রাজভবনের ফটকে বিক্ষোভ, সিপি-কে কড়া বার্তা রাজ্যপালের

কলকাতা, ১৯ মে (হি.স.):  আবারও চরমে রাজ্যপাল-রাজ্য সরকারের সংঘাত। রাজভবনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনায় এবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। কেন ওরকম হল, দোষীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার বিশদ রিপোর্ট তিনি বুধবার বেলা পাঁচটার মধ্যে রাজভবনে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনারকে। ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও কলকাতা পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে রাজভবনের সামনে অশান্তি হয়, পুলিশ কমিশনারের কাছে সেই জবাব তলব করলেন রাজ্যপাল।

নারদ মামলা নিয়ে গত সোমবার থেকে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। ওই দিন সাতসকালে চেতলার বাড়ি থেকে ফিরহাদ হাকিমকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তারপর একে একে কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন তৃণমূল ও বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় নিজাম প্যালেসে। গ্রেফতারির পর থেকেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। সদ্যই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে তৃতীয়বারের জন্য বাংলার মসনদে বসেছে ঘাসফুল শিবির। মুথ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। শাসকদলের অভিযোগ, পরাজয় মেনে নিতে না পেরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফিরহাদ, মদন, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়দের গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এর ফলে আরও একবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে কাজ করার অভিযোগও উঠেছে। সেই ক্ষোভ থেকে নিজাম প্যালেসের পাশাপাশি ওই দিন রাজভবনের সামনেও বিক্ষোভ দেখান অগণিত তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। মঙ্গলবার আবার এক ব্যক্তি ভেড়ার পাল নিয়ে রাজভবনের সামনে অভিনব প্রতিবাদ করেন।

পরপর দু’দিনের এহেন বিক্ষোভে বেশ বিরক্ত রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। বুধবার সকালে টুইটে এই ঘটনার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজ্যপালের বাসভবন লাগোয়া এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকার কথা। তা সত্ত্বেও কীভাবে কলকাতা পুলিশের উপস্থিতি এমন কাণ্ড ঘটছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ধনকড়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জবাবও তলব করেন তিনি। রাজ্যপাল তাঁর বার্তায় লিখেছেন, আমি লক্ষ্য করেছি সোমবার বিকেলে কলকাতা পুলিশের অধীনে এক বিশাল পুলিশ বাহিনীর সামনে কিছু অযৌক্তিক উপায়ে রাজভবনের উত্তর দিকের ফটকের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করা হয়েছিল। ছোটলোকদের সেই বিক্ষোভ বেলা দেড়টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে। বিশাল পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে তা অব্যাহত থাকে। এই ব্যক্তিরা রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিলেন। রাজ্য প্রধানের মর্যাদাকে অপমান করে অযৌক্তিক স্লোগান দিয়েছিলেন। তারা উত্তর গেটে অবিচ্ছিন্নভাবে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল, উচ্চ-সুরক্ষা রাজ ভবনের নিরাপত্তার হুমকী দিয়েছিল এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। 

এই পুরো বিস্ময়কর পর্ব চলাকালীন ঘটনাস্থলে উপস্থিত উর্ধ্বতন পুলিশ আধিকারিকেরা কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নেননি। আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে লঙ্ঘন করা হয়েছিল। এটি কোনও গোপন বিষয় নয় যে রাজভবন চত্বরের চারপাশের পুরো অঞ্চলটি আপনার নিষেধাজ্ঞাবদ্ধ আদেশের আওতাধীন রয়েছে। ভারতীয় দন্ডবিধির ১৪৪ ধারা ওই অঞ্চলে জারি, তবে এই তাৎক্ষণিক ক্ষেত্রে, ঘটনাস্থলে অন্যায় কাজ কেবল এক বিশাল দলকেই করার অনুমতি দেওয়া হয়। দু’ঘন্টার উপরে সেখানে বিশৃঙ্খলা চলে। রাজ্যপ্রধান গুরুতরভাবে আপত্তি জানান। চূড়ান্তভাবে কলকাতায় পুলিশ কমিশনারকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করতে বাধ্য করা হন। মঙ্গলবার বেলা তিনটে নাগাদ কীভাবে এক ব্যক্তি একপাল ভেড়া রাজভবনের উত্তর ফটকের সামনে এনে জড়ো করল, পুলিশ কমিশনারের কাছে সেই জবাবও চেয়েছেন রাজ্যপাল। বলেছেন, রাজভবনের সামনে এই সব ঘটনাবলীর ভিডিও ক্লিপিং সিপি-কেও পাঠানো হয়েছে। কেন ওরকম স্থানে এ রকম ঘটনা ঘটল, তার পুরো রিপোর্ট যেন বুধবার বেলা ৫টার মধ্যে রাজভবনে পাঠানো হয়। অভিযুক্ত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, সিপি-র কাছে সেটিও জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল।