চাকমা ভাষাকে রাজ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি সরকার বিচার বিবেচনা করছে : শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ মার্চ৷৷ বাংলা ও ককবরক ভাষার পাশাপাশি চাকমা ভাষাকে রাজ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকার বিচার বিবেচনা করছে৷ এই বিষয়ে গত ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে চাকমা বুদ্ধিষ্ট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং গত ২৯ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন মুখ্যমন্ত্রীর নিকট চাকমা ভাষাকে রাজ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দাবী সনদ পেশ করেছে৷ আজ বিধানসভায় বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমা আনীত একটি দৃষ্টিআকর্ষণী নোটিসের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ একথা বলেন৷ বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমা আনীত দৃষ্টিআকর্ষণী নোটিসটি ছিল ’বাংলা ও ককবরক ভাষার পাশাপাশি চাকমা ভাষাকে রাজ্যভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া সম্বন্ধে’৷


বিধানসভায় এই দৃষ্টিআকর্ষণী নোটিসের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, ভারতীয় সংবিধানের ৩৪৫ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্য আইন সভায় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাজ্যে ব্যবহৃত/প্রচলিত যেকোন ভাষাকে সরকারি কাজে ব্যবহার যোগ্য ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা যেতে পারে৷ এই সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী আমাদের রাজ্যে ত্রিপুরা অফিসিয়াল ল্যাঙ্গয়েজ অ্যাক্ট, ১৯৬৪ প্রনীত হয়েছে৷ এই আইনের ধারা ২(১) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ধারার সংশোধন করে চাকমা ভাষাকেও ত্রিপুরায় সরকারি কাজে ব্যবহার্য ভাষা হিসেবে সংযুক্ত করা যাবে৷ এই আইন সংশোধন হলে পরে সরকারি বি’প্তিমূলে এই ভাষাকে সরকারি কাজে ব্যবহার করার জন্যে নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত করা যাবে এবং তখন থেকেই চাকমা ভাষাকে সরকারি ভাষা বলে পরিগণিত করা যাবে৷


শিক্ষামন্ত্রী শ্রীনাথ বলেন, ২০১২ সালের ৭ই আগস্ট কেবিনেট সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলা হরফের পরিবর্তে চাকমা হরফ ব্যবহার করার জন্য একটি মেমোরেণ্ডাম বের হয় এবং ২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে চাকমা হরফে শিক্ষাদানের কার্য শুরু হয়৷ তিনি বলেন, চাকমা ভাষার উন্নয়নে ২০১৮ সালে ১৬ সদস্য/সদস্যা বিশিষ্ট চাকমা ভাষা উন্নয়ন উপদেষ্টা কমিটি পুর্নগঠন করা হয়েছে৷ এই কমিটির চেয়ারম্যান হলেন বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমা৷ বিশিষ্ট উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন শিক্ষা ও আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ এবং সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী সান্তনা চাকমা৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চাকমা ভাষায় শিক্ষাদানের বিষয়ে ২০০২ সালের ১৪ জন একটি নোটিফিকেশন জারি হয়৷ এই নোটিফিকেশনে উল্লেখ ছিল ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকমা ভাষা পড়ানো হবে৷

এবং ২০০৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই বিদ্যালয়গুলিতে প্রথম শ্রেণীতে একটি বিষয় হিসেবে চাকমা ভাষা পড়ানো শুরু হয়৷ বর্তমানে চাকমা ভাষা একটি বিষয় হিসাবে ৮৭টি বিদ্যালয়ে চালু আছে এরমধ্যে ২৮টি বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে প’ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে এবং ৫৯টি বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত চাকমা ভাষা পড়ানো হচ্ছে৷ চাকমা ভাষার উন্নয়নের জন্য সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ তাছাড়া চাকমা ভাষাভাষী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিং-এরও পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ চাকমা ভাষার ম্যাগাজিন ’সদরক’-এর সর্বশেষ সংখ্যা ২০১৯ সালের জন মাসে প্রকাশিত হয়েছিল এবং ২০২০-২১ বর্ষের ম্যাগাজিনের মুদ্রনের কাজ চলছে৷