নিজস্ব প্রতিনিধি, উদয়পুর, ৪ জুন৷৷ উদয়পুরে কোভিড আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর পর সৎকারে নাজেহাল প্রশাসন৷ কোভিড বিধি অনুযায়ী কোন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হলে, রোগী যে জেলায় বসবাস করেন, সেই জেলার কোভিড মহাশশ্মানে রোগীর সৎকারের ব্যবস্থা করতে হবে জেলা প্রশাসনকে৷ সমস্যা দেখা দিয়েছে গোমতি জেলা প্রশাসন এখনো জেলার কোভিড মহাশশ্মান কোথায় হবে – সে জায়গা নির্ধারণে জনগনের বাধার সম্মুখীন হয়ে ফিরতে হচ্ছে প্রশাসনকে৷
গোমতি জেলা প্রশাসন এখনো উপযুক্ত জায়গা নির্ধারণ করে কোভিড মহাশশ্মান তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন- আর এই টানাপোড়েনের মধ্যে যে সকল কোভিড আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হচ্ছে, সমস্যার সম্মুখীন যেমন মৃতের পরিবার হচ্ছে সেরূপ বাদ যাচ্ছেনা জেলা ও সাধারণ প্রশাসন৷ গত সোমবার গোমতি নদী সংলগ্ণ জামজুড়ি গ্রামের পঞ্চায়েতে কোভিড মহাশশ্মান তৈরীর জন্য নির্মান সামগ্রী দিয়ে মহাশশ্মান তৈরি করতে গিয়ে গোমতির ঐ পাড়ে অবস্থিত শালগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শদুয়েক মহিলা পুরুষ শশ্মান তৈরীতে বাঁধা সৃষ্টি করায় বন্ধ হয়ে আছে মহাশশ্মানের নির্মান কাজ৷
সংবাদ সূত্রে জানা যায় জামজুড়ি গ্রামের এই মহাশশ্মান আদৌ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি৷ কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে গত কয়েকদিন ধরে মৃত কোভিড রোগীদের সৎকার করা নিয়ে৷ সমস্যা জেলার শুধু উদয়পুর মহকুমাকে ঘিরে, অমরপুর ও করবুক মহকুমাতে করুনা রোগী মৃত্যু হলে স্থানীয় স্তরে মহাশশ্মানেই মৃত ব্যক্তির সৎকার হচ্ছে৷ গত আট দিন আগে চন্দ্রপুর কোভিড কেয়ার সেন্টারে প্রমথ করোনা রোগী মৃত্যু ঘিরে- অবশেষে দুই জেলার প্রশাসনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আগরতলা বটতলা মহাশ্মশানে সৎকার করা হয়৷ গত ৩১শে মে উদয়পুর গকুলপুর রাঙামাটি এলাকার প্রাক্তন পুলিশ কর্মীর মৃত্যুর পরেও প্রশাসনকে অনেক খোরপোষ পোহাতে হয়েছে- শেষ পর্যন্ত আগরতলা বটতলা মহাশশ্মানেই প্রাক্তন পুলিশ কর্মীর সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়৷ সমস্যা দেখা দিয়েছে আজ উদয়পুর কাকড়াবন ব্লকের জামজুড়ি এলাকায় এক প্রাক্তন পুলিশ কর্মীর হোম আইসোলেশানে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে৷ সন্ধ্যায় হোম আইসোলেশানে মৃত পুলিশ কর্মীর পরিবারের তরফ থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিকট দাবি করেন মৃত ব্যক্তিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৎকারের ব্যবস্থা করা হউক৷
কিন্তু যেহেতু উদয়পুর মহকুমাতে কোন কোভিড মহাশশ্মান নেই তাই কাকড়াবন সাধারণ মহাশশ্মানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৎকারে মৃত পরিবারকে সাহায্য করার আশ্বাস দেওয়া হয়৷ কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় হিন্দু শাস্র মতে পিতা বা মাতার একবার মুখাগ্ণি করা হলে সন্তান শশ্মানে থাকতে পারে না৷ মুখাগ্ণি কাজ হয়ে গেলে ছেলেদের বাড়ি এসে শাস্র মতে রীতি পালনের রীতি প্রচলিত৷ যেহেতু কোভিড মহাশশ্মান তৈরিতে জন সাধারণ বাধা সৃষ্টি করেছেন, তাই মহাশশ্মান না থাকায় কোন স্থায়ী ডোমেরও ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি, তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃত পরিবারের সদস্যদের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে নিজেদের পিতাকে নিজেরাই যেন সৎকার করেন৷সন্ধ্যা থেকে প্রশাসনের চাপের কাছে
মাথানত না করায় মৃত দেহ সৎকারে জটিলতা দেখা দেয়৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন খোদ মহকুমা শাসক অনিরুদ্ধ রায়, কাকড়াবন আর ডি ব্লকের
বি ডি ও অভিজিৎ দাস, মুড়াপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সহ কাকড়াবনের এম ও আই সি৷ শেষ পর্যন্ত চাপে পরে এক প্রকার বাধ্য হয়েই মৃত ব্যক্তির তিন ছেলে পি পি ই পরিধান করে নিজের বাবাকে সৎকারের জন্য কাকড়াবন সাধারণ শশ্মানে নিয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সে করে৷আগে থেকেই কাকড়াবন সাধারণ শশ্মান প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৎকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে রাখেন৷ এখানে কতগুলো প্রশ্ণ দেখা দিয়েছে- উদয়পুর চন্দ্রপুর কোভিড কেয়ার সেন্টারে যাবতীয় সব ব্যবস্থা থাকা স্বত্তেও কেন এলোপ্যাথিক ডাক্তার নিয়োগ করা হয় নি ? এলোপ্যাথিক ডাক্তার না থাকায় অধিকাংশ রোগী হোম আইসোলেশানে থাকার জন্য বন্ড সই দিয়ে বাড়ি চলে আসে- জামজুড়ির আজকের মৃত ব্যক্তিও কিন্তু বন্ড দিয়ে চার দিন আগে বাড়ি এসেছেন৷
প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে নির্জন এলাকায় কোভিড মহাশশ্মান তৈরি করে সরকারী ডোম নিয়োগ করে কোভিড আক্রান্ত মৃত দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা৷ এখানে উল্লেখ থাকে যে জামজুড়িতে মৃত পুলিশ কমীর্র বাড়িতে কিন্তু আরেক জন করোনা আক্রান্ত রোগী আছেন৷ করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ও তার সৎকারে জটিলতা ও বিভ্রান্তি দূর করার উপায় হিসেবে অবিলম্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোভিড মহাশশ্মান তৈরি করতে হবে -তবেই উদয়পুর মহকুমা করোনা আক্রান্ত রোগী ও তার পরিবারের উৎকন্ঠা দূর হবে৷

