টানা দু’দিনের প্রবল বর্ষণে ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত, এখন পর্যন্ত ৩৯টি ত্রাণ শিবিরে ২০৫৭ পরিবার আশ্রিত, উদ্ধার ১৬১ জন

আগরতলা, ১৮ জুন (হি. স.) : টানা দু’দিনের প্রবল বর্ষণে ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাতে এখন পর্যন্ত ৩৯টি ত্রাণ শিবিরে ২০৫৭ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্লাবিত এলাকা থেকে আজ ১১৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল জলমগ্ন রাস্তায় বিকল বাস থেকে শিক্ষক ছাত্রী সহ ৪২ জনকে উদ্ধারকরা হয়েছিল। আজ সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। সাথে জানানো হয়েছে, হাওড়া নদীর জলস্তর নামতে শুরু করেছে। বিকেল সাড়ে চারটায় জলস্তর ১০.৭২ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে।


প্রসঙ্গত, টানা দু’ দিনের প্রবল বর্ষণে রাজধানী আগরতলা শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ রাজস্ব দপ্তরের প্রধান সচিব পুনিত আগরওয়াল, কৃষি ও অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, খাদ্য দপ্তরের সচিব শরদিন্দু চৌধুরি, অগ্নি নির্বাপক ও জরুরি পরিষেবা দপ্তরের অধিকর্তা অনিন্দ ভট্টাচার্য্য এবং স্টেট প্রজেক্ট অফিসার শরৎ দাস সাংবাদিকদের আলোকপাত করেছেন।


এদিন রাজস্ব দফতরের প্রধান সচিব শ্রী আগরওয়াল জানান, গতকাল থেকে অতি বর্ষনের ফলে হাওড়া নদীর জল সীমা বৃদ্ধি পেয়ে ১০.৮৭ উচ্চতায় পৌছে গিয়েছিল। রাত্রিতে বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা কম হলে জল সীমার উচ্চতাও কিছুটা হ্রাস পেতে থাকে। আজ বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত জলের উচ্চতা ১০.৭২ মিটার হয়েছে। এখন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।

তাঁর দাবি, গতকাল রাত্রে সদর মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে একটি দল হাওড়া নদী সংলগ্ন জল প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছে। আজ পরিস্থিতি অনুযায়ি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ত্রাণ শিবিরগুলিতে পানীয় জল থেকে শুরু করে খাওয়ার ব্যবস্থাও প্রশাসন থেকে করা হয়েছে। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা আজ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে পর্যালোচনা করেছেন এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজস্ব সচিব জানান, বৃষ্টির ফলে যেসব স্থানে জল আটকে ছিল সেখান থেকে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।


সাথে তিনি যোগ করেন, সারা ত্রিপুরা রাজ্য মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এরমধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ৩৭টি, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ১টি এবং খোয়াই জেলায় ১টি। ৩৯টি ত্রাণ শিবিরে মোট ২ হাজার ৫৭টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তিনি জানান, পশ্চিম জেলায় ১৯৫৮ পরিবার, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ৯২ পরিবার এবং খোয়াই জেলায় ৭ পরিবার শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ শিবিরগুলিতে পানীয় জল, প্যাকেট ফুড তথা খাওয়ার ব্যবস্থাপনাসহ স্যানিটারী ব্যবস্থাও করা হয়েছে। শিবিরের লোকেদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে চিকিৎসকরাও শিবিরগুলি পরিদর্শন করছেন।


তিনি জানান, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, আপদা মিত্র সহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজে লাগানো হয়েছে। শ্রী আগরওয়াল জানান, জরুরি পরিস্থিতিতে জনগণের সহায়তার জন্য টোল ফ্রি ১০৭৭, আগরতলা পুরনিগমের ৯৮৬৩২০১৬৬৫, ইমারজেন্সি রেসপন্স সিস্টেমের ১১২ নম্বর, সি এম হেল্পলাইন ১৯০৫ এবং স্টেস্ট ইমার্জেন্সি সেন্টারের ১০৭০ নম্বরটিতে যোগাযোগ করে জরুরি সহায়তা পাওয়া যাবে। এছাড়াও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কোনও সমস্যা দেখা দিলে ১৯১২ এবং ৯৮৬৩৫৯৬০৮৩ এই নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

তিনি জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২৯টি নৌকাকে উদ্ধার কাজে লাগানো হয়েছে। এরমধ্যে সদর মহকুমার ১৪, এনডিআরএফ ৪, পুরনিগমের ৪, টি এস আর এর ২টি, এবং আসাম রাইফেলসের ৫টি। তাছাড়া আজ সকালে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক, সদর মহকুমা শাসক ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিব, সচিব ও আধিকারিকগণ বটতলা ব্রীজ, প্রতাপগড়, বলদাখাল, শ্রীলংঙ্কাবস্তি, চন্দ্রপুর, হরিজন কলোনী, ময়লাখলা ইত্যাদি প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন।


এদিন খাদ্য দপ্তরের সচিব শরদিন্দু চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত যথেষ্ট রয়েছে। আতঙ্ক বা উদ্বেগের কিছু নেই। তিনি জানান, গতকাল রাত থেকে মেঘালয়ের খাসিয়া অঞ্চলে ভূমিধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সারাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে হালকা বৃষ্টিপাতের ফলে সারাইয়ের কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত আর না হলে শীঘ্রই আসাম-আগরতলা সড়ক যোগাযোগ চালু করা সম্ভব হবে। রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের একজন আধিকারিককে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। মেঘালয়ের পূর্ত বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।সাথে তিনি যোগ করেন, শিলচর থেকে পেট্রোল ও ডিজেল আসছে। বাংলাদেশ থেকে গ্যাস রাজ্যে আসছে। রাজ্যে আরও ১৫ দিনের গ্যাস মজুত রয়েছে। এ মাসের রেশনের পুরো চাল দিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাফার স্টক আগামী ১ মাস পর্যন্ত রয়েছে। ফলে, আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, কালোবাজারি প্রতিরোধে সমস্ত জেলাশাসক ও মহকুমা শাসকদের নজরদারি রাখার জন্য খাদ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।


কৃষি এবং অগ্নিনির্বাপক দপ্তরের সচিব জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উদ্ধার কাজ প্রশাসনের উদ্যোগে ২৪ ঘন্টা চালু রয়েছে। তিনি জানান, গতকাল ৪২ জন ছাত্র এবং শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়। আজ ১১৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের অধিকর্তা জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দিনরাত কাজ করে চলছেন। আপদা মিত্র, সিভিল সিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *