নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ জুলাই৷৷ ঋতিকা৷ বয়স মাত্র ২ মাস ১৫ দিন৷ ফুটফুটে শিশুটি মায়ের কোল আলো করে এলেও তার এই পথ এতোটাও মসৃণ ছিলো না৷ মা মারি ত্রিপুরা গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন৷ তার বয়স ছিলো ১৭ বছর৷ উচ্চ ঝঁকিপূর্ণ সমস্যার মধ্যে একটি প্রধান কারণ ছিলো বয়স৷ তার উপর ছিলো রক্তাল্পতার সমস্যা৷ প্রধানমন্ত্রী মাত’ত্ব সুুরক্ষা অভিযানের অন্তর্গত নিয়মিত প্রাক প্রসব পরিষেবা সেইসঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেলেও সময়ের অনেক আগেই তার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়৷ ২৪ এপ্রিল দক্ষিণ জেলার কলাছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৮ মাসের অন্ত:সত্বা অবস্থাতেই ২ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের এক কন্যা শিশুর জন্ম দেন৷
হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসার পর কমিউনিটি হেলথ অফিসার অরিন্দম দেব এবং আশাকর্মী মমতা ত্রিপুরা বাড়িতে গিয়ে নবজাত শিশুটির নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে থাকেন৷ কিন্তু শিশুটির ওজন প্রতিনিয়তই কমছিলো এবং শিশুর দেহের তাপমাত্রাও বেড়েই চলছিলো৷ একটা সময় শিশুটির ওজন কমে ১ কিলো ৯০০ গ্রাম হয়ে যায় এবং তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট৷ শিশুর অবস্থা সঙ্কটজনক দেখে কমিউনিটি হেলথ অফিসার অরিন্দম দেব তাকে কলাছড়া হাসপাতালে নিয়ে যান৷ কিন্তু সেখান থেকেও ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক শিশুটিকে শান্তিরবাজার জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেন৷ পেশায় রাবার চাষি শিশুটির বাবা জীবনমোহন ত্রিপুরা কোনও রকমে দিন গুজরান করেন৷ শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করার সামর্থ তার নেই৷ অগত্যা অসহায় বাবা-মা শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে৷ শিশুটির অবস্থা ক্রমেই অবনতি হতে থাকে৷
বাবা-মা হাল ছেড়ে দিলেও হাল ছাড়েননি কমিউনিটি হেলথ অফিসার অরিন্দম দেব৷ শিশুটিকে সুুস্থ করার বিষয়টি তিনি একটি চ্যালে’ হিসেবেই নিলেন৷ বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত শিশুটির সেবা করতে থাকেন৷ শিশুটির দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকায় তিনি নিয়মিত কোল্ড স্প’ করতে থাকেন৷ দিনের পর দিন শিশুটি দুর্বল হয়ে পড়ে মায়ের দুধও সঠিকভাবে খেতে পারছিলো না৷ একটা সময় শিশুটির ওজন কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১ কেজি ৫০০ গ্রাম৷ কমিউনিটি হেলথ অফিসার অরিন্দম দেব তখন মায়ের দুধ বাটিতে নিয়ে চামচ দিয়ে শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে থাকেন৷ সেই সাথে মায়ের বুকের সাথে শিশুকে আগলে রাখার পদ্ধতি প্রয়োগ করতে থাকেন৷ এইভাবেই প্রতিনিয়ত বাড়িতে গিয়ে কমিউনিটি হেলথ অফিসার অরিন্দম দেব শিশুটির সেবা করতে থাকেন৷ ধীরে ধীরে শিশুটি সুুস্থ হতে থাকে৷ দেহের তাপমাত্রাও কমে যায়৷ ওজনও বাড়তে থাকে৷ কমিউনিটি হেলথ অফিসার অরিন্দম দেবের পরিচর্যায় শিশুটির ওজন বেড়ে দাঁড়ায় ২ কেজি ৭৫০ গ্রাম৷ শিশুটিকে সুুস্থ মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলেন৷ এখন শিশুটির বয়স ২ মাস ১৫ দিন৷ আর শিশুটির ওজন ৩ কিলো ৭০০ গ্রাম৷ কমিউনিটি হেলথ অফিসার অরিন্দম দেবের উপস্থিত বুদ্ধি, বিশ্বাস, নি:স্বার্থ সেবা আর আন্তরিকতার ফলেই সুুস্থ হয়ে ওঠে শিশুটি৷ মা বাবার অনুরোধে কমিউনিটি হেলথ অফিসার অরিন্দম দেব শিশুটির নাম দিলেন ঋতিকা৷ কমিউনিটি হেলথ অফিসার অরিন্দম দেবের ছোঁয়াতেই প্রাণ ফিরে পেলো ঋতিকা৷ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ত্রিপুরা শাখার পক্ষ থেকে এক প্রেস রিলিজে এই সংবাদ জানানো হয়েছে৷