করিমগঞ্জ (অসম), ৬ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে রাজ্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। বিশেষ করে রাজ্যের মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এক নবদিগন্তের যাত্রা শুরু করেছেন। এতদিন ঋণমেলার আয়োজন করা হত। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা প্রথমবারের মতো ঋণমুক্তি মেলার আয়োজন করে এক বিরল নজির স্থাপন করেছেন। আসাম মাইক্রো ফাইনান্স উৎসাহ ও সহায়তা প্রকল্প ২০২১-এর শুভারম্ভ করে আজ রবিবার করিমগঞ্জে কথাগুলো বলেন রাজ্যের বন ও পরিবেশ, আবগারি ও মৎস্য দফতরের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য।
জেলাশাসক মৃদুল যাদবের পৌরোহিত্যে করিমগঞ্জ কলেজের মাঠে এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এক সভায় বনমন্ত্রী আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের মাত্র আট মাস হয়েছে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই নির্বাচনে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছে সরকার। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মাইক্রো ফাইনান্স থেকে রাজ্যে র মহিলারা যে ঋণ নিয়েছিলেন, তা পরিশোধ করতে রাজ্য সরকার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, রাজ্যেের ২৪ লক্ষ মহিলাকে ঋণমুক্তির জন্যই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অসম সরকার। এ জন্য নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী মহিলাদের ২৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হবে। এদিন করিমগঞ্জে ৪ হাজার সুবিধাভোগী মহিলার মধ্যে চেক বণ্টন করা হয়েছে। জেলায় মোট ৩২,৪৭৬ জন নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী মহিলাকে পর্যায়ক্রমে চেক দেওয়া হবে। করোনা সংক্রমণের প্রতি লক্ষ্য রেখে আজ সবাইকে ডাকা হয়নি। বাকিদের নিজ নিজ সংশ্লিষ্ট ব্লকের মাধ্যমে চেক প্রদান করা হবে।
বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য মুখ্যপমন্ত্রী ড. শর্মার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এই ঋণ পরিশোধ করতে রাজ্য সরকার ৩৮টি মাইক্রো ফাইনান্স কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজ্যে অ-বিজেপি সরকারের কার্যকালে শুধু দুর্নীতি, স্বজন-পোষণ আর আত্মসাতের রাজনীতি চলছিল। মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে অ-বিজেপি কোনও সরকারই উদ্যোগ নেয়নি।
২০১৬ সালে রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রকৃতার্থে রাজ্যের মা-বোনদের স্বাবলম্বী করে তুলতে নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগী হয়েছে। বিজেপি পরিচালিত সরকারের দ্বিতীয় কার্যকালেও মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সরকার রাজ্যের ঋণগ্রস্ত মহিলাদের ঋণমুক্ত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। মাইক্রো ফাইনান্স থেকে ঋণ নিয়ে যাঁরা নিয়মিত ঋণের কিস্তি ফেরাতে পারছেন না, বা যাঁরা কিস্তি দিতে অপরাগ, সেই সকল ঋণগ্রস্ত মহিলাদের আশ্বস্ত করে মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেন, তিনটি ক্যাটাগরিতে ঋণ পরিশোধ করার ব্যলবস্থা করেছে সরকার। আগামীতে তাঁদের জন্যও মুখ্যমন্ত্রী বিকল্প ব্যবস্থার চিন্তাভাবনা করছেন। বিজেপি কথা দিয়ে কথা রাখতে বদ্ধপরিকর।
অরুণোদয় সহ পাঁচ কেজি করে চাল সরকার দিয়ে যাচ্ছে। তিনি করোনা মোকাবিলায় নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে বলেন, আমেরিকা, ইতালি সহ চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশ অসহায়ের মতো মৃতদেহ গণকবর দিতে বাধ্য হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সমগ্র ভারতে এবং মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে অসমে শক্ত হাতে করোনা অতিমারির সঙ্গে মোকাবিলা করে জয় পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কোভিডের ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শুধু দেশের জনগণের প্রাণ রক্ষা করা নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কোভিড ভ্যাকসিন দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অথচ ম্যালেরিয়া রোগের জন্য সামান্য কুইনান ট্যাবলেট তৈরি করতে বিশ বছর লেগেছিল বলেও আজকের সভায় পূর্বতন সরকারকে কটাক্ষ করেন মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। তিনি বলেন, এ নিয়ে বিরোধীরা অনেক অপপ্রচার করেছে। কিন্তু দেশের সচেতন নাগরিক কোনও অপপ্রচারে কান দেননি। দেশের জনগণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর ভরসা রেখে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এ জন্য এখন দেশর মানুষ সুরক্ষিত। প্রায় সকলেই দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে সুরক্ষিত রয়েছেন। এখন চলছে বুস্টার ডোজের পালা। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের মধ্যে একটি জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও, বিনামূল্যে সকলকে ভ্যাকসিন প্রদান করে প্রধানমন্ত্রী এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন মন্ত্রী পরিমল।
আজকের সভায় প্রসঙ্গক্রমে মন্ত্রী পুরসভা নির্বাচনে বুঝে-শুনে ভোট দিতে নাগরিকদের প্রতি আবেদন জানান। সমাজ ও রাষ্ট্রের হিতে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী শুক্লবৈদ্য। আজকের অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল বলেন, ইলেকশন মেনিফেস্টোয় প্রদত্ত প্রতিটি প্রতিশ্রুতি পর্যায়ক্রমে পূরণ করে চলছে বিজেপি সরকার। নির্বাচনী প্রচার অভিযানে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা কথা দিয়েছিলেন, বিজেপি সরকার গঠন করলে মাইক্রো ফাইনান্স ঋণ পরিশোধে রাজ্যের মহিলাদের সহায়তা করবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী মাইক্রো ফাইনান্স থেকে ঋণ নিয়ে যে সকল মহিলা ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করেছেন, তাঁদের হাতে পঁচিশ হাজার টাকার চেক তুলে দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। করোনাকালেও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা পরিস্থিতির শিকার অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। করোনা সংকটের সময় জনতার পাশে দাঁড়িয়ে সমগ্র দেশের মধ্যে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
কৃষ্ণেন্দু আরও বলেন, প্রতিটি মুহূর্তে জনগণের সেবায় নিয়োজিত মুখ্যমন্ত্রী। সাধারণ জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়িয়ে সমগ্র দেশের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা। মুখ্যমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের অন্যান্য উন্নত রাজ্যের সঙ্গে অসমের নামও উচ্চারিত হচ্ছে, বলেন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল।
জেলা বিজেপি সভাপতি প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্মের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, ২০১৬ সালে সর্বানন্দ সনোয়ালের নেতৃত্বে অসমে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই রাজ্যে উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। দলের দ্বিতীয় কার্যকালে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে উন্নয়নের ঘোড়া দ্বিগুণ গতিতে ছুটছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজ্যের প্রায় ৩৩ হাজার মহিলাকে ঋণমুক্ত করার এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। রাজ্যের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মার ভুয়সী প্রশংসা করেন জেলা বিজেপি সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য। রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত এই অর্থের সদ্ব্যবহার করতে উপস্থিত সকল মহিলার প্রতি আবেদন রাখেন তিনি।
এদিনের অনুষ্ঠানে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য পেশ করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা প্রাক্তন বিধায়ক ড. সুখেন্দুশেখর দত্ত, বিধায়ক বিজয় মালাকার, বিধায়ক আব্দুল আজিজ, শহর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দেবব্রত সাহা, প্রাক্তন বিধায়ক প্রণব নাথ, জেলা তফশিল উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ দাস প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক রিন্টু বড়ো ও বিপুল দাস, প্রাক্তন পুরনেত্রী অঞ্জনা রায়, বিজেপি নেতা দীপক দেব সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিকগণ।