Central Project : সাধারণ মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে সরকারের প্রধান লক্ষ্য : কেন্দ্রীয় জলশক্তি প্রতিমন্ত্রী

আগরতলা, ১২ এপ্রিল (হি. স.) : সাধারণ মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে সরকারের প্রধান লক্ষ্য। ত্রিপুরা সরকার এই পথেই অগ্রসর হচ্ছে। জীবন ধারণের প্রাথমিক শর্তগুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আজ রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অগ্রগতির পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় জলশক্তি ও জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর টুডু এক সভায় একথা বলেন।

কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী রাজ্য অতিথিশালার মিলনায়তনে পানীয়জল ও স্বাস্থ্যবিধি, জলসম্পদ, স্বচ্ছ ভারত মিশন-গ্রামীণ, জনজাতি কল্যাণ দপ্তর সহ অন্যান্য দপ্তরের কাজ নিয়ে পর্যালোচনা করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের চেয়ারম্যান রাজীব যাদব, প্রধান সচিব পুনীত আগরওয়াল, সচিব কিরণ গিত্যে সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকগণ। সভায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ সুবিধাগুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন দপ্তরগুলির মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে।

সভায় পানীয়জল ও স্বাস্থ্যবিধান দপ্তরের মুখ্য বাস্তুকার রাজীব দেববর্মা জানান, রাজ্যে ১০ মার্চ পর্যন্ত জলজীবন মিশনে ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ১১৫টি পরিবারে ট্যাপের মাধ্যমে বিনামূল্যে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এরফলে রাজ্যের ৫০.১৪ শতাংশ পরিবার উপকৃত হয়েছে। ১৪ আগস্ট, ২০১৯ এ জলজীবন মিশন শুরু হওয়ার পূর্বে রাজ্যের কেবলমাত্র ৩.২২ শতাংশ বাড়িতে পানীয়জলের সংযোগ ছিল। বর্তমানে পানীয়জল সংযোগের ক্ষেত্রে রাজ্যের গড় কেন্দ্রীয় গড়ের থেকেও বেশি।

আলোচনায় তিনি আরও জানান, রাজ্যের ৭৪.৮৬ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ৫২.৭৫ শতাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ট্যাপের মাধ্যমে পানীয়জলের ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ট্যাপের মাধ্যমে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আলোচনায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, পানীয়জল যাতে অপচয় না হয় এদিকে দপ্তরকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। তাছাড়া পানীয়জল ও স্বাস্থ্যবিধান দপ্তর এবং বিদ্যুৎ দপ্তরকে সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন। দুর্গম এলাকার মানুষ যাতে পানীয়জলের সুবিধা নিতে পারেন তার জন্য দপ্তরকে বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
আলোচনায় স্বচ্ছ ভারত মিশন গ্রামীণ বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে মুখ্য বাস্তুকার রাজীব দেববর্মা জানান, এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে রাজ্যে ৩ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৪০টি নতুন শৌচাগার, ১১০টি সামাজিক শৌচালয় নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া ২ মার্চ, ২০১৯ তারিখে ত্রিপুরাকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম মুক্ত ঘোষণা করা হয়। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২-এ আরও ৬৫ হাজার ৫৩৭টি নতুন শৌচাগার, ৭৭টি সামাজিক শৌচালয় নির্মাণ সহ ৮টি ক্লাস্টার ভিত্তিক গোবর-ধন প্রজেক্ট চালু করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত রাজ্যের সকল গ্রাম জেলাগুলিকে ওডিএফ প্লাস মডেল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও দপ্তর গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে।
সভায় জলসম্পদ দপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সচিব কিরণ গিত্যে জানান, এখন পর্যন্ত রাজ্যে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৪১ হেক্টর। এরমধ্যে জলসেচের আওতায় এসেছে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৭৫২ হেক্টর এলাকা। আগামী ৪ বছরের মধ্যে আরও ৩৪ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য দপ্তর কাজ করছে। লিফট ইরিগেশন স্কিম, হাইপাওয়ার লিফট ইরিগেশন স্কিম, ডাইভারশন স্কিম, মিডিয়াম ইরিগেশন প্রজেক্ট, ডিপ টিউবওয়েল, শ্যালো ডিপ টিউবওয়েল স্কিম- এগুলির মাধ্যমে রাজ্যে জলসেচ ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

সভায় জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের কাজ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দপ্তরের অধিকর্তা ড. বিশাল কুমার জানান, রাজ্যের ৬৯ শতাংশ এলাকা ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের অধীনে রয়েছে। এই বিস্তীর্ণ এলাকার উন্নয়নে রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই কাজ করে আসছে। এই এলাকায় শিক্ষার উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয়, স্টাইপেন্ড, স্কলারশিপ, ড্রপ আউটদের কোচিং, মেরিট অ্যাওয়ার্ড প্রদান প্রভৃতির ব্যবস্থা রয়েছে। জনজাতিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি, উদ্যান, রাবার, বাঁশ, মৎস্য চাষ বিষয়ে প্রচুর পরিমাণে সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়াও সুপারি, কাঁঠাল, সজিনা, আনারস চাষেও সহায়তা করা হয়।

তিনি বলেন, জনজাতি এলাকার পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। গত ১৪ আগস্ট, ২০২১ এ চিফ মিনিস্টার্স রাবার মিশন নামে একটি নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আগামী ৫ বছরে ৩০ হাজার হেক্টর এলাকাকে রাবার চাষের আওতায় আনা হবে। এরফলে ৩০ হাজার সুবিধাভোগী উপকৃত হবেন। এরমধ্যে মার্চ পর্যন্ত ২ হাজার ৯৮৯ জন সুবিধাভোগীর ২৩৭২.৫২ হেক্টর এলাকায় রাবার চাষ করা হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ১০৩ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *