আগরতলা, ১২ ফেব্রুয়ারি (হি. স.) : মনে হচ্ছে, লড়াইটা সরাসরি বিপ্লব দেবের সাথে। তাই, তাঁকেই আজ চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন সুদীপ রায় বর্মণ। কংগ্রেসে যোগ দিয়ে আগরতলায় ফিরে কৌশলী মিছিলে এমনটাই প্রমাণ করেছেন তিনি। সম্ভবত, এই প্রথম ত্রিপুরায় কংগ্রেস নেতাকে দিল্লি থেকে ফেরার পর বাইক মিছিল আগরতলা শহরের অনেকটা জুড়ে পরিক্রমা করেছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সোজা পোস্ট অফিস চৌমুহনী না গিয়ে ওই মিছিল বনমালীপুর বিধানসভা কেন্দ্র পরিক্রমা করে কংগ্রেস ভবনে পৌচেছে, রাজনীতির এমন কূট চাল আগে কেউ দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না।
এদিকে, বিজেপিকে হারাতে ত্রিপুরায় কেউ অছ্যুত নন। কংগ্রেস ভবনে সম্বর্ধনা সভায় এই ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তাই দিলেন প্রাক্তন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাস মোকাবিলায় সকলকে প্রতিবাদের সাথে প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন তিনি। বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে আজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি ঠিকই। কিন্ত, সিপিএম, তিপরা মথা এবং আইপিএফটি-র পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। তাঁর সাফ কথা, ভোট ভাগাভাগি হবে যাঁরা ভাবছেন তাঁরা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। কারণ, সমস্ত সমীকরণ করেই লড়াইয়ে নেমেছেন, দৃঢ়তার সাথে বলেন তিনি।
আজ কংগ্রেস ভবনের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে চাঁচাছোলা ভাষায় বিজেপিকে নিশানা করেছেন সুদীপ রায় বর্মণ। ত্রিপুরায় সরকার গঠন হলেও প্রতিশ্রুতি খেলাপের অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে এনেছেন তিনি। তাঁর দাবি, স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে গিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে হয়েছে। কারণ, বেশ কিছু গৃহীত পদক্ষেপে আমার জনপ্রিয়তা বেড়ে যাবে তা কারোর সহ্য হচ্ছিল না। তেমনি, কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি আজ বেকারদের আর্তনাদে বিজেপির আসল চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, টেট পাস করে বসে আছেন, অথচ তাঁদের চাকুরী দেওয়া হচ্ছে না। ত্রিপুরা সরকার জেআরবিটির ফলাফল প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছে না। প্রচুর নার্সের পদ খালি পড়ে রয়েছে। কিন্ত, নিয়োগ করা হচ্ছে না। শুধুই আউটসোর্সিং-র মাধ্যমে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে। তাতেও কাটমানি নেওয়ার জ্বালায় কর্মপ্রার্থীরা নাজেহাল হচ্ছেন।
তিনি দাবি করে বলেন, প্রতি বছর সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন। বাজেটের বই ঘেঁটে তার নির্দিষ্ট হিসেব পাওয়া গেছে। অথচ, শূন্যপদ পূরণের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না ত্রিপুরা সরকার। ফলে, এক বছর ওই পদ খালি পড়ে থেকে তা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তিনি বিদ্রুপ করে বলেন, সপ্তম বেতন কমিশনের নাম সরকার কর্মচারীদের সাথে ভাওতাবাজি করেছে। এখনো ২৮০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা বাকি রয়েছে। ফলে, কর্মচারীরা প্রচুর আর্থিক লোকসানের শিকার হচ্ছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চাকুরিচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষকদের জন্য ভিশন ডকুমেন্টে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের পাশে দাঁড়াবে সরকার। অথচ, আজ তাঁরা চাকুরী হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন। সাথে ১২৬ জন শিক্ষক প্রাণ হারিয়েছেন।
এদিন তিনি আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়েই বিজেপি সরকারকে তুলোধুনো করেছেন। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তাঁর দাবি, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হওয়ার বদলে প্রতি বছর অবনতি হচ্ছে। অপরাধ ত্রিপুরায় বেড়েই চলেছে। অথচ, পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কারণ, মন্ডলের নেতা থানায় গিয়ে পুলিশকে শাসিয়ে আসছেন। তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, ত্রিপুরায় বাইক বাহিনীর তান্ডব বেড়ে গেছে, এখন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তাঁর আবেদন, ভীরুর মতো মৃত্যুর আগে মৃত্যুবরণ করবেন না। নিজের উপর আস্থা রাখুন। সংগঠিত হন, সংগঠিত করুন। তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেন, এখন থেকে আর মার খাব না। প্রতিবাদের সাথে সন্ত্রাস প্রতিহত করব। তাঁর সাফ কথা, এই লড়াই ক্ষমতা দখলের জন্য নয়। মানুষকে অপশাসন ও নৈরাজ্যের হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই হবে লড়াই। তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, বিজেপিকে হটাতে আগামীদিনে নীতিগত ভাবে সমস্ত কিছু করতে প্রস্তুত আছি আমরা। আমাদের কাছে কেউ অছ্যুত নন।
তাঁর দাবি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংগঠন করার অধিকার সকলের রয়েছে। সেক্ষেত্রে, সিপিএম, তিপরা মথা এবং আইপিএফটি আক্রান্ত হলে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তেমনি, তাঁদের কাছেও তিনি আবেদন রাখেন কংগ্রেসের পাশে দাড়াবার। তিনি বলেন, ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার নীতি বিজেপির। তাই, আজ বাড়ি ফেরার আলাদা আনন্দ অনুভব করতে পারছি। তিনি আবেগ প্রবণ হয়ে বলেন, করোনার প্রকোপে মানুষের মৃত্যু মিছিল দেখে স্ত্রীর কাছে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে মৃতদেহ কংগ্রেস ভবনে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম।
এই ভাবাবেগ থেকে তিনি আজ কংগ্রেস ছুট সমস্ত বিজেপি নেতা-বিধায়কদের ফিরে আসার আহবান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, আত্মসম্মানের সাথে আপোষ করা উচিত হবে না। আত্মমর্যাদা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে আমাদের। তিনি আজ সাফ জানিয়েছেন, ভোট ভাগাভাগি নিয়ে যাঁরা চিন্তিত তাঁরা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। কারণ, সমস্ত সমীকরণ করেই লড়াইয়ে নেমেছি।