Goriya Puja : ত্রিপুরায় মহা ধুমধামে পালিত হচ্ছে গড়িয়া পূজা, জনজাতিদের নিয়ে সরকার আন্তরিক, বললেন মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২১ এপ্রিল (হি. স.) : করোনার প্রকোপ কাটিয়ে এবার মহা ধুমধামে ত্রিপুরা রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে হিন্দু জনজাতিভুক্তদের অন্যতম প্রধান উৎসব গড়িয়া পূজা৷ ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে গড়িয়া পূজা উপলক্ষে সরকারী ছুটি দুইদিন পালিত হচ্ছে। গড়িয়া পূজায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের দাবি, জনজাতিদের নিয়ে ত্রিপুরা সরকার ভীষণ আন্তরিক।
সর্বশক্তিমান বাবা গড়িয়া দেবতার পুজো কঠোর নিয়ম নিষ্ঠা ও সংযমের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়৷ এই পূজার রীতিনীতি অন্য সকল পূজা থেকে আলাদা বলে দাবি জনজাতি অংশের মানুষের৷ বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় এ পূজার স্থান৷ এমন-কি মূর্তিও তৈরি হয় সরু সরু বাঁশ, হস্ত-তাঁতে তৈরি কাপড় ও জুমের চাল দিয়ে৷ পূজার পুরোহিতকে বলা হয় চন্তাই৷ সাধারণত প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ৭ তারিখ হয় গড়িয়া পূজা৷ পূজায় মোরগ, হাঁস, কবুতর ও পাঁঠা বলি দেওয়ার বিধান রয়েছে৷ আবার গরিয়া পূজায় প্রয়োজন হয় বাড়িতে তৈরি বিশুদ্ধ মদ ও হাঁস-মুরগির ডিম৷ মানুষের মঙ্গল কামনা করে এবং জুমে অধিক ফসল ফলনের প্রার্থনা করা হয় গড়িয়া দেবতার কাছে৷ গরিয়া দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে যুগ যুগ ধরে ত্রিপুরার হিন্দু আদিবাসীরা এই পূজার আয়োজন করে আসছেন৷

আগরতলার বিভিন্ন পাড়ার লোকজন, এমন-কি ক্লাবের উদ্যোগেও গড়িয়া পূজার আয়োজন করা হয়৷ আগরতলার সবচেয়ে বড় গড়িয়া পূজার আয়োজন করা হয় অভয়নগর পাকা সেতুর পাশে৷ এ উপলক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী মেলাও চলে এখানে৷ পুজো উপলক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি পিঠেপুলি-সহ পরম্পরাগত খাবার তৈরির প্রচলন রয়েছে আদিবাসী সমাজের কাছে৷ আগরতলার পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিটি জনজাতি বাড়িতে এই পূজার আয়োজন করা হয়৷

বাবা গড়িয়া দেবতার পুজো কঠোর নিয়ম নিষ্ঠা ও সংযমের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উদয়পুর মহকুমার কিল্লা আরডি ব্লকের অধীনে নোয়াবাড়িতে৷ এই পুজো ত্রিপুরার জনজাতিদের হলেও এখন এটি সকল অংশের মানুষের মধ্যে মিলনের সেতুবন্ধন রচনা করে৷ সাতদিন ধরে চলে এই পুজো৷ বাবা গড়িয়া মানে দেবাদিদেব মহাদেব৷
হাজারো বছর আগে ত্রিপুরায় জনজাতিদের মধ্যে যে ধর্ম ও সংসৃকতি চেতনার উন্মেষ হয়েছিল বর্তমানে আজও তা নিজস্ব মহিমায় বিরাজিত৷ কথিত আছে, মানুষের অভাব-অনটন, রোগ, শোক, দুঃখ-দারিদ্র্য থেকে অব্যাহতি পেতে যুগ যুগ ধরে গড়িয়া পুজো করে আসছেন ত্রিপুরার জনজাতিরা৷ গড়িয়া পুজো ত্রিপুরার জনজাতিদের লৌকিক দেবতার পুজো হিসাবে চিহ্ণিত হয়ে আজ তা সর্বজনীনতা লাভ করেছে৷ গড়িয়া পুজো এখন সমগ্র ত্রিপুরাবাসীর৷ ত্রিপুরায় উনিশটি জনজাতি সম্প্রদায় রয়েছে৷ এরা সকলেই বিশ্বাস করেন, গড়িয়া দেবতা এমন এক অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন দেবতা যাঁর কৃপাতেই মানুষ সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারেন৷ তার ইচ্ছাতেই দেশের সমৃদ্ধি ঘটে৷

খুব জাঁকজমকভাবে ত্রিপুরার জনজাতি সম্প্রদায়ের লোকেরা এই পুজো পালন করে থাকেন৷ পুজোকে কেন্দ্র করে নানান ধরনের খাবার তৈরি করা হয়৷ ভোগে থাকে বিভিন্ন প্রকারের পিঠে৷ তাছাড়া পাঁঠা, হাঁস-মোরগ, পায়রা বলি দেওয়া হয়৷ এই পূজায় হাঁসের ডিমও ব্যবহৃত হয়৷ ভোগেও মাংসের আয়োজন করা হয়৷ জনজাতিদের বিশ্বাস, গড়িয়া পুজোর সাতদিনের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ হয় কিংবা কোনও বিপদে পড়ে তা হলে গড়িয়া দেবতার মানত করলে সেই ব্যক্তি সুস্থ উঠবেন৷ এই পূজা অনেকটা শাক্ত মতে শিবের রাজসিক পূজা৷ জনজাতিরা এই পুজার পূজারীদের অচাই এবং প্রধান পূজারীকে চন্তাই বলে বিশেষ মর্যাদা দেন৷

রাজ্যের জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নয়নে রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই আন্তরিক। তাই মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যের নামে আগরতলা বিমানবন্দরের নামকরণ, গড়িয়া পূজার সরকারি ছুটি দু’দিন করা, বড়মুড়া ও গন্ডাছড়ার নাম পরিবর্তনের মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। গতকাল রাতে বিলোনীয়ার তুইসামাস্থিত বাবা গড়িয়া মন্দির উন্নয়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত গড়িয়া পূজা ও মেলার উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক অরুন চন্দ্র ভৌমিক, বিলোনীয়া পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান পুতুল পাল বিশ্বাস, জেলাশাসক সাজু ওয়াহিদ এ, পুলিশ সুপার ড. কুলবন্ত সিং প্রমুখ।অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, শান্তি হচ্ছে উন্নয়নের প্রধান শর্ত। বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে রাজ্যে শান্তির বাতাবরণ অক্ষুন্ন রয়েছে। এরফলে মানুষের মধ্যে স্বনির্ভরতার মানসিকতা গড়ে উঠেছে। এতে আগামীদিনে রাজ্যের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের পথ মসৃন হবে। তিনি বলেন, রাজ্যের ক্যুইন আনারস, কাঠাল, লেবু, বাঁশের বোতল দেশের সীমানা পেড়িয়ে বিদেশে পৌঁছে গেছে। এবছর এডিসিতে রেগায় রেকর্ড শ্রমদিবসের কাজ হয়েছে। রাজ্যে একলব্য স্কুলের সংখ্যা ৩ থেকে বাড়িয়ে ১৮ করা হয়েছে। দীর্ঘ ২৩ বছরের ব্লু সমস্যার সমাধান হয়েছে এই সরকারের আমলেই। আগামীদিনে রাজ্যে ৪ লক্ষ সুবিধাভোগীকে সামাজিক ভাতা ২০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তগুলির রাজ্যের মানুষ সার্বিক বিকাশে সরকারের অঙ্গীকারকে বিধিবদ্ধ করে। পরে সারা রাতব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *