শনিবার প্রথম দফার ভোটের আগে শেষ দিনের প্রচারে ঝড় তুলল বিজেপি, পিছিয়ে নেই তৃণমূলও

কলকাতা, ২৫ মার্চ (হি.স.) : পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শনিবার। দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়ার ৩০ টি আসনে ভোট হবে ওই দিন ।  তার আগে আজ শেষ বেলার প্রচারে দিনভর তৎপর থাকল রাজনৈতিক দলগুলি । ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে  এই কেন্দ্রগুলিতে রীতিমতো দাপট দেখিয়েছিল বিজেপি। আজ শেষ প্রচার নিজেদের অবস্থান আরও পোক্ত করতে প্রার্থীদের পাশাপাশি তৎপর ছিলেন বিজেপির প্রথম সারির কেন্দ্রীয় নেতা তথা তারকা প্রচারকরা । বঙ্গের প্রথম দফার ভোটে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে ঝড় তুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া কিংবদন্তি অভিনেতা তথা মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী, কেন্ত্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা । শেষ বেলার প্রচারে ঝড় তুলতে পিছিয়ে ছিল না রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও। আজ দিনভর প্রচারে ঝাঁপালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্যরা । নিজের নিজের শক্তি নিয়ে শেষ বেলায় প্রথম দফার ভোটের জন্য ভোটারদের মন জয়ে তৎপর ছিল অন্যান্য দলগুলিও ।  এদিকে  আজ ভয় না পেয়ে, পক্ষপাতিত্ব না করে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান রাজ্যের  রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর।  
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য গত কয়েক মাস ধরেই নিয়মিত বাংলা সফর করছেন। কিন্তু একদিনে ৪ সভা প্রথম। বৃহস্পতিবার ফের রাজ্যে ভোটের প্রচারে আসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। পরপর চারটি জনসভা করেন তিনি। পুরুলিয়াড় ঝাড়গ্রাম, তমলুক এবং বিষ্ণুপুর বিধানসভা এলাকায় জনসভা করেন শাহ। বিকেলে একটি সাংগঠনিক সভাও করেন তিনি।  এদিনের সভা থেকে ভোটারদের মন জয় করতে তিনি যেমন একের পর এক প্রতিশ্রুতি দেন । সেই সঙ্গে তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে । বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির সভা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘’জঙ্গলমহলে নতুন এইমস তৈরি করবে বিজেপি। বাংলা থেকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া তখনই যাবে, যখন দিদি যাবে। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু নির্মুল করতে দিদিকে হারানো প্রয়োজন।’’  সরাসরি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শানিয়ে শাহ রাজ্যে ম্যালেরিয়া কিংবা ডেঙ্গু হলে গোপন রাখার প্রবণতাকে কটাক্ষ করেন শাহ। মাঝে মাঝেই দেখা গিয়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে কিংবা মৃত্যু হলে সেটি সার্টিফিকেটে লিখতে পারতেন না চিকিৎসকেরা। সেই বিষয়কেই কটাক্ষ করে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সমালোচনা করেন অমিত শাহ। এরই সঙ্গে রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের বিমুখ হওয়া নিয়েও তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি।
এদিন পুরুলিয়ায় বাঘমুণ্ডিতে গিয়ে সভামঞ্চ থেকে অমিতবাবু জানিয়েছেন,’বাংলায় বাড়ছে বেকারত্ব। প্রথমে বামেদের আমলে শিল্প বন্ধ হয়েছে। তৃণমূল বিনিযোগকারীদের বাংলা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্ক্যাম চাইলে দিদিকে ভোট দিন। স্কিম চাইলে নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দিন। পুরুলিয়াকে রেলের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য বিজেপি বদ্ধপরিকর।’ পুরুলিয়ার সভা থেকেও বাংলায় অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ নিয়ে বর্তমান সরকারকে কটাক্ষ করেছেন অমিত শাহ।
এদিন তিনি জানিয়েছেন, খুঁজে অনুপ্রবেশকারীদের বাংলা থেকে বার করবে বিজেপি। এরই সঙ্গে দেশের মানুষদের জন্য কী কী উন্নয়ন করেছেন মোদী সরকার, তার কথাও বলেছেন অমিত শাহ। তিনি জানিয়েছেন,’‘১২ কোটির বেশি গরিব মানুষকে গ্যাসের সিলিন্ডার দিয়েছে মোদী সরকার। ১১ কোটি মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে কেন্দ্রের সরকার। বিজেপি ক্ষমতায় এলে ১ বছরে কৃষকবন্ধুর আটকে থাকা ১৮ হাজার টাকা কৃষকের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করবে।’ এদিন এভাবেই ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে সভা থেকেও তৃণমূলকে আক্রমণ করেন অমিত শাহ।
অমিত শাহের পাশাপাশি আজ শেষ দফায় ভোটের আগে বিজেপির প্রচারে ঝড় তোলেন প্রাক্তন ক্রিকেট-তারকা তথা কেকেআরের প্রাক্তন অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর। প্রচারের শেষ দিনে রাজনীতির মাঠে ছক্কা হাকিয়ে ‘খেলা হবে’-র আবহে এই ভাষাতেই জনসভায় বিজেপি-র হয়ে ব্যাট ধরলেন গম্ভীর। ক্রিকেট মাঠে নয়, ভোটের ময়দানে এসে প্রচারের শেষ দিনে ছক্কা মেরে দিলেন। প্রচারের শেষ দিনে সোনামুখী এবং বাঁকুড়াতে এসে র‍্যালি করলেন টিম ইন্ডিয়ার এই প্রাক্তন ক্রিকেটার। মোট আট দফার নির্বাচন হচ্ছে বাংলায়, আর প্রথম দফাতেই এই দুই জায়গার নাম রয়েছে। তাই প্রচারের শেষ দিনে বাঁকুড়া ও সোনামুখীতে এসে র‍্যালির মাধ্যমে উন্নয়নের বার্তা দিয়ে গেলেন বিজেপির সাংসদ গম্ভীর। সেই সঙ্গে সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকারও করেন তিনি। তৃণমূলের বিধায়কদেরও আক্রমণ করেন গম্ভীর। তিনি দাবি করেন, বিজেপি সত্যিকারের লোকদেরই প্রার্থীর টিকিট দিয়েছে। সমাজের সব ধরনের লোকদেরই টিকিট দেওয়া হয়েছে।  
এ যেন পরীক্ষার আগের দিন। আর হাতে সময় নেই। শেষবেলায় তাই প্রস্তুতিতে খামতি রাখত চাইল না কোনও শিবির।” জয়পুরে নির্বাচনী প্রচার এসেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। আর সভামঞ্চ থেকে তিনি তৃণমূলের দিকে একর পর এক বোমা, গুলি ছুঁড়লেন। বললেন, “সারা দেশ নতুন শতাব্দিতে চলছে। একমাত্র বাংলাতেই এখনও যেন উনবিংশ শতাব্দী চলছে।“ রাজনাথ সিং এদিন বলেন, “৫ বছর বামপন্থীরা বাংলাকে লুঠেছে। ১০ বছর ধরে মমতার সরকার লুঠপাট চালাচ্ছে। বাংলা তো ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। বাঙালির মাটিতে এবার মা দুর্গা, সরস্বতীর পুজো কে আটকায় দেখি!”  প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ”বাংলায় মা, মাটি, মানুষ কেউ সুরক্ষিত নেই। দিদি বারবার মা, মানুষের সুরক্ষার কথা বলে ভোট চায়। কিন্তু কাউকে নিরাপত্তা দিতে পারে না। দশ বছর কেটেছে। বাংলার অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছে এই তৃণমূল সরকারের জন্য। এখানে জায়গায় জায়গায় সন্ত্রাস। এমনকী মমত দিদির কথাবার্তাতেও হিংসা, হানাহানি রয়েছে। দিদি, সরকার অহংকারে চলে না। সরকার মানুষের জন্য, সংবিধান মেনে চলে। বাংলার মানুষ এবার তৃণমূলের সন্ত্রাস থেকে মুক্তি চায়। আমি নিশ্চিত বাংলায় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসছে।” রাজনাথ সিং বাংলায় পা রাখার আগেই অবশ্য জানিয়েছিলেন, বিজেপি এবার ২০০-র বেশি আসন নিয়ে বাংলায় ক্ষমতায় আসবে। আর এই ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। তিনি আরও বলেছিলেন, ”মমতা দিদিকে বুঝতে হবে, সরকার সংবিধান মেনে চলে। অহংকারে চলে না।” তাঁর হুঙ্কারের ধরণ এদিনও একই রকম ছিল।
 বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এই প্রথম প্রচারে কিংবদন্তি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি হেলিকপ্টারে পৌঁছে যান বাঁকুড়ার শালতোড়ায়। সেখানে তাঁর পথযাত্রায় মানুষের ঢল নামে। ভিড়ে তিনি বেশ কিছুক্ষণ নামতে পারেননি, হেলিকপ্টারের মধ্যেই বসে থাকেন। তারপর সেখান থেকে নেমে গাড়িতে ওঠেন মিঠুন চক্রবর্তী। শুধু গ্রাম বাংলাতেই নয়, রাজ্য জুড়ে তাঁর যে জনপ্রিয়তা রয়েছে, তাকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। বিজেপি-র এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিঠুন চক্রবর্তী সর্বদা সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কাছে অনুপ্রেরণা স্বরূপ। এদিন তিনি সালতোড়ার বিজেপি প্রার্থী চন্দনা বাউড়ির মাথায় তাঁর আশীর্বাদের হাত রাখলেন। চন্দনা বাউড়ি তৃণমূলের শত অত্যাচার সহ্য করেও বিজেপি করে গেছেন। শুধু বিজেপি করার অপরাধে তৃণমূল তাঁকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর দেয়নি। স্বামী রাজমিস্ত্রি। এবার তিনিও সোনার বাংলা গড়ার কারিগর হতে চলেছেন। মিঠুনবাবু বলেন, গরিবের জন্য লড়াই করতে হবে। তিনি চন্দনা বাউরির মাথায় হাত রেখে আশির্বাদও করেন। মিঠুনবাবুর গাড়ির দুপাশে, সামনে পিছনে বহু মানুষ হাঁটতে থাকেন। অনেকে আবার মহাগুরু, কিংবা এমএলএ ফাটা কেষ্ট বলে চিৎকার করতে থাকেন। মিঠুনবাবু বলেন, গরিবের জন্য লড়াই করতে হবে।  
প্রথম দফার আগে জমজমাট প্রচারে শুভেন্দু অধিকারী ।এদিন ভগবানপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মাইতির সমর্থনে বৃহস্পতিবার বড় পথযাত্রা করেন বিজেপি নেতা তথা নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। এর আগে মারিসদার বাহিরিতে জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ভগবানপুর ২ ব্লকের জুখিয়া থেকে মাধাখালি পর্যন্ত বিশাল সংখ্যক কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতিতে এই পথযাত্রা হয়। সমাবেশে ছিলেন অভিনেত্রী পায়েল সরকার। সাধারণ মানুষের উচ্ছাস ছিল চোখে পড়ার মতো। শুভেন্দু অধিকারীর সাথে হাত মেলাতে ছুটে আসেন সবাই। কয়েকশ বাইক ও টোটো সহ সুসজ্জিত ট্যাবলো করে মিছিল করেন তিনি। উত্তর কাঁথি বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী সুমিতা সিনহার ভোটের প্রচারেও এদিন পথযাত্রা করেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।  
শেষবেলার প্রচারে রাজ্যজুড়ে ঝড় তুলছে বিজেপি। প্রথম দফার প্রচারের শেষ দিনে বিজেপির হিন্দুত্বের পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথ একের পর এক সভা করে চলেছেন। আর গেরুয়া লাইনেই যে তিনি ‘খেলবেন’ তা প্রচারের প্রথম দিন থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই পথেই তিনি নামখানা থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।  এদিন তিনি দুটি সভা করেন  বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগণার নামখানার জনসভায় ইনি বলেন,  “স্বামী বিবেকানন্দ, চৈতন্যদেব যে গেরুয়া পরে বিশ্বের কাছে বাংলার মাথা উঁচু করেছিলেন সেই গেরুয়া দেখলেই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেগে যান।“যোগী বলেন, বাংলার মাটি সংস্কৃতির মাটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে দেশে প্রথম নোবেল আসে। বাংলার মাটি বিপ্লবের মাটি। এই মাটির সন্তান নেতাজি ডাক দিয়েছিলেন, তোমরা আমায় রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। নেতাজি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় স্বাধীনতার স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকী বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম শুনে হাজার হাজার যুবক স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপাতে উদ্বুদ্ধ হতেন। হাসতে হাসতে ফাঁসিতে ঝুলে যেতেন।
বাংলার শিল্প, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি, তোলাবাজির মতো বিষয়গুলি যে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের মূল অ্যাজেন্ডা, তা প্রচারে এসে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরা। কিন্তু সেই সঙ্গে বিজেপির বহু পরীক্ষিত গেরুয়া লাইনও যে থাকছে তাও বারবার স্পষ্ট হয়েছে। নামখানা থেকে গেরুয়া প্রসঙ্গ-সহ সব ইস্যুকেই তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করলেন যোগী।  
 আজ নন্দীগ্রামের জনসভায়  হিন্দু ভোট একত্রীকরণ, হিন্দুত্বের বাণেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যোগীর দাবি, বাংলায় দুর্গাপুজা করতে সমস্যায় পড়তে হয়।তাঁর কথায়, আমরা ইউপি-তে দুর্গা পুজোয় কোনও বাধা দিইনা। এখানে সেটা হয়না। এদিন দলের নতুন  অথচ  অচিরেই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠা শুভেন্দু অধিকারীর ভূয়সী প্রশংসা শোনা যায় যোগীর মুখে। তিনি বলেন, “আমি অভিনন্দন জানাব শুভেন্দু অধিকারীকে। তিনি বিজেপিতে এসে যোগ দিয়েছেন। সোনার বাংলা গড়তে এগিয়ে এসেছেন।”
ভোটের প্রচারে পিছিয়ে নেই তৃণমূলও বৃহস্পতিবারের ভোটের প্রচারে বিজেপি নেতাদের পাশাপাশি তাদের নির্বাচনী ইস্তাহার নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর তোপ থেকে বাদ গেল না নির্বাচন কমিশনও । এদিন দাঁতনের সভা থেকে নির্বাচন কমিশনকে তোপ দেগে মমতা বলেন,  “বিজেপি এখন জনগণের খেলায় হেরে গিয়েছে। তাই অফিসার বদলের খেলা খেলছে। তবে যাঁদের বদলি করছেন, তাঁরা সবাই আরও বেশি করে আমাদের লোক। আর যাঁরা নতুন আসছেন, তাঁদের নিয়েও আমি খুশি, তাঁরাও আমাদের লোক।’ নির্বাচন কমিশন এদিন রাজ্যের পাঁচটি জেলার পুলিশ সুপার ও একটি জেলার জেলাশাসককে বদলে দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে তার পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা।ভোট ময়দানে দলের প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে বেড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপির বিরুদ্ধে এখন সব থেকে বেশি সরব হতে দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাদ যাচ্ছে না বাম-কংগ্রেস-আইএসএফরাও। এরই সঙ্গে এদিন মমতা তাঁর আক্রমণের তালিকায় জুড়ে নিলেন নির্বাচন কমিশনকেও।
আজ মেদিনীপুরের সভাতেও বিজেপি-র ভোট লুঠ নিয়ে হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ”যারা ভোটার মেশিন পাহারা দেবে, তাদের জন্য আমি কিছু করবই করব।”  সম্প্রতি বিভিন্ন জনসভায় তিনি এ নিয়ে জনগণকে সতর্ক করছেন। বুধবারও বাঁকুড়ার ওন্দার জনসভা থেকে তিনি বলেছিলেন, ভোট কিনতে রাতের অন্ধকারে টাকা বিলি করছে বিজেপি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, টাকা বিলিতে জড়িতদের হাতেনাতে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কারস্বরূপ চাকরি দেবেন। এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। আর বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরের সভা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের বললেন, ”যারা ভোটার মেশিন পাহারা দেবে, তাদের জন্য আমি কিছু করবই করব।”
এরপর বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে দলের তারকা প্রার্থী জুন মালিয়ার সমর্থনে প্রচার করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও প্রতিশ্রুতির সুরে বললেন, ভোটের পর ফলপ্রকাশের সময় পর্যন্ত ভোট মেশিন যারা পাহারা দেবেন, তাদের জন্য কিছু করবেন। আসলে এই সময়টাতেই ইভিএম কারচুপি করা হতে পারে বলে আশঙ্কা তৃণমূল নেত্রীর। আর এ বিষয়ে তিনি বিজেপির দিকেই আঙুল তুলেছেন।
মেদিনীপুরের সভা থেকে ভোট লুট নিয়েই তাঁর আরও সতর্কবার্তা, ”পুলিশ যদি বলে, ভোট মেশিন পাহারা দিচ্ছে, তাহলেও মানবেন না। বলবেন, আপনাদের কাজ আমরা করুন, আমাদের কাজ আমরা করব। কারণ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে পুলিশ আসছে। তাদের ভরসায় ছাড়া যাবে না। ওরা ভয় দেখাতে এলে, লাঠি নিয়ে তেড়ে যাবেন।”
ভোটের আগে খোদ তৃণমূল নেত্রীর এ ধরনের মন্তব্য ঘিরে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ তৈরি হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এসব উসকানিমূলক মন্তব্য নির্বাচনী বিধিভঙ্গ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিরাচরিত ভঙ্গিতে এদিন বিজেপি বিরোধী অস্ত্রে ফের শান দেন।
এদিকে আজ বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহারকে এক হাত নিলে নমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  ২৪ ঘণ্টা, ২ জেলা, চার জনসভা। শেষবেলায় এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারসূচি। সেই চার জনসভার প্রথমটি ছিল পাথরপ্রতিমার কলেজ মাঠে। সেখান থেকে নাম না করে আব্বাস সিদ্দিকির দল আইএসএফ-কে তোপ দাগেন। সাগরে দ্বিতীয় সভা থেকে মমতার মুখে এল উন্নততর তৃণমূলের কথা।  বললেন, এই আট বছরে যা কাজ করেছি, আগামী পাঁচ বছরের তার চেয়ে বেশি কাজ করব। উন্নত থেকে উন্নততর তৃণমূল গড়ব। এই সঙ্গে  বলেন, “পাথরপ্রতিমা আমার ধ্যানে রয়েছে। সুন্দরবন আলাদা জেলা হবে আগেই বলেছি। নতুন করে কারো বলার অপেক্ষা রাখে না।” প্রসঙ্গত, বিজেপির নির্বাচনী  ইস্তেহারে সুন্দরবন জেলার কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “এখানে যাতায়াতের সমস্যা ছিল। কয়েকশো কোটি টাকা ব্যবহার করে সেতু হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়েছে। ১৭টি নতুন সেতু হয়েছে সুন্দরবনে। ৫৩০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা হয়েছে সুন্দরবনে। আড়াই হাজার টিউবওয়েল হয়েছে সুন্দরবনে।” বিজেপি-র নির্বাচনী ইস্তে হারে সরকারি কর্মীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশনের কথা বলেছে বিজেপি। সেই প্রসঙ্গে মমতা বললেন,  “ত্রিপুরায় ক্ষমতায় এসে গ্র্যাচুয়িটি, পিএফ বন্ধ করে দিয়েছে সরকারি চাকরিতে। আসামে ১৪ লক্ষ মানুষকে ঘরছাড়া করেছে।”
তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রতিশ্রুতি আগামী দিনে চলবে সবুজসাথীর মতো প্রকল্প। বিনামূল্যে বাড়িতে পৌঁছবে রেশন। তিনি বলেন, “আমি বিজেপি পার্টির মতো ধান্দাবাজ নই, দাঙ্গাবাজ নই। আমি মানুষের জন্য কাজ করি। সবুজসাথীর সাইকেল পাবে ছেলেমেয়েরা। ছাত্রছাত্রীরা স্মার্টফোন পাবেন। দরজায় দরজায় রেশন পৌঁছে দেবো। কৃষক বন্ধুরা ভবিষ্যতে ১০ হাজার টাকা করে পাবে।”

তিনি বলেন, “আমফানে বিজেপি টাকাই দেয়নি। পাশে ছিল না। বুলবুলেও ছিল না। নরেন্দ্র মোদি মিথ্যেবাদী। অমিত শাহ হোদল কুত কুত নেতা। আমফানে ১৯ লক্ষ লোককে বাঁচিয়েছিলাম। থরথর করে কাঁপছিল নবান্ন। সারারাত জেগে পাহাড়া দিয়েছি। বুলবুলের সময়ে ২০ লক্ষ মানুষের ক্ষতি হয়েছিল। দুর্গতের সাহায্যে কোনও কার্পণ্য করিনি। ঝড়ে আগে ১৯ লক্ষ লোককে বলল ১ হাজার টাকা দিয়ে গেলাম। কার টাকা? ওটা তো রাজ্যের প্রাপ্য টাকা। এক টাকাও দেয়নি আসলে। এত বড় যজ্ঞে একটা দুটো ভুল হতে পারে। আমরা সাত হাজার কোটি টাকা দিয়েছি আমফানে। আরও ভাঙন বাঁধাতে হবে, জেটির কাজ করতে হবে। করে চলেছি। সুনামি যখন হয়েছিল, কী অবস্থা হয়েছিল। আমি আপনাদের জন্য রিলিফ সেন্টার করে দিয়েছি। আমি চোর আমি ডাকাত আমি খুনি? আমি মানুষকে জীবন দিয়ে ভালোবাসি। পিএম কেয়ারের নামে টাকা তুললে কোথায় গেল টাকা?
 এদিন ঘাসফুল শিবিরের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারী অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও এদিন দুই জেলাতেই থাকছেন বলে খবর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর ছাড়াও ডায়মন্ড হারবারে তাঁর কর্মসূচি রয়েছে। যা নিয়ে তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে চলছে উন্মাদনার পারদ।
দিনভর প্রচার চালালেন অন্যান্য দলগুলিও ।
দু’দিন আগে নির্বাচনে শান্তি বজায় রেখে সব নাগরিক যাতে নিজের ভোট নিজেরাই দিতে পারেন সেই আবেদন জানিয়ে ট্যুইট করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর । বৃহস্পতিবার প্রথম দফা নির্বাচনের আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই একই আবেদন জানালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যপাল জনগণের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেন, “আর ২ দিন পর প্রথম দফার নির্বাচন। আমি প্রত্যেককে অনুরোধ করছি, সবাই যেন নিজের ভোট দেওয়ার অধিকারকে কার্যকর করেন। কোনও ভয় না পেয়ে, পক্ষপাতিত্ব না করে ভোট দিন। আমি আশ্বস্ত করছি, তাঁরা ভোট দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। গণতন্ত্রে ভোটদানই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং অধিকার।”
উল্লেখ্য, রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট গ্রহণ হবে ২৭ মার্চ। প্রথম দফায় দুই মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়ার কিছু কিছু আসন মিলিয়ে মোট ৩০ টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। যেগুলি হল পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, ভগবানপুর, খেজুরি, কাঁথি দক্ষিণ, রামনগর, এগরা, দাঁতন, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, কেশিয়ারি, খড়্গপুর, গড়বেতা, শালবনী, মেদিনীপুর, বিনপুর, বান্দোয়ান, বলরামপুর, বাগমুণ্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, মানবাজার, কাশীপুর, পারা, রঘুনাথপুর, শালতোরা, ছাতনা, রানীবাঁধ এবং রায়পুর ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *