আগরতলা, ১৯ মে (হি. স.) : কালোবাজারি রুখতে ময়দানে নেমেছে প্রশাসন। আজ মহারাজগঞ্জ বাজারে অভিযানে নেমে সদর মহকুমা প্রশাসন পণ্য ক্রয়ের রশিদ দেখতে না পেয়ে তিনটি দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
প্রবল বৃষ্টির কারণে আসাম সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির উদ্বেগ হয়েছে। সড়ক ও ট্রেন পথে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর। ইতিমধ্যেই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সড়ক পথ সংস্কার করে জরুরী পরিষেবা সচল রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে যান চলাচল। ধীরে ধীরে রাজ্য আসছে পণ্য সামগ্রী বোঝাই গাড়ি।
এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি ঘটাতে তৎপর। তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক নজরদারির অঙ্গ হিসাবে বৃহস্পতিবার বটতলা বাজারে অভিযান চালাল সদর মহকুমা প্রশাসনের একটি দল। ডিসিএম প্রণয় দেবনাথের নেতৃত্বে হয় এদিনের অভিযান। আলু, পেয়াজ, ভোজ্য তেল সহ অন্যান্য সামগ্রীর মূল্য ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করতে এই অভিযান চালানো হয়েছে। কোনো ধরনের অংসলগ্নতা ধরা পড়লেই এদিন ব্যবস্থা গ্রহণ করে মহকুমা প্রশাসনের অভিযানকারী দলটি।
অনুরূপ ভাবে সদর মহকুমা শাসক অসীম সাহা ও অতিরিক্ত মহকুমা শাসক বিনয় ভূষণ দাসের নেতৃত্বে মহারাজগঞ্জ বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে। মহারাজগঞ্জ বাজারের আলু, পেয়াজ, চাল সহ অন্যান্য সামগ্রীর দোকান ঘুরে মূল্য যাচাই করেছে মহকুমা প্রশাসন। জনৈক ক্রেতা জানিয়েছেন, আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকদের দেখেই একলাফে দাম পাঁচ টাকা কমে গেছে। এখন আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সদর মহকুমা শাসক অসীম সাহা জানিয়েছেন, মহারাজগঞ্জ বাজারে আলুর পাইকারি মূল্য ২২ টাকা, পেয়াজ ২৩ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকার মধ্যে। অন্য সব্জির মধ্যে কাঁচালঙ্কা ৫০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে। গত তিন দিনের মধ্যে মূল্যের কোনো হের ফের ঘটেনি। তবে কিছু ব্যবসায়ীর কাছে পণ্য ক্রয়ের রশিদ ছিল না এদিন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এদিন মোট তিনটি দোকান সিল করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সদর মহকুমা শাসক স্পষ্ট জানিয়েছেন, জাতীয় সড়কের ছুতো ধরে কোন ব্যবসায়ী অসদুপায় অবলম্বন করলে দুর্যোগ মোকাবিলা আইনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ক্রেতাদের অযথা আতঙ্কিত না হতে আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, ত্রিপুরায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সামগ্রী মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব। তাই, অযথা আতঙ্কিত হবেন না, ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশ্যে আহবান জানান তিনি।
সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে আসামের হাফলং রেল ষ্টেশন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি আসাম-আগরতলা সড়কের শিলং-এর কাছাকাছি এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কয়েকদিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। রেল পরিষেবা চালু হতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। তারপরও রাজ্যে কোনো খাদ্য সঙ্কট নেই, দাবি করেন খাদ্য মন্ত্রী।
তিনি জানান, বর্তমানে ত্রিপুরায় ৩২ দিনের চাল মজুত রয়েছে। আটা মজুত রয়েছে ৩০ দিনের। মসুরি ডাল রয়েছে ৩২ দিনের। লবণ, চিনি মজুত রয়েছে প্রায় এক মাসের। সকল ধরনের খাদ্য সামগ্রী মজুত রয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রীর দাবি, পেট্রোল, ডিজেল নিয়ে মানুষ অযথা আতঙ্কিত হচ্ছেন। বুধবার থেকে রাজ্যে সড়ক পথে গাড়ি ঢোকা শুরু হয়ে গেছে। পেট্রোল, ডিজেলের সঙ্কট এড়াতে রেশনিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বিচক্র যানের ক্ষেত্রে ২০০ টাকার পেট্রোল ও তিন চাকার যানে ৩০০ টাকার পেট্রোল এবং চার চাকার যানবাহনে ১ হাজার টাকার পেট্রোল দেওয়া হচ্ছে। বহিঃরাজ্য থেকে রেলের মাধ্যমে রাজ্যে ডিজেল আসছে।
তাঁর কথায়, শিলচর থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে। গৌহাটি থেকেও ডিজেল আনা শুরু হয়েছে। পেট্রোলও আমদানি করা হচ্ছে। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারন নেই। খাদ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস মজুত রয়েছে ত্রিপুরায়।
সাথে তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় পেট্রোল, ডিজেল আমদানি করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এখনি বাংলাদেশ দিয়ে পেট্রোল, ডিজেল আমদানি করার প্রয়োজন নেই বলেও দাবি করেন মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব।