মানিক সাহা সাংসদ পদে পদত্যাগ করবেন বলেই মনে হচ্ছে। তবে, সম্পূর্ণই তাঁর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
আইনি গ্যারাকলে উদ্ভূত সমস্যার সম্মুখীন মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা এবং বিজেপি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরেও ওই সমস্যা গাঢ় হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এক জন সাংসদের ভোটের মূল্য ৭০০ এবং বিধায়কের ২৬। ফলে, সাংসদ হিসেবে ডা: মানিক সাহা ভোট দিলে এনডিএ সমর্থিত প্রার্থী ৭০০ ভোট পাবেন। কিন্তু, তিনি বিধায়ক হিসেবে ভোট দিলে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী পাবেন ২৬ ভোট। এক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে, আপাত দৃষ্টিতে তাই দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সাংসদ হিসেবে ডা: মানিক সাহা ভোট দিলে তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর গদি থাকবে না। কারণ, তিনি বিধায়ক হবেন না।
এই পরিস্থিতিতে, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হবে তাঁকে। সাংসদ পদে তিনি পদত্যাগ দিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাজ্যসভা থেকে কারোর ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ থাকছে না। সাথে প্রশ্ন উঠেছে, এমনই সমস্যা দেখা দেবে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব আঁচ করেননি কেন। ফলে, দুয়েক দিনের মধ্যেই তিনি দিল্লি যাচ্ছেন, সূত্রের খবরে এমনটাই জানা গেছে।সম্প্রতি বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রী পদে পদত্যাগের পর ডা: মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে সাংসদ পদে পদত্যাগের পরামর্শ দেবেন। কারণ, এই মুহুর্তে আবারও মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন চাইবেন না দলের হাইকমান্ড।