হাওড়া নদীর জলস্তর বেড়ে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল, ২৫টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রিত পাঁচ সহস্রাধিক, সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন মুখ্যমন্ত্রীর

আগরতলা, ১৮ জুন (হি. স.) : হাওড়া নদীর জলস্তর বেড়ে আগরতলা শহরের আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে, প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক মানুষকে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দিতে হয়েছে। মোট ২৫টি শরণার্থী শিবির এখন পর্যন্ত খোলা হয়েছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা সরেজমিনে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। সারা দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। তবে, আজ মুষলধারে বৃষ্টি না হওয়ায় শহর আগরতলা জলবন্দী হয়নি। হাওড়া নদীর পাড়ে বাঁধে দুইটি স্থানে সামান্য ফাটল দেখা গিয়েছে। আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার ওই স্থান পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আজ সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত আগরতলায় ১৬৫এমএম, এ ডি নগরে ১৮০এমএম, কৈলাসহরে ৮৮এমএম, বিশালগড় ১৭৭.৫এমএম, খোয়াই ৭০এমএম, অমরপুর ৯৪এমএম, পানিসাগর ৬৯এমএম, কমলপুর ৬৬এমএম এবং কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র ধলাই ৮৪এমএম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণের ফলে হাওড়া নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে। আগরতলায় নিম্নাঞ্চলে গতকাল রাত থেকে মানুষের বাড়িঘরে নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছিল। কিন্ত, ওই সময় কেউ বাড়িঘর ছেড়ে শরণার্থী শিবিরে যেতে চাইছিলেন না।

সাধারণত, হাওড়া নদীর জলস্তর ৯.১৩ মিটার অতিক্রম হলেই বিপদ ঘণ্টা পরা শুরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ১০ মিটার অতিক্রম হলে সংকটপূর্ণ, ১০.৫০ মিটার হলে বিপদসীমা এবং ১১ মিটার জলস্তর অতিক্রম করলে অতি বিপদসীমা হিসেবে গণ্য করা হয়। আজ সকাল এগারটা নাগাদ হাওড়া নদীর জলস্তর ছিল ১০.৮৭ মিটার। স্বাভাবিকভাবেই হাওড়া নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছিল। ফলে, আশপাশের এলাকা সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা বোট নিয়ে ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের উদ্ধার করে এনেছেন।

এদিন পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে অসম রাইফেলসের জওয়ানদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কারণ, হাওড়া নদীর জলস্তর যেভাবে বাড়ছিল তাতে, যেকোন সময় বড়সড় বিপত্তি ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি কাটাখাল, বলদাখাল এলাকায় গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন। সেখানে মানুষের অবস্থা জেনেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আজ মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। শিবিরে আশ্রিতদের সাথে কথা বলেছেন। ওইসময় তাঁর সাথে ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এবং পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার। এদিন তিনি বলেন, গতকাল ভারী বর্ষণে আগরতলা শহরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। কিন্ত, রাতের মধ্যেই সমস্ত জল নেমে গিয়েছে। কিন্ত, আজ হাওড়া নদীর জলে নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারোর কিছু করার থাকে না। কিন্ত, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় প্রশাসন যথা সম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তা পৌছে দেওয়ার জন্যই সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল থেকে তাঁদের সহায়তা করা হবে।

এদিন তিনি জানান, শরণার্থী শিবিরে আশ্রিতদের খাবার এবং চিকিত্সার ব্যবস্থায় ত্রুটি না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাতে, সকলের কাছেই সরকারী সহায়তা পৌছে সম্ভব হবে।এদিকে, হাওড়া নদীর পাড়ে দুইটি স্থানে নির্মিয়মান বাঁধে সামান্য ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে, ওই ফাটল নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন সদর মহকুমা শাসক অসীম সাহা। তিনি বলেন, হাওড়া নদীর জলস্তর বেড়েছে। তাতে, স্বাভাবিকভাবেই কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এরইমধ্যে দুইটি স্থানে বাঁধে সামান্য ফাটল নজরে এসেছে। কিন্ত, পুরবাসীর তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। খবর পেয়ে, পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার ঘটনাস্থলে গেছেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।