প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় রাজ্যের এলপিজি গ্রাহকদের বাড়িতে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছাতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৭ ফেব্রুয়ারি : প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় রাজ্যের এলপিজি গ্রাহকদের বাড়িতে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছাতে হবে। এরজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের মাধ্যমে গ্যাস এজেন্সিগুলিকে সিলিন্ডার প্রতি ২৮ টাকা পরিবহণ খরচ প্রদান করে থাকে। যদি কোনও এলপিজি গ্যাস এজেন্সি ভোক্তাদের হোম ডেলিভারির মাধ্যমে সিলিন্ডার না পৌঁছায় তাহলে ঐ এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আজ সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে খাদ্য, জনসংভরণ ও ভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন। সভায় খাদ্য দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গণবন্টন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আম উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। প্রকৃত ভোক্তারাই যাতে তা সামগ্রী রেশনশপ থেকে সংগ্রহ করতে পারে তারজন্য গণবন্টন ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশন চালু করা হয়েছে। এরফলে ভোক্তাদের অধিকার যেমন সুরক্ষিত হয়েছে, তেমনি খাদ্য দপ্তরের কাজেও স্বচ্ছতা প্রকাশ পেয়েছে।

পর্যালোচনা সভায় দপ্তরের সচিব শরদিন্দু চৌধুরী জানান, রাজ্যে বর্তমানে ১,৮৮৪টি রেশনশপ রয়েছে। এরমধ্যে শহর এলাকায় রয়েছে ৪৬৬টি এবং ১,৪১৮টি রয়েছে গ্রামীণ এলাকায়। রেশনশপগুলিতে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশনের মাধ্যমে রেশন সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। প্রকৃত ভোক্তারা যাতে তাদের সামগ্রী রেশনশপ থেকে সংগ্রহ করতে পারে তারজন্য রেশনকার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণ ১০০ শতাংশ করা হয়েছে। খাদ্য দপ্তরের সচিব জানান, রাজ্যে বর্তমানে গোডাউন থেকে রেশনশপ পর্যন্ত পরিবহণ, স্টক ইত্যাদি সবকিছুই অনলাইনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। রাজ্যে বর্তমানে ১৩৩টি খাদ্য গুদাম রয়েছে। যাতে মোট ৭২ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য মজুত করার ক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া ৭টি এফসিআই’র বেইস ডিপো রয়েছে, যেখানে ৪৭ হাজার ২২৮ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য মজুত করার ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও এফসিআই ডিপো থেকে রাজ্যের বিভিন্ন গোডাউন পর্যন্ত সামগ্রী পৌঁছানোর জন্য ৬৯টি তালিকাভুক্ত ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রাক্টর, গোডাউন থেকে রেশনশপে সামগ্রী সরবরাহের জন্য ১৬০টি ডোরস্টেপ ডেলিভারি কন্ট্রাক্টর এবং পিডিএস সামগ্রী সরবরাহের জন্য দপ্তরের ১২টি গাড়ি রয়েছে। খাদ্য দপ্তরের সচিব আরও জানান, রাজ্যে বর্তমানে ৩টি তালিকাভুক্ত ময়দা মিল ও ৮৫টি গম ভাঙ্গার মিল রয়েছে। এছাড়াও রাজ্যে ৬৫টি পিওএল আউটলেট, ৬০টি এলপিজি এজেন্সি এবং ২৮টি কেরোসিন তেলের এজেন্সি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় রেশনশপের মাধ্যমে ভোক্তাদের ডাল দেওয়া হচ্ছে।

এই ডাল বহির্রাজ্য থেকেই সংগ্রহ করে আনতে হচ্ছে। তাতে দেখা গেছে ডালের মিলিং চার্জ সহ ডাল লোডিং-আনলোডিং-এর ক্ষেত্রে অনেক টাকা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। তাই রাজ্যেই ডাল মিল স্থাপনের উপর দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, রাজ্যে কেউ ডালের মিল স্থাপনের ইচ্ছুক হলে তাকে শিল্প দপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে খাদ্য দপ্তরকে। রাজ্যে ডালের মিল স্থাপন হলে অর্থ ও সময় দুইয়েরই সাশ্রয় হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী সভায় অভিমত ব্যক্ত করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে কিনা তা দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়মিত তদারকি করতে হবে।

দপ্তরের সচিব শ্রীচৌধুরী সভায় জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারী মাস থেকেই রাজ্যে ‘ওয়ান ন্যাশন ওয়ান কার্ড’ কর্মসূচি পুরোপুরিভাবে কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমানে মাসিক গড়ে ১১০০-১২০০টি বহির্রাজ্যের পরিবার এবং রাজ্যের মাসিক গড়ে ২৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার রেশন কার্ড হোল্ডার এই সুবিধা ভোগ করছেন। তিনি জানান, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজ্যে নতুন ৪০৮টি রেশনশপ খোলার উদ্যোগ নিয়েছে দপ্তর। ইতিমধ্যে ১৫৯টি নতুন রেশনশপ রাজ্যে তৈরি হয়েছে। তিনি আরও জানান, বোধজংনগরে বাৎসরিক ১.২ লক্ষ মেট্রিকটন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি নতুন এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে যা শীঘ্রই চালু করা হবে।

সভায় দপ্তরের সচিব আরও জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত মোট ৯৬ হাজার ২৩৬ মেট্রিকটন ধান ন্যূনতম সহায়কমূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে। তাতে মোট ১৭৭ কোটি ৯ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। এরফলে উপকৃত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৩০০ জন কৃষক। তিনি জানান, করোনা অতিমারির সময়ে চিফ মিনিস্টার কোভিড- ১৯ স্পেশাল রিলিফ প্রকল্পে মোট ৬ লক্ষ ১৯ হাজার পরিবারে ১,০০০ টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও এই প্রকল্পে ৭ লক্ষ ১৩ হাজার পরিবারে বিনামূল্যে খাদ্য প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। তাতে মোট ৭১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। খাদ্য সচিব সভায় আরও জানান, রাজ্যের গ্রাহকদের সর্বোত্তম সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে রাজ্যে ‘দ্য কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ২০১৯ কার্যকর করা হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে ৫টি ভোক্তা আদালত চালু রয়েছে। এছাড়াও আগরতলায় রয়েছে ১টি স্টেট কমিশন এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা, ধলাই জেলা এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলায় রয়েছে ৪টি ডিস্ট্রিক্ট কমিশন।

পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ভোক্তাদের গুণগতমানের পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে খাদ্য দপ্তর বিভিন্ন বিষয়ে সফলতা অর্জন করেছে। সেই সাফল্যগুলিকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার জন্য দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে হবে। পর্যালোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, মুখ্যসচিব কুমার অলক, খাদ্য দপ্তরের অধিকর্তা তপন দাস সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *