গুয়াহাটি, ২১ এপ্রিল (হি.স.) : গুজরাটের ভাদগাম বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্ৰেস সমর্থিত নির্দলীয় বিধায়ক জিগনেশ মেভানিকে অসম পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এপিসিসি সভাপতি ভূপেনকুমার বরা।
অসম প্ৰদেশ কংগ্ৰেস কমিটি (এপিসিসি)-র সভাপতি ভূপেন বরা বলেন, ‘বিগত ১২ দিনে ১৩টি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। অথচ এক ট্যুইটের দায়ে গুজরাটে গিয়ে সেখানকার বিধায়ককে গ্ৰেফতার করেছে অসম পুলিশ। অপরাধ দমনের নামে বাড়ির কাছে মানুষকে গুলি করে মারা হচ্ছে। সে সব ব্যাপারে কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না অসম পুলিশ।’ এপিসিসি সভাপতি আরও বলেন, ‘জিগনেশ মেভানি বরাবরই বিজেপির কঠোর সমালোচক। তাঁকে ষড়যন্ত্ৰমূলকভাবে গ্ৰেফতার করা হয়েছে।’ অসম পুলিশকে রাজনৈতিক নেতাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন ভূপেন বরা।
জিগনেশ মেভানিকে অসম পুলিশ কৰ্তৃক গ্ৰেফতার প্ৰসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বরা আরও বলেন, গুজরাটে বিধানসভা নিৰ্বাচন সমাগত। ওই রাজ্যে জিগনেশ মেভানির বেশ প্ৰভাব আছে। তাই তাঁকে ভীতি প্রদর্শন করে নানাভাবে হেনস্তা করার যড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদল বিজেপি। তবে তিনি কোনও ভীতি প্রদর্শনের কাছে নতি স্বীকার করবেন না।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে অসম প্ৰদেশ কংগ্ৰেসের বেশ কয়েকজন আইনজীবী কোকরাঝাড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। জিগনেশ মেভানিকে আইনি সাহায্য প্ৰদান করতে অসম প্ৰদেশ কংগ্ৰেস সর্বোচ্চ সাহায্য করবে। বরা বলেন, কংগ্রেসিরা কখনও ভয়ে জড়োসড়ো হন না। ভয় পেলে ভারতবৰ্ষ স্বাধীনতা পেত না। ভূপেন বরার হুমকি, অসম পুলিশের বিরুদ্ধে প্ৰদেশ কংগ্ৰেস কমিটি আন্দোলন গড়ে তুলবে।
এদিকে গ্ৰেফতারের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বিধায়ক জিগনেশ বলেছেন, ‘একটি ট্যুইট করার অপরাধে নাকি আমাকে গ্ৰেফতার করা হয়েছে। অথচ পুলিশ সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। তবে আমি কোনও মিথ্যা অভিযোগকে ভয় করি না। আমার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গতকাল বুধবার রাত প্রায় ১১.৩০ মিনিটে গুজরাটের পালনপুর সাৰ্কিট হাউস থেকে কংগ্ৰেস সমৰ্থিত নিৰ্দলীয় বিধায়ক জিগনেশ মেভানিকে গ্ৰেফতার করেছে অসমের কোকরাঝাড় থানার পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নরেন্দ্ৰ মোদী নাথুরাম গডসেকে ঈশ্বরজ্ঞানে পুজো করেন বলে তিনি প্ৰধানমন্ত্ৰীর বিরুদ্ধে একাধিক ট্যুইট করেছিলেন।
জানা গেছে, গত ১৮ এপ্ৰিল বিধায়ক মেভানি তাঁর ট্যুইটার হ্যান্ডলে লিখেছিলেন, ‘‘ভারতের প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদী ‘গডসে’কে ঈশ্বর জ্ঞানে উপাসনা করেন। তাই তিনি দেশের উদ্দেশে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করবেন না। ২০ এপ্ৰিল গুজরাট সফরে আগত প্ৰধানমন্ত্ৰীকে আবেদন জানাচ্ছি, হিম্মতনগর, খাম্বাট এবং ভেরাভালের মতো সাম্প্ৰদায়িক হিংসাজর্জরিত এলাকাগুলিতে শান্তি ও সম্প্ৰীতি বজায় রাখতে তিনি যেন জনসাধারণের প্রতি আবেদন জানান।”
এই মন্তব্যের জন্য জনৈক অনুপ কুমার দে অসমের কোকরাঝাড় থানায় তাঁর বিরুদ্ধে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগানোর অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে কোকরাঝাড় থানায় বিধায়ক মেভানির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ১৫৩(এ) (দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা প্রচার করা), ২৯৫ (এ), ৫০৪, ৫০৬ এবং আইটি আইনের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রুজুকৃত মামলার ভিত্তিতেই গতরাতে তাঁকে গুজরাটের বনাসকান্থা জেলার পালনপুর সার্কিট হাউস থেকে কোকরাঝাড় পুলিশ গ্ৰেফতার করেছে। আজ বিধায়ক জিগনেশ মেভানিকে ট্রানজিট রিমান্ডে অসম পুলিশ গুয়াহাটিতে নিয়ে আসার সম্ভাবনা প্রবল।
প্ৰসঙ্গত, জিগনেশ মেভানি একজন আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীও। ২০১৭ সালে তিনি গুজরাটের ভাদগাম কেন্দ্রে কংগ্রেস সমর্থিত নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। একদা তিনি সাংবাদিকও ছিলেন। এছাড়া তিনি রাষ্ট্ৰীয় দলিত অধিকার মঞ্চের আহ্বায়কও।

