ফের ভূমিধস ও পাহাড়ি জলের বন্যায় পর্যুদস্ত ডিমা হাসাও জেলা, আবারও মাটি-কাদার নীচে নিউহাফলং রেলস্টেশন

জেলায় সব স্কুল-কলেজ ১৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা

বিনা কাজে ঘর থেকে বের হতে বারণ

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে বা পার্শ্ববর্তী ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ জেলা প্রশাসনের

হাফলং (অসম), ১৬ জুন (হি.স.) : ডিমা হাসাও জেলায় ভূমিধস এবং পাহাড়ি জলের বন্যায় আবারও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সোমবার রাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টির জেরে জেলায় বন্ধ হয়ে পড়েছে ২৭ নম্বর জাতীয় সড়কও। পাহাড় থেকে নেমে আসা মাটি, পাথর ও জলে নিউ হাফলং স্টেশনটি আবার বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।

আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে ভূমিধস ও জলপ্রলয়ে পাহাড়ি জেলার অবস্থা শোচনীয় করে তুলেছিল। ভূমিঙ্খলন ও বন্যার কবলে পড়ে বহু ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কয়েক হাজার লোক গৃহহীন হয়ে আশ্রয় শিবিরে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। ঠিক এক মাসের মধ্যে আবারও প্রকৃতির তাণ্ডবে দিশেহারা মানুষ। প্রকৃতির তাণ্ডব এতটাই ভয়ঙ্কর যে, পাহাড় থেকে নেমে আসা জলের স্রোত ও মাটি-পাথরে বন্ধ হয়ে পড়েছে গুয়াহাটি-হাফলং ২৭ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং হাফলং-শিলচর জাতীয় সড়ক।

বুধবার দুপুরে অল্পের জন্য এন লেইকুলের কাছে এস কার্ভে একটি ট্র্যাভেলার গাড়ি জলের স্রোতে আটকে পড়ে। এতে সৌভাগ্যবশত ট্র্যাভেলারের যাত্রীরা প্রাণে বাঁচেন। প্রাণের ভয়ে যাত্রীরা সবাই পাহাড়ে ওঠে নিজেদের প্রাণ রক্ষা করেন।

এদিকে গত চারদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে লামডিং-বদরপুর পাহাড় লাইনের নিউ হাফলং স্টেশন আবার বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। বুধ থেক আজ বৃহস্পতিবার প্রচণ্ড বৃষ্টির দরুন পাহাড় ভেঙে মাটি-পাথর নেমে আসে স্টেশনে। এমন-কি পাহাড় থেকে নেমে আসা জল সমগ্র স্টেশন চত্বরকে জলমগ্ন করে ফেলেছে। তিন-চারদিন আগেই নিউ হাফলং স্টেশনের এক ও দুই নম্বর রেলওয়ে ট্র্যাক সম্পূর্ণ ধসমুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ফের প্রবল বৃষ্টির ফলে আবার সেই একই দৃশ্য, যা আজ থেকে কিছুদিন আগে ছিল, ঠিক একই অবস্থা। মাটি-কাদায় একাকার পাহাড় লাইনের দৃষ্টিনন্দন এই রেলস্টেশনটি।

তাছাড়া সোমবার থেকে মুষলধারে বৃষ্টির জেরে লামডিং-বদরপুর ব্রডগেজ রেলপথের বিভিন্ন স্থানে পুনরায় ধস নেমেছে, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাতের মধ্যে। এই অবস্থায় লামডিং-বদরপুর হিল সেকশন সচল করে তুলতে যেভাবে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, নাগাড়ে বৃষ্টিপাতের ফলে এই কাজ অনেক পিছিয়ে গেছে। গ্রাউন্ড জিরোতে দিনরাত এক করে যে সব রেলকর্মী ও শ্রমিকরা কাজ করছেন তাঁদের কথায়, তিনদিনের বৃষ্টি আর প্রতিকূল আবহাওয়ার জেরে কাজ করা দুষ্কর হয়ে উঠেছে।

এদিকে রাজ্যের আবহওয়া দফতর থেকে সমগ্র রাজ্য জুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে আগামী ১৭ জুন পর্যন্ত অসমে ভারী বৃষ্টিপাত হবে বলে। এমতবস্থায় ১০ জুলাই পাহাড়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে কিনা সে সম্পর্কে রয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ প্রশমন বিভাগ ডিমা হাসাও জেলায় সব স্কুল কলেজ ১৫ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে। প্রতিকূল অবহওয়া ও নাগাড়ে বৃষ্টির দরুন বিনা কাজে বা জরুরি কোনও কাজ না থাকলে কেউ যাতে ঘর থেকে বের না হন, এই নির্দেশ জারি করার পাশাপাশি যাঁদের পাহাড়ের উপরে বা উঁচুতে ঘর রয়েছে এবং বিপদজনক এলাকায় রয়েছে প্রয়োজনে, এঁদের নিরাপদ স্থানে বা পার্শ্ববর্তী কোনও ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *