শিলচর (অসম), ২৬ জুন (হি.স.) : বন্যাক্রান্তদের পাশে রয়েছে সরকার। ত্রাণ সামগ্রীর কোনও অভাব হবে না। সরকার বন্যাক্রান্তদের কষ্ট লাঘব করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। খাদ্রসামগ্রী ও পানীয় জল বণ্টনের কাজ চলছে। অতি শিগগির গুয়াহাটি থেকে পাঠানো হবে পর্যাপ্ত পরিমাণের শাক-সবজি। এছাড়া হেলিকপ্টার দিয়ে বানভাসিদের জন্য খাদ্য সামগ্রী ও পানীয় জলের এয়ার ড্রপিং পর্ব অব্যাহত রয়েছে। টানা প্রায় এক ঘণ্টা জলের মধ্যে পায়ে হেঁটে ও রবারবোটে চড়ে শিলচর শহরের অধিকাংশ প্লাবিত এলাকা পর্যবেক্ষণ করে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কথাগুলি বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিলচরের জনসাধারণ বহু কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছেন, তা তিনি মনেপ্রাণে অনুভব করছেন। তবে তাঁর সরকার জনতার কাছে সবসময় আছে এবং বন্যার ফলে সৃষ্ট জনতার দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে অহরহ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্ৰশাসন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সপ্তাহ-খানেকের মধ্যে আবার শিলচর আসবেন বলে জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামীকাল রাজ্যের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বরুয়া শিলচর আসবেন। দু-তিনদিন এখানে অবস্থান করে তিনি বন্যা পরিস্থিতি এবং ত্রাণ বণ্টন প্রক্রিয়ার তদারকি করবেন।
বন্যার্তরা নিয়মিত ত্রাণ সামগ্রী ও পানীয় জল পাচ্ছেন না বলে সাংবাদিকদের অভিযোগের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি গোটা শিলচর ঘুরেছেন, বহুজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। কেউ-তো এ ধরনের কোনও অভিযোগ করেননি, বরং সবাই সরকার তথা প্রশাসনের কাজে সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া গলিতে জলবন্দি নাগরিকদের উদ্ধার ও ত্রাণসামগ্রী বণ্টনে এনডিআরএফ বা এসডিআরএফ বা প্রশাসনের কেউ যাননি। এই অভিযোগের উত্তর দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বহু গলির পরিসর ছোট। তাই ওই সব গলিতে বড় বড় রবারবোট ঢোকানো যাচ্ছে না। তা ছাড়া গলির দু-ধারে কোথায় নালা রয়েছে তা জলের ওপর থেকে দেখা বা মাপা যায় না। তাই গলির মুখে ত্রাণসামগ্রী বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়। এ সব কারণে যে কিছু কিছু এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছে না, তা স্বীকার করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গলির কোনও ব্যক্তির হাতে সকলের জন্য ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি বেসরকারি সংগঠন, নাগরিক সমাজ এবং দুর্গাপূজা কমিটির পদাধিকারী ও সদস্যদের এগিয়ে এসে প্রশাসনকে সাহায্য করার আহ্বান জানান। তাছাড়া প্রশাসনিক আধিকারিক বা কর্মচারীদের দোষারোপ না করার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বহু আধিকারিক-কর্মচারী তাঁদের বাড়িতে জলবন্দি ছিলেন। বের হতে পারছিলেন না তাঁরা। এখন পরিস্থিতি সামান্য উন্নত হয়েছে, আর কোনও অভিযোগ পাওয়া যাবে না, দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য সংক্রান্ত নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, গোটা রাজ্যের অসংখ্য এলাকা ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। শিলচরে যত পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী এবং এনডিআরএফ পাঠানো হয়েছে, তা অসমের কোথাও কখনও পাঠানো হয়নি। এক শিলচরে এ মুহূর্তে ৬৮টি নৌকা নিয়ে এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, ভারতীয় সেনা, বায়ুসেনা অবিরাম ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য চালিয়ে যাচ্ছে।
শাক-সবজির মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কিত এক জিজ্ঞাসার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, খুব শীঘ্রই গুয়াহাটি থেকে শিলচরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক-সবজি পাঠানোর ব্যবস্থা করবে সরকার। এছাড়া পানীয় জল, বিদ্যুৎ পরিষেবা সহ যাবতীয় বিষয়ে নাগরিকদের স্বস্তি দিতে আরও কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সে সম্পর্কে আজই গুয়াহাটি গিয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন, আশ্বস্ত করেছেন ড. শর্মা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজকের বৈঠকে তিনি জেলাশাসককে বলেছেন, বন্যা-পরবর্তী সময় খুব জটিল। কেননা এই সময় রোগব্যাধির প্রকোপ খুব বেড়ে যায়। তাই প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মেডিক্যাল ক্যাম্প বসানোর জন্য তিনি জেলাশাসককে বলেছেন, জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।