গুয়াহাটি, ২০ জুন (হি.স.) : অসমের বন্যা পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফার বন্যায় প্লাবিত জেলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৩। এর মধ্যে ছয়টি জেলা ধসের কবলে পড়েছে। প্রবল বর্ষণের ফলে ব্রহ্মপুত্র, কপিলি, বেঁকি, বরাক, কুশিয়ারা, লঙ্গাই, কুশিয়ারা সহ বহু নদী-উপনদীগুলি ফুঁসেই চলেছে। ৩৩টি জেলার ১২৭টি রাজস্ব সার্কলের ৫,১৩৭টি গ্রাম ভয়াবহ বন্যার কবলে।
এবারের বন্যা চলতি ইংরেজি বছরের পঞ্চম দফার বন্যা। তৃতীয় তথা গত ৬ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত বন্যা ও ধসের কবলে পড়ে শিশু, মহিলা সহ মোট ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কাছাড়, ডিমা-হাসাও, গোয়ালপাড়া, হাইলাকান্দি, কামরূপ মেট্ৰো এবং করিমগঞ্জ জেলায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। রাজ্য দুৰ্যোগ ব্যবস্থাপনা কৰ্তৃপক্ষের বুলেটিনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বুলেটিন সূত্রে জানা গেছে, ৪২,২৮,১৫৭ মানুষ বন্যার কবলে পড়ে হাহাকার করছেন। এর মধ্যে ১,৮৬,৪২৫ জন বানভাসি মানুষ রাজ্যের ৭৪৪টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর, কৃষিখেত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। লক্ষাধিক হেক্টর কৃষিখেতের বিস্তর ক্ষতি হয়েছে।
অসংখ্য পূৰ্ত ও জাতীয় সড়ক প্লাবিত হয়ে গেছে। কোথাও রেলওয়ে ট্র্যাকের ওপর দিয়ে জল বইছে, তো-কোথাও রেলওয়ে ট্র্যাকের নীচের মাটি ধুয়ে সাফ হয়ে গেছে। ফলে কয়েকটি জায়গায় রেলওয়ে ট্র্যাক শূন্যে ঝুলছে। বেশ কয়েকটি ট্রেন বাতিল করার পাশাপাশি দূরপাল্লার কয়েকটি যাত্রীবাহী ট্রেনের গতিপথ ও সময়সূচি পরিবর্তন করেছে উত্তরপূ্র্ব সীমান্ত রেল।
প্ৰায় সব বন্যাকবলিত জেলায় এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, ফায়ার ও ইএস কর্মী, পুলিশ বাহিনী, এএসডিএমএ-র আপদা মিত্র (এএপিডিএ)-এর স্বেচ্ছাসেবকরা বানভাসিদের ত্রাণ ও উদ্ধারে জেলাপ্রশাসনকে সাহায্য করছেন। ইতিমধ্যে ২৯,৭৪৩ জনকে বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেছে সংশ্লিষ্ট বাহিনী এবং উদ্ধারকারী সংস্থাগুলি।
সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (সিডব্লিউসি)-এর বুলেটিন অনুযায়ী নগাঁও জেলার ধরমতুল, পুঁঠিমারি (জাতীয় সড়ক প্লাবিত), কামপুরের বুকচিরে প্রবাহিত কপিলি নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত। নিমাতিঘাট, যোরহাট, তেজপুর, শোণিতপুর, গুয়াহাটি, কামরূপ গ্রামীণ, গোয়ালপাড়া, ধুবড়ি, সুবনশিরি (লখিমপুরের বদাতিঘাট)-এর উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের জলও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এছাড়া পাগলাদিয়া (নলবাড়ির এনটি রোড), বরপেটা জেলার মানস জাতীয় উদ্যান ও জাতীয় সড়ক, বরপেটার বেকি নদীর জলও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কাছাড় জেলার বরাক, করিমগঞ্জের কুশিয়ারা, লঙ্গাই, সিংলা, হাইলাকান্দির মাটিজুরি, কাটাখাল প্ৰভৃতি নদী এবং উপনদীগুলি।
বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩টি জেলা যেমন বজালি, বাকসা, বরপেটা, বিশ্বনাথ, বঙাইগাঁও, কাছাড়, চিরাং, দরং, ধেমাজি, ধুবড়ি, ডিব্রুগড়, ডিমা হাসাও, গোয়ালপাড়া, গোলাঘাট, হাইলাকান্দি, হোজাই, যোরহাট, কামরূপ মেট্রো, কারবি আংলং পশ্চিম, করিমগঞ্জ, কোকরাঝাড়, লখিমপুর, মাজুলি, মরিগাঁও, নগাঁও, নলবাড়ি, শিবসাগর, শোণিতপুর, দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর, তামুলপুর, তিনসুকিয়া এবং ওদালগুড়ি জেলা বন্যার কবলে পড়ছে।
বিভিন্ন শিবিরে আশ্রিত এবং যাঁরা শিবিরে আশ্রয় নেননি, তাঁদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বলেও সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে।