নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ আগস্ট।। ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ ও ত্রিপুরার পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০তম বর্ষ উদযাপন নিয়ে আজ সচিবালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় রাজ্যে আজাদি কা অমৃত মহোৎসব পালনে দু’বছরব্যাপী কর্মসূচিতে রাজ্যের উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যসচিব কুমার অলক। তিনি উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ এবং ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০তম বর্ষ উদযাপনের রূপরেখা প্রণয়ন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। মুখ্যসচিব কুমার অলকের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত এই সভায় রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক ভি এস যাদব, বন দপ্তরের প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক ড. ডি কে শর্মা, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ডা. পি কে গোয়েল সহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিব ও সচিবগণ এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। সভায় তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উদযাপনের প্রস্তাবিত রূপরেখা তুলে ধরা হয়। সভায় প্রস্তাবিত রূপরেখা নিয়ে আলোচনায় মুখ্যসচিব আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের অনুষ্ঠানমালায় ‘ক্রমবর্ধমান প্রগতির পথে ত্রিপুরাকে’ তুলে ধরার কথা বলেন।
এদিন মুখ্যসচিব বলেন, সারা দেশের সাথে ত্রিপুরায়ও ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অঙ্গ হিসেবে নির্দিষ্ট কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন বড় আকারের কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালনে ৫টি মূল থীম যথাক্রমে স্বাধীনতা সংগ্রাম, ৭৫ বর্ষে সাফল্য, ৭৫ বর্ষে সংকল্প, ৭৫ বর্ষে ধারণা, ৭৫ বর্ষে কার্যক্রম নির্ধারিত রয়েছে। এর উপর ভিত্তি করেই কর্মসূচি গ্রহণ করা আবশ্যক। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়নমূলক কর্মসূচিগুলিকে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উদযাপনের একই ছাদের আওতায় নিয়ে আসতে তিনি পরামর্শ দেন।
মুখ্যসচিব বলেন, আজাদি কা অমৃত মহোৎসব পালনে গৃহিত বিভিন্ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সমস্ত দপ্তরকেও তাদের নিজস্ব উন্নয়নশীল ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসা দরকার। উপরোক্ত ভাবনাগুলির উপর ভিত্তি করেই কর্মসূচি গ্রহণে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। উজ্জ্বয়ক্ত প্রাসাদের মিউজিয়ামে স্বাধীনতা সংগ্রামের থীমের উপর ভিত্তি করে রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের একটি গ্যালারী তৈরি সহ প্রদর্শনী আয়োজনের পরামর্শ দেন তিনি। সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনীর উপর পুস্তিকা প্রকাশের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি। পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে জড়িত রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস জানার জন্য তিনি রাজ্যের ইতিহাসবিদদের সাহায্য নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। এছাড়াও বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য স্থানে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূর্তি বসানো সহ ত্রিপুরার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত এমন প্রখ্যাত ব্যক্তিদের নামে বিদ্যালয়ের নামাকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলিও সভায় আলোচনাকালে প্রাধান্য পেয়েছে।
এদিন মুখ্যসচিব ত্রিপুরার বিখ্যাত সুরকার, কালজয়ী শিল্পী শচীন দেববর্মণের জন্মজয়ন্তী বড় আকারে আয়োজনের উদ্যোগের কথা বলেন। তাঁর মতে এখন থেকেই এর পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে অনুষ্ঠানে খ্যাতনামা শিল্পীদের আমন্ত্রণের বিষয়টি দেখার জন্যও তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেন তিনি। এদিনের সভায় মুখ্যসচিব ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্য প্রাপ্তির ৫০তম বর্ষ উদযাপনের জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর কর্তৃক প্রস্তাবিত বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত হন। এই দিবসটিকে বড় আকারে পালন করার জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা নিতে তিনি পরামর্শ দেন। এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের অঙ্গ হিসেবে ট্যুরিজম ফেস্ট, প্রদর্শনী, হাফম্যারাথন আয়োজন সহ স্ট্যাম্প রিলিজ, উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদে গ্যালারী, নির্দিষ্ট জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি বা শিলান্যাসের মতো অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয় সভার আলোচনায় উঠে আসে৷
সভায় তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব প্রশান্ত কুমার গোয়েল রাজ্যে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালনের অঙ্গ হিসেবে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর কর্তৃক গৃহিত বিভিন্ন কর্মসূচিগুলি সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, আজাদি কা অমৃত মহোৎসব একটি দু’বছরের স্মারক উদ্যোগ। চলতি বছরের ১২ মার্চ থেকে ত্রিপুরায় এই কর্মসূচির সূচনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরায় এই মহোৎসব পালনের অঙ্গ হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর প্রদর্শনী, যোগা প্রদর্শন সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সভায় তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব আজাদি কা অমৃত মহোৎসব পালনের মূল পাচটি থীমের বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন এবং রাজ্যে এই কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে তিনি সমস্ত দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরা ২০২২ সালে পূর্ণরাজ্য দিবসের ৫০ বছর পূর্তি পালন করবে। এই দিবসটি পালনে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর কর্তৃক প্রস্তাবিত বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কেও তিনি সভায় অবহিত করেন।