‘অসমে প্ৰায় ৩৫ লক্ষ মানুষ বড়ো ভাষায় কথা বলেন’
তামুলপুর (অসম), ৪ মে (হি.স.) : সাহিত্য ও ভাষা সবসময় মানুষকে সংযুক্ত করে। বড়ো জনগোষ্ঠীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে মর্যাদা দিতে যে কাজ করছে বড়ো সাহিত্য সভা তার প্রশংসা করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। অসমে প্ৰায় ৩৫ লক্ষ মানুষ বড়ো ভাষায় কথা বলেন, এটা কম বড় কথা নয়। বড়ো সাহিত্য সভার ৬১-তম অধিবেশনের শেষদিনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি ভাষার মৰ্যাদা ও প্রাধান্য দিতে এ ধরনের আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বড়োল্যান্ড টিরিটরিয়াল রিজিওন (বিটিআর)-এর অন্তর্গত নবগঠিত তামুলপুর জেলা সদরে বোড়ো সাহিত্য সভার ৬১-তম অধিবেশনের আজ বুধবার ছিল তৃতীয় তথা শেষ দিন। অধিবেশনের শেষ দিনে রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখি, অসম, মেঘালয় ও সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে হিমন্তবিশ্ব শর্মা, কনরাড সাংমা, প্রেমসিং তামাং, অসম বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি, বিটিআর-প্রধান প্রমোদ বড়ো, রাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, ভুটানের এক প্রতিনিধি দল, বিটিসি-পারিষদবর্গ সহ অসংখ্য জনতার উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি প্রায় কুড়ি মিনিট ভাষণ দিয়েছেন। প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগদানকারী মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ায় প্রসন্ন ব্যক্ত করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষের ভাষার প্রতি যে এক দুর্দান্ত আকর্ষণ রয়েছে তা প্রতিফলন হয়, বলে রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন, অসমে প্ৰায় ৩৫ লক্ষ মানুষ বড়ো ভাষায় কথা বলেন, এটা কম কথা নয়। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ডের পাশাপাশি প্ৰতিবেশী বাংলাদেশ এবং নেপালেও বোড়োভাষী মানুষ রয়েছেন। তিনি বলেন, সাহিত্য ও ভাষা সবসময় মানুষকে সংযুক্ত করে। মানুষের হৃদয়কে সংযুক্ত করে। ভাষার মধ্যে স্বত্ববোধ আছে। অন্যান্য রাজ্য এবং বিদেশ থেকেও অনেক প্রতিনিধি এখানে এসেছেন। ভাষার প্রভাবেই অন্য জায়গা থেকে মানুষ আসেন। এর জন্য আমি আয়োজকদের অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, এ বছর তমুলপুর জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। নবগঠিত জেলার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এবং উত্তরপূর্বীয় রাজ্য সরকারগুলির যৌথ প্রচেষ্টায়, সমগ্র অঞ্চলে সম্প্রীতির পরিবেশ দৃঢ় হচ্ছে। এর জন্য আমি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষকে অভিনন্দন জানাই।
এই অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এর ফলে এ অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি ভাষা ও সাহিত্যও সমৃদ্ধ হবে। তিনি বলেন, এতদঞ্চলে অনেক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। একই সঙ্গে আজকের অনুষ্ঠানস্থলের কাছে একটি মেডিক্যাল কলেজও স্থাপিত হবে। এর জন্য আমি অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই। প্ৰাসঙ্গিক বক্তব্যে এই অনুষ্ঠান আয়োজনে তিনি অসম বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারিরও প্রশংসা করে বলেন, কেবল এ ধরনের অনুষ্ঠান নয়, তিনি বড়ো ভাষার বিকাশের জন্য প্রচুর কাজ করছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বড়ো সমাজের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। বলেন আমি যখন রাজ্যসভার সদস্য ছিলাম, তখন এই এলাকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতাম। বড়ো সাহিত্য সভা সম্পর্কে অনেক তথ্য আমি জানি। এ প্ৰসঙ্গে লোকসভার প্রাক্তন সাংসদ সানসুমা খুংগুর বিসমুথিয়ারিকে স্মরণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। একই সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্বজির জন্য রাষ্ট্রপতিকে ঘন ঘন অসম সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কোনও রাজ্যে আমার আসার পেছনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও এখানকার মানুষের ভালোবাসা আমাকে বারবার আসতে বাধ্য করে।
রাষ্ট্ৰপতি আজ বডোফা উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মের কথাও উল্লেখ করেছেন। বড়ো ভাষায় তাঁর বার্তা কয়েকবার দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ। বলেন, ১৯৬৩ সালের ১৮ মে বড়ো ভাষা শিক্ষাক্ষেত্রে স্বীকৃতি পেয়েছে। ওইদিনকে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বড়ো ভাষা সাহিত্যের বিকাশে অনেক উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। তিনি সাহিত্য সভার প্রতিষ্ঠাতাদেরও স্মরণ করেন। বড়ো ভাষা অসম রাজ্যের একটি সহায়ক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে বোডো রেনেসাঁর জন্য কাজ করেছিলেন কালীচরণ। এক সময় বিবর নামে একটি পত্রিকাও বড়ো ভাষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। এটি ১৯২৪ সালে প্রকাশিত হত। নাটক ও কবিতার ক্ষেত্রেও অনেক কাজ হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বড়ো ভাষার বহু মানুষ পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। পরিবেশ বাঁচাতে বড়ো ভাষায় অনেক রচনা হয়েছে। বড়ো এবং অসমিয়া ভাষার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য অনেক কাজ করা হয়েছে। বড়ো ভাষায় রচনাকে জাতীয় পর্যায়ে ১৭টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অনেক নারী সাহিত্যও সৃষ্টি করছেন। জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন দুই নারী লেখক। এ জন্য আরও নারীকে এগিয়ে আসতে কামনা করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ।
তিনি বলেন, তরুণ রচয়িতাদেরও বিশেষভাবে উৎসাহিত করতে হবে। বড়ো ভাষাকে দেশের ষষ্ঠ তফশিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বড়ো ভাষার জন্য কাজ করার জন্য তিনি তদানীন্তন প্ৰধানমন্ত্ৰী অটলবিহারী বাজপেয়ীকেও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বড়ো ভাষার রচনাবলি অন্যান্য কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে। সাহিত্য অকাডেমি, সংগীত নাটক অকাদেমি, ললিত অকাদেমি, ভারতীয় ভাষা সংস্থা এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান বড়ো ভাষার প্রসারে অবদান রেখেছে। ভাষা রক্ষা, প্রচারের দায়িত্ব সমাজ ও সরকারের। তাই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে এ জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অধিবেশন মঞ্চ থেকে রাষ্ট্রপতি বড়ো ভাষার অভিধান অনলাইনে প্রকাশ করেছেন। আজকের অধিবেশনে বহুজনের সঙ্গে অসম সরকারের মন্ত্রী উর্খাওগৌরা ব্রহ্ম, রাজ্যসভার সাংসদ রণগৌরা নার্জারি, বড়ো সাহিত্য সভার সভাপতি তোরেন বড়ো, সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত বড়ো, নিখিল বড়ো ছাত্র সংস্থা (আবসু)-র সভাপতি দীপেন বড়ো সহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনতা উপস্থিত ছিলেন।