করিমগঞ্জ (অসম), ৩১ মার্চ (হি.স.) : রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান বিধায়ক কংগ্ৰেস নেতা সিদ্দেক আহমেদের ক্রস ভোটিংকে কেন্দ্ৰ করে রাজ্য রাজনীতিতে সুনামির ঢেউ উঠেছে। আর সেই ঢেউ আছড়ে পড়েছে সিদ্দেকের গৃহ জেলা করিমগঞ্জেও। জাতির কলঙ্ক, মিরজাফর ইত্যাদি নানা বিশেষণে সিদ্দেক আহমেদকে বিদ্ধ করছেন জেলা কংগ্রেসের নেতা কর্মীগণ।
এদিকে সিদ্দেকের বিরুদ্ধে দলীয় তরফ থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দল ছাড়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি তথা উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। অন্যদিকে নিজেকে লবিবাজির শিকার বলে কমলাক্ষের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সিদ্দেক আহমেদ। আত্মপক্ষ সমর্থন করে সিদ্দেক আহমেদ সংবাদ মাধ্যমের সামনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, বহু বছর ধরে রাজ্যসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে আসছেন। তাই কীভাবে ভোট দিতে হয় তা ভালোই জানেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বরা যে অভিযোগ তুলেছেন তা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে সিদ্দেক বলেন, তিনি দলীয় প্রার্থী রিপুন বরাকে সঠিকভাবেই ভোট দিয়েছেন। দলের বেশ কয়েকজন ক্রস ভোটিং করেছেন, অথচ বলির পাঁঠা তাঁকেই বানানো হচ্ছে।
প্রদেশ সভাপতি ভূপেন বরাকে সঙ্গে নিয়ে কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ তাঁর বিরুদ্ধে আক্রোশ মেটাচ্ছেন বলেও পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন সিদ্দেক আহমেদ। দলীয় যে সকল বিধায়ক বেলট পেপার ছিঁড়ে দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রদেশ সভাপতি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? এই প্রশ্নও তুলেছেন সিদ্দেক।
এদিকে ক্রস ভোটিং নিয়ে কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ গুয়াহাটি থেকে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একসাথে বসে ‘দা কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমা দেখার ঘটনাই প্রমাণ করে, ক্রস ভোটিঙের মাধ্যমে সিদ্দেক আহমেদ পরোক্ষ ভাবে বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন। সিদ্দেকের বেইমানি এবং বিশ্বাসঘাতকতার অতীত অনেক ইতিহাস রয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। নিজের পিঠ বাঁচাতেই সিদ্দেক আহমেদ মুখ্যমন্ত্রীর রচিত চক্রব্যুহে ফেঁসে গিয়েছেন। আসলে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ এবং সম্পত্তি রক্ষা করার জন্যই সিদ্দেক বেশ কয়েকদিন থেকে শাসক দলের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্বদলীয় বিধায়ক কমলাক্ষ। এত সবের পরও যদি দল মিরজাফর সিদ্দেক আহমেদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়, তা-হলে সরাসরি দল ছাড়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি তথা বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
রাজ্যসভা নির্বাচনে সিদ্দেক আহমেদ ক্রস ভোটিং করেছেন। এই খবর বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সিদ্দেকের গৃহ জেলা করিমগঞ্জ এবং তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র দক্ষিণ করিমগঞ্জে দলীয় মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শাসক দলের নেতা কর্মীরা সিদ্দেক প্রসঙ্গে মুখ বন্ধ রাখলেও, বসে নেই কংগ্রেসিরা। দলের নেতা-কর্মী সহ সমর্থকরা সিদ্দেকের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। বিধানসভা নির্বাচনে ‘কৌম’ (মুসলিমদের এক সমাজ)-এর নামে ভোট নিয়ে এবার বিজেপির দালালি শুরু করেছেন বলে সিদ্দেকের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করছেন দলীয় কর্মী সমর্থকরা। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ট্যুইটার ইত্যাদি বিভিন্ন সামিজিক মাধ্যমেও সিদ্দেকের দল-বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে। জেলা থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত দলের প্রত্যেক নেতা কর্মী সিদ্দেকের এহেন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার উগরে দিচ্ছেন।