আগরতলা, ২১ মার্চ (হি. স.) : ত্রিপুরাকে আপাতত ‘ড্রাই স্টেট’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে, সুরাপ্রেমীদের জন্য আজ বিধানসভা অধিবেশনে সুখবর মিলল। এ-বিষয়ে উপ-মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব্বর্মার সাফ কথা, ‘ড্রাই স্টেট’ ঘোষণা হলেই মদ্যপানের পরিমাণ কমবে, জাতীয় প্রেক্ষাপটে এমন প্রমাণ মিলেনি। বিশ্বব্যাপী এই সামাজিক সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন মানিসকতার পরিবর্তন।
আজ বিধানসভা অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিধায়ক সুধাংশু দাসের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব্বর্মা বলেন, গত তিন বছরে অবৈধ দেশীয় মদ প্রস্তুতি, বিক্রি এবং মজুত করার অপরাধে মোট ২৭৭৬ জন অপরাধীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
তার বছর ভিত্তিক হিসেব তুলে ধরে তিনি জানান, ২০১৯ সালে ১১৫০ জন, ২০২০ সালে ৯৪১ জন এবং ২০২১ সালে ৬৮৫ জন এমন অপরাধীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।সাথে তিনি আরো জানান, ত্রিপুরায় শহর ও গ্রামীণ বাজার এলাকায় অবৈধ দেশীয় মদ প্রস্তুতি, বিক্রি এবং মজুত করা বন্ধে আরক্ষা দফতর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষয় রোধের পাশাপাশি সুস্থ সমাজ বজায় রাখতে সম্ভাব্য সকল স্থানে অবৈধ দেশীয় মদ উত্পাদক, বিক্রেতা এবং মজুতদারদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সাথে তিনি যোগ করেন, ত্রিপুরায় শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে দেশীয় মদ পানের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতার লক্ষ্যে নিয়মিত পুলিশের উদ্যোগে ‘প্রয়াস’ বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। তাছাড়া, সমস্ত প্রকারের দেশীয় মদের উত্পাদন এবং বিক্রয় বন্ধে ত্রিপুরায় আরক্ষা বাহিনী সকল প্রকার সম্ভাব্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
উপ-মুখ্যমন্ত্রীর জবাব শুনে অতিরিক্ত প্রশ্নে বিধায়কের দাবি, যুব সমাজ তার ক্ষতিকারক প্রভাবে ধ্বংস হচ্ছে। বহু পরিবার ছারখার হয়ে যাচ্ছে। তাই, মদ ত্রিপুরায় পুরোপুরি বন্ধ করার দাবি জানান তিনি। তাঁর প্রস্তাব, ত্রিপুরাকে ‘ড্রাই স্টেট’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হোক। সাথে তিনি পুলিশের মদ বিরোধী অভিযান নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্থাপন করে সিপিএম বিধায়ক সুধন দাস বলেন, ত্রিপুরা নেশায় ভাসছে। এক্ষেত্রে, বিলেতি মদের দোকান বাড়ানোর বদলে কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক।
জবাবে উপ-মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ড্রাই স্টেট’ ঘোষণা দেওয়া হলেই মদ্যপান কমবে, জাতীয় প্রেক্ষাপটে এমন প্রমাণ এখনো মিলেনি। কারণ, মদ্যপানের ফলে তৈরী সমস্যা সামাজিক অভিশাপ। সারা বিশ্বব্যাপী এই সামাজিক সমস্যা রয়েছে। তিনি বিরোধীদের উদ্দেশ্যে বিদ্রুপের সুরে বলেন, আগে মদের দোকান কম ছিল, তাই মানুষ মদ্যপান কম করতেন। এখন বেড়েছে, তাই মানুষ মদ্যপান বেশি করছেন এই তর্কের বাস্তব ভিত্তি নেই।
তাঁর কটাক্ষ, মদ্যপানের ফলে তৈরী সমস্যাকে নিয়ে রাজনীতি করা শিশু সুলভ আচরণ। তাই, এই সমস্যা নিয়ে রাজনীতি করার বদলে রাজনৈতিক দল হিসেবে সমাজকে সুধরানোর দায়িত্ব নিন, বিরোধীদের পরামর্শ দেন তিনি। তাতে, বিরোধী দলের সচেতক তপন চক্রবর্তী উপ-মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে বলেন, রাজনীতি করছি না, সামাজিক অবক্ষয় দূর হোক চাইছি আমরা।