ত্রিপুরায় ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচন : প্রস্তুতি শুরু, পাখির চোখ তপশিলি জাতি ও জনজাতি ভোট ব্যাঙ্ক

আগরতলা, ১২ জুলাই (হি. স.) : সম্ভবত, ২০২৩ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ঘুঁটি সাজানো শুরু হয়ে গেছে। তাতে, অবশ্যই পাখির চোখ তপশিলি জাতি ও জনজাতি ভোট ব্যাঙ্ক। কারণ, ত্রিপুরায় এরই মধ্যে মন্ত্রিদের আনাগুনা শুরু হয়ে গেছে। রাজনীতির অলিন্দে কান পাতলেই শুনা যাচ্ছে, তপশিলি জাতি কল্যাণ মন্ত্রকের রাষ্ট্র মন্ত্রী এবং জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রীর রাজ্য সফর মূলত বিধানসভা নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতির চিত্রপট তৈরির নিদর্শন মাত্র। অবশ্য, সংখ্যালঘু শ্রেণীকেও বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, সম্প্রতি বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সর্বভারতীয় নেতা ত্রিপুরা সফর করে গেছেন।


মনে করা অস্বাভাবিক নয়, বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক চিলতে জমি বিরোধীদের ছাড়তে চাইছেন না। তাই, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিদের রাজ্য সফরের মাধ্যমে জনতার ক্ষোভ-বিক্ষোভ, আক্ষেপ মেপে নিতে চাইছেন তাঁরা। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় যোজনা ত্রিপুরার প্রান্তিক অংশের জনগণের কাছে পৌচেছে কিনা তাও অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে।


২০১৮ সালে দীর্ঘ ২৫ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে পরাজিত করে ত্রিপুরায় ক্ষমতার মসনদে বসেছে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার। কিন্ত, গত তিন বছরের শাসনের পথ কাঁটায় ভরা ছিল তা রাজ্য নেতৃত্ব এখন উপলব্ধি করতে পারছেন। ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের অন্যতম কান্ডারী ছিল তপশিলি জাতি ও জনজাতি ভোট ব্যাঙ্ক। অধিকাংশ আসনেই বিজেপি-আইপিএফটি জয়ের ধ্বজা উড়াতে পেরেছিল। কিন্ত, এডিসি নির্বাচনে মুখ থুবরে পড়েছে শাসক জোট শরিক আইপিএফটি। শরিক দল হয়েও সদ্য জন্ম নেওয়া তিপ্রা মথার ঝড়ে পাহাড়ে ধুলিস্যাত হয়ে গেছে পৃথক রাজ্যের দাবিদাররা। সেখানে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড জনজাতিদের মন কেড়েছে।


প্রত্যেক নির্বাচনেই দলিত এবং জনজাতি তাস রাজনৈতিক দলগুলির জয়ের রসদ যুগিয়ে থাকে। সেখানে ত্রিপুরায় রাজনৈতিক সমীকরণ ঘনঘন পাল্টানো আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য অশনি সংকেত হতে পারে, এমনটাই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। তাই, তপশিলি জাতি ও জনজাতিদের ভোট নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রায় দেড় বছর বাকি থাকতেই সলতে পাকাতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপি।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিদের ত্রিপুরায় ঘনঘন সফর লক্ষ্য করা যাবে। যার সূচনা তপশিলি জাতি রাষ্ট্র মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এবং জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার সফরের মাধ্যমে সূচনা হয়েছে বলে মনে করা যাচ্ছে। ত্রিপুরা সফরে এসে গত শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল পদ্মশ্রী সত্য রাম রিয়াং-র সাথে দেখা করেছেন। তাঁর খোজ খবর নিয়েছেন। তিনি মারওয়ারী নেতাদের সাথের আগরতলায় বৈঠক করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সেরেছেন। আজ তিনি সারা ভারত সাফাই মজদুর সংঘের পদাধিকারী তনুজ সাহার বাসভবনে তাঁর সাথে দেখা করেছেন এবং তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সৌজন্যমূলক সাক্ষাতকারে আজ দুপুরে তিনি বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যানী রায়ের সাথেও দেখা করেছেন। তাঁর সাথে সাংগঠনিক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।


এদিকে, কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা আজ ত্রিপুরা সফরে এসে মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেছেন। আগরতলায় ফেরার পথে গোমতি জেলায় কিল্লা ব্লকে একলব্য মডেল স্কুল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া স্ব-সহায়ক দল পরিচালিত নুখুং হাম্থারাই ভান ধান কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন। আগরতলায় ফিরে তিনি বিভিন্ন কেন্দ্রীয় যোজনার পর্যালোচনা করেছেন এবং জনজাতি কল্যানে সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে গেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার জনজাতিদের জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী যোজনা এনেছে এবং আগামী দিনে আরো আনবে।


সবচেয়ে তাত্পর্যের বিষয় হল, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বেই আগামী বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তাই চাইছেন। তবে, সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যে নতুন সংগঠন মন্ত্রী কিশোর বর্মনের নিযুক্তি ইঙ্গিত দিচ্ছে ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এক চিলতে জমিও ছাড়তে চাইছে না। আবারও একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিধানসভায় অস্তিত্ব বজায় রাখার পণ নিয়েছে বিজেপি, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *