স্বনির্বরতার লক্ষ্যে উষর জমি উর্বর করে, কাঁকসায় করলা–বিনস্–শসা–সব্জি চাষ

দুর্গাপুর, ১০ ফেব্রুয়ারি (হি. স.) করোনা আবহের লকডাউনে রোজগার হারিয়েছে বহু পরিবার। এবার সরকারের লক্ষ্য উৎপাদক গ্রুপ তৈরী করে স্বনির্ভরতা করা। আর তাই উষর জমি উর্বর করে কৃষিতে জোর দিয়েছে সরকার। উষরমুক্তি প্লাস প্রকল্পে এবার লভজনক সব্জি চাষ শুরু হল কাঁকসা ব্লকে। ইতিমধ্যে ব্লকের গোপালপুর পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত ফারাকিডাঙায় অঙ্কুরিত করলা, বিনস্ বীজ রোপন করে প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে। আর তাতেই আশার আলো দেখছে জঙ্গলমহলের আদিবাসী পারিবারগুলো।উষরমুক্তি। উষর অর্থাৎ ডাঙা অনুর্বর জমিকে উর্বর করে চাষের উপযুক্ত করতেই উষরমুক্তি প্রকল্প। বছর কয়েক আগেই প্রকল্পটি চালু হয়েছিল। এখন নতুন নাম হয়েছে উষরমুক্তি প্লাস প্রকল্প। গত দুবছর চিনের উহান উজাড় করা করোনার দাপট রুখতে লকডাউনে বহু মানুষের জীবিকায় আঘাত এসেছে। বেড়েছে বেকারত্ব, কর্মহীন। ভিন রাজ্যে রুজি রোজগার হারিয়ে বহু পরিবার এখন নিজ দেশে কর্মহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছে। লকডাউনে রেশ কাটিয়ে সাধারন মানুষের রোজগারের লক্ষ্যে আত্মনির্ভরতার স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। আত্মনির্ভরতায় কৃষির ওপর বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমান জেলায় কাঁকসা ব্লকে উষরমুক্তি প্লাস প্রকল্পে উৎপাদক গ্রুপ তৈরী করে লাভজনক সব্জি চাষে জোর দেওয়া হয়েছে। কাঁকসা ব্লকের গোপালপুর ফারাকিডাঙায় প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে করলা, বিনস চাষ শুরু হল। যদিও আদিবাসী অধ্যুষিত ফারাকিডাঙার সরকারি ওই জমিতে বছর তিনেক আগে এমজিএনআরজিএস প্রকল্পে আমের বাগান তৈরী করা হয়। বর্তমানে ওইসব আম গাছ ৫-৬ ফুট লম্বা হয়েছে। ফল ধরতে শুরু করেছে। আম গাছ থাকলেও নিচের জমি ফাঁকা পড়ে। তাই ওই ফাঁকা জমিতে নতুন করে সব্জি চাষ শুরু করা হয়। ব্লকের উষরমুক্তি প্লাস প্রকল্পের আধিকারিক সত্যনারায়ন সর্দার জানান,” প্রকল্পের মুল লক্ষ্য উৎপাদক গ্রুপ তৈরী করা।আগামী দু বছরে ব্লকের গোপালপুর, আমলাজোড়া, ত্রিলোকচনদ্রপুর, বনকাটি, বিদবিহার, মলানদীঘি এই ছ’টি পঞ্চায়েতে ৫৯ টি উৎপাদক গ্রুপ তৈরী করা হবে। ১২০-১৩০ টি পরিবার তাতে নিযুক্ত থাকবে। তাদের বীজ তৈরী ও বীজ লাগানোর পদ্ধতি, পরিচর্যা করা, সার প্রয়োগ করা, গাছের পোকা দমনের পদ্ধতির বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উষরমুক্তি প্রকল্প থেকে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হবে। খাস ও ব্যাক্তিগত জমিতে উৎপাদক গ্রুপগুলি তাদের সুবিধা মতো চাষ করতে পারবে।”

তিনি আরও বলেন,”সম্পুর্ন জৈব সার প্রয়োগ করে চাষ করা হবে। এক ফসলি চাষাবাদ এলাকায় আমন ধান কেটে নেওয়ার পর মানুষের রোজগার বৃদ্ধিতেই এধরনের সব্জি চাষে জোর দেওয়া হয়েছে। সারাবছরই রোজগারের জন্য নানান লাভজনক সব্জি চাষ। বাজার সার্ভে করে লাভজনক ও চাহিদা রয়েছে, এরকম সব্জি চাষে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতে বাজারের চাহিদা যেমন পুরণ হবে, তেমনই ওই সব্জি বিক্রি করে রোজগার হবে উৎপাদক গ্রুপের পরিবারগুলির।”তিনি বলেন,” গোপালপুরের ফারাকি ডাঙায় সরকারি জমিতে অঙ্কুরিত করলা ও বিনস্। বীজ লাগানো হয়েছে চাষ করা হয়েছে। সেখানে ২০ টি পরিবার ওই কাজে যুক্ত। আমের বাগানে দুটো করলা চারার মাঝে একটি করে বিনস্ চারা লাগোনো হয়েছে। আমের বাগানের পরিচর্যা ও সব্জি চাষ দুটো একসঙ্গে করতে পারবে পরিবারগুলি।”

প্রশ্ন, করলা চাষে গুরুত্ব কেন? সত্যনারায়নবাবু বলেন,” সারা বছরই বাজারে করলার দাম ভাল এবং চাহিদা থাকে। তাই করলা চাষে প্রথম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাজারের চাহিদা মতো সাইজের করলা চাষ করা হবে। এবং একইসঙ্গে ছ’টি পঞ্চায়েতে করলা উৎপাদন হলে, জেলার বাজারে করলার চাহিদা পুরন সম্ভব হবে। তাই সবক’টি নির্ধারিত পঞ্চায়েতের একসঙ্গে করলা বীজ লাগানো হচ্ছে। এছাড়াও বিনস্, শসা, ঝিঙে, ঢেঁড়স, বেগুন চাষ করা হবে। মলানদীঘি পঞ্চাায়েতের ঘটকডাঙায় প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে করলা ও শসা লাগানো হবে। সেখানে ৩২ টি পরিবার সব্জি চাষে যুক্ত থাকবে।”গোপালপুর পঞ্চায়েতের প্রধান জয়জিৎ মন্ডল বলেন,” আদিবাসী ওই পরিবারগুলোর রোজগার দেওয়ায় মুল লক্ষ্য। তাই তাদের স্বনির্ভরতার জন্য সব্জি চাষে জোর দেওয়া হয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *