মমতা রাজ্যের কাজে আরও বেশি করে লাগাতে চান আলাপনকে

অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ২৯ মে (হি. স.) :  আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে ছাড়বেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতাতেই রেখে তাঁকে আরও বেশি কাজে লাগাতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার তাঁকে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরে কাজে যোগ দেওয়ার লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, আলাপনবাবু সেই নির্দেশ মানবেন না।

আলাপনবাবুর সরকারি কাজের মেয়াদ শেষ হচ্ছে সোমবার। অবসরের পর তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনক্রমে তিন মাস বাড়তি কাজের অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু গতকাল এক বার্তায় কেন্দ্র আলাপনবাবুকে সোমবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরে কাজে যোগ দেওয়ার লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি  তাঁকে মুখ্যসচিব হিসাবেই রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে আইনের পরামর্শও পেয়েছে রাজ্য।

সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব পদে কোনও রাজ্য কাউকে অবসরের পর পুনর্বহাল করতে গেলে নির্দিষ্ট কারণ জানিয়ে কেন্দ্রে আবেদন করতে হয়। মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটি সেই আবেদনের যৌক্তিকতা খতিয়ে অনুমতি দেয়। সেটি ওই নির্দিষ্ট পদের জন্য। ২০১১-র মে মাসে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার সময় মুখ্যসচিব পদে ছিলেন সমর ঘোষ। সে বছর মাঝপর্বে তাঁর অবসরের কথা ছিল। কিন্তু অশান্ত দার্জিলিংয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার পক্রিয়ার উল্লেখ করে তাঁকে ওই পদে পুনর্বহাল করার আবেদন করেন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র সেই দাবি মেনে নেয়। এবারও করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ে রাজ্য প্রশাসনে আলাপনবাবুর গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তাঁকে পুনর্বহাল করার আবেদন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র সেই দাবি মেনে নিয়েছে।

রাজ্যের এক প্রাক্তন আমলা এই প্রতিবেদককে বলেন, “রাজ্য বা কেন্দ্রীয় কর্মী-অফিসারদের বদলি আর মুখ্যসচিবের বদলি এক নয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ক্যাডার সার্ভিসের নিয়মনীতি মানতে হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটি রাজ্যের আবেদনক্রমে আলাপনবাবুকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব-ওএসডি পদে কাজের অনুমতি দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এর অন্যথা হতে পারে না।“ যদিও কেন্দ্রের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৫৪ সালের ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিস (ক্যাডার) রুলস অনুযায়ী ওই নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এই রুলসে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তার ভিত্তিতে কেন্দ্র কোনও আমলাকে ডেকে নিতে পারে।

ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী বারবার আলাপনবাবুর এবং তাঁর কাজের ওপর আস্থা প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে কোনও কারণে আলাপনবাবুকে মুখ্যসচিবের পদে রাখতে না পারলেও আপাতত কোনও বিশেষ পদে তাঁকে রেখে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো দেবেন।

তৃণমূল মহলে এই অবস্থায় ঘুরতে শুরু করেছে একটা প্রশ্ন। আলাপনবাবুর সম্মতিসাপেক্ষে তাঁকে সরাসরি মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। যেমন আনা হয়েছিল অবসর নেওয়া রাজ্যের প্রাক্তন আর এক আমলা মণীশ গুপ্তকে। এ ছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হায়দার আজিজ সফি, রচপাল সিং, সুলতান সিং, অবনী মোহন জোয়ারদার প্রমুখ অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ আইপিএস অফিসারকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় শেষ বিধানসভা ভোটের মুখে অবসর নেওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন আইপিএস অফিসার হুমায়ুন কবীর। ভোটে জেতায় তাঁকে মন্ত্রী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ছয় কেন্দ্রে আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে ভোট হবে। এর মধ্যে ভবানীপুর এবং খড়দহ কেন্দ্র থেকে যথাক্রমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবে শোভনদের চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূল প্রার্থী হওয়ার কথা। দিনহাটা এবং শান্তিপুর থেকে বিজেপি-র দুই সাংসদ বিধানসভা ভোটে জিতলেও তাঁরা বিধায়ক হিসাবে শপথ নেননি।  মুর্শিদাবাদের দুটি বিধানসভা কেন্দ্রেও ভোট হবে। এই চার কেন্দ্রের কোনওটিতে অনায়াসে আলাপনবাবুকে জিতিয়ে আনা সম্ভব।

অর্থাৎ কোনও অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী আলাপনবাবুকে হাতছাড়া করবেন না। কেন্দ্রীয় সরকারের এমন নির্দেশে ফের চরমে পৌঁছেছে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত। তৃণমূলের দাবি, হার মানতে না পেরেই নানারকম ভাবে বাংলার ক্ষতি করার চেষ্টা করে চলেছে বিজেপি সরকার। তাই শোনা যাচ্ছে, চিঠি দিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হতে পারে, আলাপনকে ছাড়া হবে না। আজ মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনেই এ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *