নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ আগস্ট৷৷ রাজ্যে তৃণমূলের আস্ফালনে বিজেপির ‘‘বিদ্রোহী’’ শিবিরের চাপের রাজনীতির কৌশলী চাল এবার প্রকাশ্যে শুরু হয়েছে৷ বিজেপির বিদ্রোহী শিবির আজ তৃণমূলে যোগদানের জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে সরকার ও দলের আচরণে অসন্তোষ নিয়ে আগরতলায় তুলসিবতী বিদ্যালয় মিলনায়তনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে৷ নেতৃত্বে রয়েছেন সুদীপ রায় বর্মণ৷ তবে আজ অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে, উপ-নির্বাচনের ঝুকি এড়িয়ে চাপের রাজনীতিতেই সিলমোহর দিয়েছেন বিদ্রোহী বিধায়করা৷ বিজেপি অবশ্য বিদ্রোহী বিধায়কদের কৌশলী চালে অনেকটাই অস্বস্তিতে রয়েছে তা আরো স্পষ্ট হয়েছে আগামীকাল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রাজ্য সফরকে ঘিরে৷ তবে, বিদ্রোহীদের দর কষাকষি সামলে বিজেপি ঘর গুছানোর কাজ দ্রুত করতে চাইছে বলেই মনে হচ্ছে৷
রাজ্যে সরকার গঠনের আগে থেকেই সুদীপপন্থীদের সাথে মনোমালিন্য ছিল বিজেপির একাধিক প্রদেশ নেতৃত্বের৷ হাজারো আপত্তি সত্ত্বেও সরকার প্রতিষ্ঠায় আপোষ করেছেন উভয় শিবির৷ তবে, সরকার গঠনের পরও মতানৈক্য দূর হয়নি৷ দিন যত গড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সাথে সুদীপ রায় বর্মনের দুরত্ব ততোই বেড়েছে৷ পরিণাম রাজ্যে বিজেপিতে বিদ্রোহী শিবিরের জন্ম হয়েছে৷ দলের একাধিক বিধায়ক বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ মন্ত্রিত্ব হারানোর পর থেকে সুদীপ রায় বর্মণ অনেকটা বিরোধী দলের নেতৃত্বের মতোই আচরণ শুরু করেছেন৷ সরকারের নানা অনিয়ম নিয়ে বারে বারেই তিনি সোচ্চার হয়েছেন৷
এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয় দফায় সরকার গঠনের পর থেকে ত্রিপুরার দিকে তাঁরা মনোনিবেশ করেছেন৷ ঘন ঘন তৃণমূল নেতৃত্বের রাজ্য সফরে একদিকে রাজনীতির ময়দান গরম হয়েছে, অন্যদিকে বিজেপি বিদ্রোহী বিধায়কদের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে জল্পনা বেড়েছে৷ সম্প্রতি সুদীপপন্থীরা কলকাতায় গিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন, এমন খবর মুখরোচক হিসেবে দারুন সাড়া ফেলেছে৷ সূত্রের দাবি, সুদীপ বাবুরা তৃণমূল নেতৃত্বের সাথে দর কষাকষি করছেন৷ কিন্ত, বিষয়টি সম্পুর্ন গুজব বলে সুদীপ রায় বর্মণ দাবি করেছেন৷
তবে, গত কয়েকদিন ধরেই বিদ্রোহী বিধায়করা চাপের রাজনীতির প্রশ্ণে ঘুটি সাজানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন৷ ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে এখনো দেড় বছর বাকি রয়েছে৷ ফলে, এখনই দলবদল করে দলত্যাগ বিরোধী আইনের গ্যারাকল থেকে নিরাপদে থাকতে চাইছেন সকলেই৷ তাই, চাপের রাজনীতির কৌশল হিসেবে দলে থেকেই নানা বিষয়ে বিরোধিতা জারি রাখবেন তাঁরা৷ আজ আগরতলায় তুলসিবতী বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে এক সভার অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ওই সভায় মূলত বিজেপির প্রতি অসন্তষ্ট নেতা, কর্মী ও বিধায়কদের উপস্থিতি ছিল বলে সুদীপ রায় বর্মণ জানিয়েছেন৷ তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা, বিধায়ক আশীষ দাস, বিধায়ক দিবা চন্দ্র রাঙ্খল সহ বিজেপির বহু শীর্ষ ও পুরনো নেতৃত্ব৷
এদিন সুদীপ বাবু সাফ জানিয়েছেন, তৃণমূলের নেতৃত্বের সাথে তাঁদের যোগাযোগ হয়নি৷ ফলে, তৃণমূলে যোগদানের প্রশ্ণই আসেনা৷ তবে, দল ও সরকারের কাজকর্মে অসন্তষ্ট বিজেপি নেতা, কর্মী ও বিধায়করা আজ এখানে মন খুলে কথা বলতে এসেছেন৷ কারণ, তাঁরা কথা বলতে পারছেন না৷ দল ও সরকার আমাদের কথা শুনছে না৷ তাঁর কথায়, শক্তিশালী দল গঠনে দুর্বলতা চিহ্ণিত করা খুবই প্রয়োজন৷ ভুল-ত্রুটি খুঁজে বের করে সংশোধন করলে তবেই বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি হবে৷ কিন্ত, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরামর্শ সত্ত্বেও দল আমাদের কথা শুনতে চাইছে না৷
তিনি বলেন, বহু পুরনো নেতৃবৃন্দ রয়েছেন, তাঁদেরকেও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না৷ এই পরিস্থিতিতে আজকের সভা খুবই তাতর্যপুর্ন বলে তিনি দাবি করেন৷ তাঁর বক্তব্য, আজকের সভার নির্যাস দলের রাজ্য কমিটি এবং বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হবে৷ তাতে তিনি বিশ্বাস করেন, দল নিশ্চয় সংশোধিত হবে৷ আজকের এই সভা থেকে বিজেপির উপর চাপ তৈরির কৌশল আরও দৃঢ় করেছে বিদ্রোহী শিবির৷ তাছাড়া, আগামীকাল বিজেপির রাজ্য প্রভারী সহ চারজন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সফরকে ঘিরে দলের অস্বস্তি মেপে নেওয়া সহজ হচ্ছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ বিজেপি প্রদেশ কমিটি সুত্রে দাবি, আগামীকাল দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সাইকিয়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক সম্পাদক সংগঠন অজয় জাম্বুয়াল, রাজ্য প্রভারী বিনোদ সোনকর এবং ত্রিপুরা ও অসমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সংগঠন ফনিন্দ্র নাথ শর্মা রাজ্যে আসছেন৷ তাঁরা ৬ সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে টানা থাকবেন৷

