করিমগঞ্জ (অসম), ২৭ মার্চ (হি.স.) : দুর্নীতির ক্ষেত্রে ‘শূন্য সহনশীলতা’ অবলম্বন করে রাজ্যের বিজেপি সরকার মুখে যতই বড়াই করুক না-কেন, বাস্তব চিত্র কিন্তু অন্য কথা বলছে। বন বিভাগের প্রচ্ছন্ন মদতে ভৈরবনগরে চলছে বৃক্ষ নিধন মহাযজ্ঞ। সরকার দুর্নীতি আর অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করলেও অনেক জায়গায় কিন্তু সেই ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি উল্টো পথে চলছে। করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ভৈরবনগরের ডাউকি এলাকায় সম্প্রতি বেআইনিভাবে মূল্যবান সেগুন গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি নিয়ে এভাবেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কংগ্রেস নেতা তথা প্রয়াত মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর সহধর্মিণী অঞ্জলী দত্তচৌধুরী ও তাঁদের তিন কন্যা।
ভৈরবনগরের পার্শ্ববর্তী ডাউকি এলাকায় প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রয়াত মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরী এবং তাঁর দুই ভাই মৃগাঙ্ক দত্তচৌধুরী ও অধ্যাপক মানবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর নামে বন বিভাগের সংযুক্তভাবে রেজিস্ট্রিকৃত সেগুন বাগান রয়েছে। আলাদা আলাদা পাট্টা জমিতে গড়ে তোলা সেই বাগানে রয়েছে রয়্যালটি সংবলিত ৪,৫০০টি সেগুন গাছ। ১৯৯৭/৯৮ সালে মাধবেন্দ্রবাবুর হাতে তৈরি সেই সেগুন বাগানে নিবন্ধন প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নবিকরণও হচ্ছে। সম্প্রতি মানবেন্দ্রবাবুর অবর্তমানে তাঁর দুই ভাই বিজেপি নেতা মৃগাঙ্ক দত্তচৌধুরী ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক মানবেন্দ্র দত্তচৌধুরী বন দফতরের একাংশ কর্মীর সাথে যোগসাজশ করে মাধবেন্দ্রবাবুর উত্তরাধিকারীদের অন্ধকারে রেখে সেগুন গাছ কাটার অর্ডার আদায় করে সংযুক্তভাবে রেজিস্ট্রিকৃত বাগানে সেগুন গাছ কাটতে শুরু করেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রয়াত মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর সহধর্মিণী অঞ্জলী দত্তচৌধুরী।
কাকাদের এমন ঘটনা জানতে পেরে প্রয়াত মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর কন্যারা করিমগঞ্জের ডিএফও-র সঙ্গে যোগাযোগ করে বেআইনিভাবে সংগঠিত ঘটনাটি তুলে ধরেন। বাবা এবং ভাইয়ের অবর্তমানে তাঁরা হলেন শেয়ার হোল্ডারের এক পক্ষ। তাঁরা প্রশ্ন তুলেন, তিনজন শেয়ার হোল্ডারের নামে সংযুক্ত রেজিস্ট্রিকৃত বাগানের কাটিং অর্ডার শুধু দুজন শেয়ার হোল্ডারদের নামে কীভাবে দেওয়া হল? বন আইনের কোন নীতির আওতায় এ ধরনের তুঘলকি কাণ্ড সম্ভব হল? মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরী অর্থাৎ বাবার অবর্তমানে তাঁরা তিন বোন ও মা উত্তরাধিকার সূত্রে সেগুন বাগানের শেয়ার হোল্ডারের দাবিদার। তাই তাঁদেরকে অন্ধকারে রেখে বিভাগীয় তরফ থেকে সেগুন গাছ কাটার অর্ডার কীভাবে দেওয়া হয়েছে? এই সব প্রশ্নও তুলেছেন প্রয়াত মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর তিন কন্যা মোনালিসা দত্তচৌধুরী, মালবিকা দত্তচৌধুরী এবং মৌটুসী দত্তচৌধুরী।
তাঁরা তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, বাবা মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর উত্তরাধিকারিদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাকা মৃগাঙ্ক দত্তচৌধুরী ও অধ্যাপক মানবেন্দ্র দত্তচৌধুরী রামকৃষ্ণনগর সার্কল অফিসের ঊর্ধ্বতন ও অধস্থন কর্মীদের সাথে যোগসাজশ করে রামকৃষ্ণনগরের দত্তচৌধুরী পরিবারের সম্পূর্ণ যৌথ সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। করিমগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজের আদালতে মৃগাঙ্ক দত্তচৌধুরী ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক মানবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রয়াত মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর তিন কন্যা ২০১৬ সালে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা নম্বর ৪৮/২০১৬। বর্তমানে মামলাটির শুনানি প্রক্রিয়া চলছে।
প্রয়াত কংগ্রেস নেতা মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর তিন কন্যা অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের বাবা এবং ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকেই কাকাদের তরফ থেকে নানা ধরনের হুমকি, হয়রানি, বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন তাঁরা। তাঁদের প্রয়াত বাবার নামে সম্পত্তি দখলের লোভে উচ্চশিক্ষিত কাকারা শালীনতা, শিষ্টাচার, ভদ্রতার মাত্রাজ্ঞানও হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁরা এ-ও অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লোভের বশবর্তী হয়ে পিতৃতুল্য কাকারা প্রতিনিয়ত তাঁদের সামাজিক ভাবে হেনস্তা করারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে তাঁরা আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
এদিকে স্থানীয়দের মতে, পারিবারিক ঝগড়ায় রাজনীতি এন্ট্রি নিয়েছে। প্রয়াত মাধবেন্দ্রবাবু একজন পোড় খাওয়া কংগ্রেসি নেতা ছিলেন। তাঁর বাবা প্রয়াত মতিলাল দত্তচৌধুরীর একজন খাঁটি কংগ্রেসি হিসেবে রাজ্য রাজনীতিতে একটা পরিচিত নাম ছিল। বিজেপি সরকারে আসার পরই ক্ষমতার লোভে মৃগাঙ্ক দত্তচৌধুরী সহ বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা গেরুয়া শিবিরে আশ্রয় নিয়ে নেন। যদিও প্রয়াত মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর স্ত্রী তথা প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্যা অঞ্জলী দত্তচৌধুরী এখনও কংগ্রেসেই রয়েছেন। তিনি দলবদল করে ক্ষমতার জোয়ারে গা ভাসাননি।
বেআইনি এই বৃক্ষ নিধন নিয়ে প্রয়াত মাধবেন্দ্র দত্তচৌধুরীর পক্ষাবলম্বীরা দাবি করছেন, করিমগঞ্জের বর্তমান সাংসদের সঙ্গে দহরম মহরম ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বলে বন বিভাগকে হাত করে প্রতিপক্ষ তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জঘন্য খেলায় মেতেছেন। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও জল ঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল রয়েছে বলে রামকৃষ্ণনগরের স্থানীয় জনগনের ধারণা।