নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ নভেম্বর৷৷ রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশের পাশাপাশি ডম্বর জলাশয় সংলগ মানুষের আর্থসামাজিক মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে নারকেল কু’ ও ডম্বর জলাশয়৷ এর ফলে আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের রোজগার সুুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুচ্ছ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ আজ ডম্বর হেলিপ্যাডের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ হেলিপ্যাড উদ্বোধন করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী আজ অত্যাধুনিক জলযান চালিয়ে ডম্বর জলাশয়ের প্রাক’তিক শোভা উপভোগ করেন৷ নারিকেলকুঞ্জে চালু হতে চলা বিভিন্ন পরিষেবা ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন রূপরেখা সম্পর্কেও তিনি অবহিত হন৷ এরপর স্থানীয় শিল্পীদের দ্বারা পরিবেশিত ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য ও সাংস্ক’তিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, তুলনামূলক অল্প সময়ের মধ্যে আর্থসামাজিক মান উন্নয়নে পর্যটন কেন্দ্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ আর সেই লক্ষ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে রাজ্য সরকার৷ ডম্বর জলাশয়কে অত্যাধুনিক পরিষেবা ও সুুবিধাযুক্ত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গুচ্ছ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে৷ এসমস্ত কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে এই এলাকার প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের রোজগার সুুযোগ তৈরী হবে৷ এখানে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে তেইশটি লগ হাট নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ চলছে৷ ডম্বরে হেলিকপ্ঢার পরিষেবা চালু হওয়ায় পর্যটকদের এই পর্যটন কেন্দ্রের প্রতি আরও বেশি আক’ষ্ট করবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের আরও প্রায় আটটি পর্যটন কেন্দ্রে হেলিপ্যাড নির্মাণের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে৷ এই মর্মে সবুজসংকেত মিললেই আটটি হেলিপ্যাড নির্মাণে আনুমাণিক ব্যয় হবে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা৷ রাজ্যের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলির প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে৷ তার পাশাপাশি কৈলাসহর বিমানবন্দরটি চালু করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ রাজ্যে শুরু হতে চলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সুুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঢাকা, চিটাগাং ও পরবর্তী সময়ে থাইল্যাণ্ড সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিমান পরিষেবা সূচনা করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার৷ ফলে বিদেশি পর্যটকদের রাজ্যমুখী হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে৷ স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের অর্থে ও পর্যটন কেন্দ্র বিকাশে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে৷ এই পর্যটন কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে এই অ’লের মানুষের জীবন-জীবিকার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার৷ যার মাধ্যমে পর্যটন উপযোগী বিভিন্ন ছোট মাঝারি ব্যবসায় যুক্ত হতে পারেন এই অ’লের মানুষ৷
ডম্বর জলাশয় ও নারকেলকু’কে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতে সমস্ত রকমের প্রয়াস নেবে রাজ্য সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ডম্বর জলাশয়ের পাঁচটি ছোট ছোট দ্বীপ চিহ্ণিত করে পর্যটন নির্ভর অত্যাধুনিক বিনোদনমূলক পরিষেবা আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এই দ্বীপগুলিতে থাকবে অ্যাডভে’ার ট্যরিজম, এয়ার বেলুন, অত্যাধুনিক জলযান, প্যারাসেইলিং, এয়ার হট বেলুন, জিপ লাইন, দুটি দ্বীপের মধ্যে ঝুলন্ত সেতু, রেস্তোরা, বাচ্চাদের মনোর’নের ক্ষেত্র, ডম্বর হাট, ফুলের বাগান, পিকনিক স্পট, মুক্ত প্রেক্ষাগৃহ, স্যভেনির শপ সহ পর্যটন নির্ভর অন্যান্য অত্যাধুনিক পরিষেবা থাকবে৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে মেলে ধরতে গুচ্ছ পরিকল্পনা রূপায়িত হচ্ছে৷ রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলির বিকাশ, প্রচার এবং প্রসারের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ যত বেশি করে পর্যটকরা রাজ্যমুখী হবে ততই রাজ্যের পরিচিতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে৷ নারিকেলকু’ হিসেবে পরিচিত জায়গাটির পুরনো গরিমা ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যেই উন্নত মানের ৪০০ নারকেলের চারা রোপন করা হয়েছে৷ পর্যটকদের যাতায়াতের সুুবিধার্থে এবং স্বাচ্ছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার৷ উদ্যান দপ্তরের মাধ্যমে এই অ’লের সৌন্দর্যায়ণ এবং ফুল এবং সৌন্দর্য বর্ধক বাগিচা তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ পর্যটনকে একটি শিল্প হিসেবে নিয়ে এর মাধ্যমে আর্থিক সমৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি৷ মন্ত্রী আরও বলেন, নৌকা প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে মানুষদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এই ভবনায় যুক্ত করা হচ্ছে সাংস্ক’তিক অনুষ্ঠানও৷ পর্যটন নির্ভর আধুনিক পরিষেবা যুক্ত করা লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা বলেন, ডম্বর হেলিপ্যাড এই পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে৷ পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে৷ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা সংযোজনের বিষয়ে কর্ত’পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি৷ এর মধ্যে অন্যতম হলো ছবিমুড়া, ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির সহ এই ডম্বর পর্যটন কেন্দ্রকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা৷ এই অ’লের অনেক যুবক যুবতীরা উচ্চশিক্ষিত৷ তাদের রোজগার সৃষ্টি এবং এ কেন্দ্রগুলোতে কিভাবে তাদের যুক্ত করা যায় এই বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক পরিমল দেববর্মা, বিধায়ক ধন’য় ত্রিপুরা, এমডিসি ভূমিকানন্দ রিয়াং, পর্যটন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, ধলাই জেলার জেলাশাসক জি এম রতিলাল, পুলিশ সুুপার প্রমুখ৷