যোগ্যতা নির্ণয় হলেই হাইকোর্টের রায়ে সর্বশিক্ষা শিক্ষকরা নিয়মিত বেতনক্রম পাবেন : শিক্ষামন্ত্রী

আগরতলা, ২৩ মার্চ (হি.স.)৷৷ ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়ে সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিত বেতনক্রম দেওয়া হবে৷ তবে শিক্ষকতায় যোগ্যতার প্রশ্ণে কোনও আপস করা হবে না৷ আজ বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের তৃতীয় দিনে বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরীর উল্লেখপর্বে উত্থাপিত নোটিশের জবাবে এ-কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ তবে, উচ্চ আদালতের রায় আমাদের কাছে কিছুটা অস্পষ্ট৷ তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে৷ কিন্তু, সমস্ত বিষয় বিবেচনায় রেখেই ত্রিপুরা সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে, বলেন তিনি৷


এদিন শিক্ষামন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় অর্থানুকূল্যে পরিচালিত সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পটি ত্রিপুরায় ২০০১-০২ অর্থ বছর শুরু হয়েছে৷ এই প্রকল্পের অধীনে ২০০৩-০৪ সাল থেকে চুক্তির ভিত্তিতে মোট ৫,৬৯১ জনের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ২,৭৮২ জন ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ২৯০৯ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল৷ ওই চুক্তির মেয়াদ ছিল ১ বছর যা তাঁদের কর্মদক্ষতার উপর নির্ভর করে সময় সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ত্রিপুরায় ২০০৯-১০ অর্থ বছর থেকে থেকে চালু হওয়া কেন্দ্রীয় অর্থানুকূল্য পরিচালিত ’’রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান’ নামক আরেকটি প্রকল্পেও ৩৯০ জন চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল৷ প্রকল্প দুটিতে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক ছাড়া চুক্তির ভিত্তিতে অশিক্ষক কর্মচারীদেরকেও নিয়োগ করা হয়েছিল৷


তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে সর্বশিক্ষা অভিযান, রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান ও শিক্ষক শিক্ষণ, এই তিনটি প্রকল্পকে একত্রিত করে সমগ্র শিক্ষা অভিযান নামে একটি সংহত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুচনা করে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তিনি জানান, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৬,০৪৫ জন চুক্তিবদ্ধ কর্মচারী সমগ্র শিক্ষা অভিযানে কর্মরত আছেন৷ তাঁদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক ২,৬৭৫ জন, উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক ২,৬২০ জন, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক ২৪৯ জন এবং অশিক্ষক কর্মচারী ৫০১ জন রয়েছেন৷


তাঁর কথায়, সর্বশিক্ষা প্রকল্পের অধীনস্ত ৫,২৯৫ জন প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক পর্যায়ের চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক তাদের নিয়মিতকরণের দাবিতে ত্রিপুরা উচ্চ আদালতে দুটি রিট পিটিশন দায়ের করেন৷ ত্রিপুরা উচ্চ আদালত উক্ত রিট পিটিশন দুটোর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রদত্ত রায় ও আদেশনামায় সর্বশিক্ষা অভিযানে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষকদেরকে প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক সরকারি শিক্ষকদের বেতনক্রম অনুসারে নিয়মিত বেতনক্রম প্রদানের নির্দেশ দেন৷ এই রায়ে ত্রিপুরা উচ্চ আদালত সর্বশিক্ষা-য় চুক্তিবদ্ধ শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন প্রদানের সময় ফিক্সেশন, ইনক্রিমেন্ট প্রদান, পেনশনের সুযোগ এ-সমস্ত বিষয়েও নির্দেশ প্রদান করেন৷ ওই রায় আগামী ছয়মাসের মধ্যে কার্যকর করার আদেশও দেন৷

তিনি বলেন, ওই রায় ও আদেশের ৪৯ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রত্যেক চুক্তিবদ্ধ শিক্ষকের শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা যাচাই করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার আইন দফতর ও অর্থ দফতরের মতামত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তাঁর কথায়, শিক্ষার অধিকার আইন, শিক্ষক নিয়োগে ন্যূনতম যোগ্যতা, টেট উত্তীর্ণ হওয়া এবং ২০১০-র পূর্বে নিযুক্তি হলে নির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে৷ সে মোতাবেক ইতিমধ্যে প্রত্যেকের কাছে যোগ্যতার বিবরণ জানানোর জন্য শিক্ষা দফতর চিঠি পাঠিয়েছে৷


তাঁর কথায়, বামফ্রন্ট জমানায় শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বনাশ করা হয়েছে৷ নিয়োগ নীতির তোয়াক্কা না করে নিযুক্তিতে কয়েক হাজার চাকরিচ্যুত হয়েছেন৷ শুধু তা-ই নয়, সর্বশিক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগে এসটি-এসসি সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়ে সর্বশিক্ষার শিক্ষকরা নিয়মিত বেতনক্রম পাবেন৷ কিন্তু যোগ্যতা নির্ণয়ে তাঁরা সেই সুযোগ পাবেন৷ কারণ, যোগ্যতার প্রশ্ণে কোনও আপস করা হবে না৷ এমন-কি, অন্যায়ভাবে কোনও পদক্ষেপ নিয়ে নতুন কোনও মামলা হোক চাইছি না, সাফ জানালেন তিনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *