অশোক সেনগুপ্ত
কলকাতা, ২ এপ্রিল (হি. স.) ; দাম বাড়ায় কমেছে রান্নার গ্যাসের চাহিদা। এর ফলে ভোটের মরশুমে ফাঁপড়ে পড়েছেন উৎপাদক সংস্থা থেকে ডিস্ট্রিবিউটার, সরবরাহকারী ঠিকাদারেরাও।
সম্প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে পশ্চিমবাংলায় মার্চে প্রায় ১০ শতাংশ বিক্রি কমেছে সিলিন্ডারের। ডিলারদের মতে, ক্রমবর্ধমান দাম বৃদ্ধির কারণে সিলিন্ডারের বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডেন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিজন বিহারি বিশ্বাস জানিয়েছেন, এই হার জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কমতে শুরু করেছে।
২০১৪-তে রান্নার গ্যাসের প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম ছিল ৪১৬ টাকা। গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের মে মাসে তা বেড়ে হয় ৫৮৫ টাকা। দশ মাসে ৪৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪৫ টাকা। শুক্রবার ১০ টাকা কমে হয়েছে ৮৩৫ টাকা। বিজনবাবু জানান, ‘আমরা গত কয়েক দশক ধরে এই ধরনের ঘাটতি দেখিনি, সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধির কারণে মূলত পরিবারগুলি সিলিন্ডারের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে।’’ এই দাম বৃদ্ধি ডিসেম্বর মাসে ১.৫ শতাংশ, এবং জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যথাক্রমে ২.৫ ও ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখ্য, সিলিন্ডারের দাম ৪ ফেব্রুয়ারিতে ২৫৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাম দাঁড়িয়েছিল ৭২০.৫০ টাকা থেকে ৭৪৫.৫০ টাকা। এরপর ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে ৫০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯৫.৫০ টাকা। আবার ১ লা মার্চ আরও ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাম দাঁড়িয়েছিল ৮৪৫.৫০ টাকা। আজ ১০ টাকা কমেছে।
দেশের বৃহত্তম তেল বিপণন সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েলে সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলায় প্রতি মাসে ২ কোটিরও বেশি সিলিন্ডার বুক করা হয়। কলকাতায় এই সংখ্যাটি ১৪.৫ লক্ষ। রাজ্যে মোট এলপিজি সিলিন্ডারের সংখ্যা প্রায় ২.২৭ কোটি, যার মধ্যে ১.৩১ কোটি রয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েলের।
সাড়া দেশে ‘উজ্জ্বলা‘ প্রকল্পে গ্রাহক আছেন প্রায় সাড়ে আট কোটি। তাঁদের একটা অংশ এখন গ্যাস নেওয়ার অবস্থায় নেই। ওঁদের একটা বড় অংশ চারপাশ থেকে সংগৃহিত শুকনো বর্জ্য ও গাছের ডালপালা, খড়কুটোয় ফিরে গিয়েছেন। তাঁদের পরিবেশ-চেতনাকে দমিয়ে দিয়েছে দারিদ্র্য। এ কথা জানিয়ে বিজনবাবু ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে জানান, ইন্ডিয়ান অয়েলের বজবজ কারখানায় সম্প্রতি শ্রমিক অশান্তি বা শিল্প-বিরোধের জেরে কিছু সমস্যা হয়। তার প্রভাবও পড়ে এ রাজ্যের গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর।
মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও গৃহস্থালীর গ্যাসের চাহিদা কমে যাওয়ার আর একটা কারণ, গ্রাহকদের একাংশের আশা ছিল ভোটের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্র সিলিন্ডারের দাম কমাবে। এই মন্তব্য করে বিজনবাবু জানান, ফলে অনেকে গ্যাসের দ্বিতীয় সংযোগ নিতে সাময়িক বিরত থেকেছেন। চাহিদা কমে যাওয়ায় ডিষ্ট্রিবিউটরেরা অনেকে সিলিন্ডারের বরাত দেননি, বা কম দিয়েছেন। ফলে, সিলিন্ডারবোঝাই অনেক লরি দাঁড়িয়ে আছে বটলিং প্লান্টের সামনে। এর জন্য ডিষ্ট্রিবিউটর ও ঠিকাদারদের সমস্যা হচ্ছে। শ্রমিক-কর্মীদের অনেকে ঠিকমত মজুরি বা বেতন পাবেন না। চক্রাকারে সমস্যাটা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

