নিজস্ব প্রতিনিধি, তেলিয়ামুড়া, ২১ মার্চ৷৷ বর্তমান সরকার গুণগত মানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে৷ ইতিমধ্যে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে৷ যার মধ্যে পুলিশ, টি এস আর, ম্যানপাওয়ার অ্যাণ্ড প্ল্যানিং, স্টেনোগ্রাফার, শিক্ষা ইত্যাদি দপ্তরে মোট ১১ হাজার ৬৩১ জন কর্মী নেওয়া হবে৷ আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসে বিগত তিন বছরে ১৬ হাজার ৬১৪ জনকে চাকরি দিয়েছে৷ এরমধ্যে নিয়মিত পদে চাকরি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৯৬ জন৷ ডাই ইন হারনেসে নিয়মিত চাকরি পেয়েছেন ৮৬১ জন৷ কন্ট্রাক্ট বেসিসে চাকরি পেয়েছেন ৪ হাজার ২৯৮ জন৷ এরমধ্যে গেস্ট লেকচারার, ফটোগ্রাফার, ডাটা অপারেটর রয়েছেন৷ আউট সোর্সিং-এ চাকরিতে নিযুক্তি পেয়েছেন ৭ হাজার ৪৫৯ জন৷ অর্থাৎ গত তিন বছরে রাজ্যে চাকরি পেয়েছেন এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার আওতায় রয়েছেন মোট ২৮ হাজার ২৪৫ জন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৭-১৮ এই ১২ বছরে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন ৩৪ হাজার ৭০৫ জন৷ এই ১২ বছরে পূর্বতন সরকার চাকরি দিয়েছে ৩০ হাজার ৩৯৫ জনকে৷ এরমধ্যে নিয়মিত পদে চাকরি পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৫৪৫ জন৷ আবার এদের মধ্যে ১০ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষকও ছিলেন৷ ঐ ১২ বছরে পূর্বতন সরকারের সময়ে অনিয়মিত পদে চাকরি পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ৮৫০ জন৷ দেখা যাচ্ছে এই ১২ বছরে গড়ে প্রতি বছর চাকরি হয়েছে ২ হাজার ৫৩৩ জনের৷
আজ তেলিয়ামুড়া টাউন হলে জাতীয় কৃমিনাশক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সরকারের এই কথা জানান৷ তিনি বলেন, অথচ বর্তমান সরকারের গত ৩ বছরে গড়ে চাকরি হয়েছে ৫ হাজার ২০০ জনের৷ যা দ্বিগুণেরও বেশি৷ এই তিন বছরে স্বনির্ভর হয়েছেন ৭ হাজার ৪ জন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত তিন বছরে সরকারি চাকরি, স্বনির্ভর উদ্যোগী, স্বাবলম্বন ও পি এম ই জি পি, এম এস এম ই, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ডিডিইউ-জিকেওয়াই ও জব ফেয়ারের মাধ্যমে রাজ্যে ১ লক্ষ ২ হাজার ৭ জনের রোজগার সৃষ্টি হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ক’ষকদের ৮০ শতাংশ প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় নিজেদের জমির বিনামূল্যে বীমা করিয়েছেন৷ রাজ্যের ২ লক্ষ ৩১ হাজার ক’ষক কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন৷
এদিকে, রাজ্যের অন্ত্যোদয় পরিবারের সদস্যদের কেউ প্রয়াত হলে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে৷ খুব শীঘই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে৷ আজ তেলিয়ামুড়া টাউন হলে জাতীয় কৃমিনাশক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান৷ উল্লেখ্য, রাজ্যে বর্তমানে ১ লক্ষ ৮ হাজার ৭১৮টি অন্ত্যোদয় পরিবার রয়েছে৷ রাজ্যের সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর থেকে এই সহায়তা দেওয়া হবে৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের উন্নয়ন এবং রাজ্যবাসীর জীবনমানের উন্নতি নির্ভর করে মূলত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন পরিকাঠামোর উপর৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যের উন্নতির জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করছেন৷ একসময় রাজ্যবাসী কথা বলার অধিকারও হারিয়ে ফেলেছিলো৷ যার থেকে মুক্তি দিয়েছে বর্তমান সরকার৷ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গত ৯ মার্চ বর্তমান রাজ্য সরকারের ৩ বছর পূর্তির ভার্চয়াল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের জন্য আরও ৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন৷ বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর৷ তবে কিছু লোক সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তমূলক খবর প্রচার করছেন৷ তবে বর্তমানে রাজ্যবাসী অনেকটা সচেতন৷ চাকরি পেতে বা কোনও সরকারি সুুবিধা পেতে মিছিল মিটিং করতে হয় না৷ এটা ছিলো বিগত দিনের সংস্ক’তি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় ক’মিনাশক দিবস বছরে দু’বার পালন করা হয়৷ ২০১৫ সাল থেকে এই কার্যক্রমের সূচনা হয়৷ ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন শিসুু স্বাস্থ্য বিভাগের সম্পতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে রাজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কৃমি রোগের প্রাদুর্ভাব হ্রাস পেয়েছে৷ ২০১৬ সালে রাজ্যে যেখানে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছিলো ৫৪.৯ শতাংশ সেখানে ২০১৯ সালে তা হাস পেয়ে ১.৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আয়ুমান কার্ডধারীদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বীমা রয়েছে৷ তিনি বলেন, ২৫ বছরে এ রাজ্যে বিগত সরকার শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেয়নি৷ বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা উনয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলছে৷ বিদ্যালয়গুলিতে এন সি ই আর টি সিলেবাস চালু করা হয়েছে৷ এতে রাজ্যে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়েছে৷ যাতে করে দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় রাজ্যের ছেলেমেয়েরাও ভালো ফল করতে পারে৷ এন সি ই আর টি সিলেবাস চালু হওয়ার ফলে রাজ্যে বুনিয়াদি শিক্ষার ভিত্তি সুুদৃঢ় হয়েছে৷ বিগত দিনে রাজ্যে ব্যক্তি বা দলের সরকার চলতো৷ কিন্তু বর্তমানে জনগণের সরকার চলছে এ রাজ্যে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য দপ্তরের বাজেট প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সারা রাজ্যের সাথে তেলিয়ামুড়া মহকুমাতেও গত তিন বছরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ রূপায়িত হয়েছে৷ মহকুমায় ২০২০-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩,০৫২ জন কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে উপক’ত হয়েছেন৷ অটল জলধারায় তেলিয়ামুড়ায় ২,৩৭৭টি পরিবারকে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ তাছাড়া তেলিয়ামুড়ায় বর্তমানে ৩,৮৪১ জন বৃদ্ধভাতা, ৩৫৩ জন দিব্যাঙ্গন ভাতা, ১,৯২১ জন বিধবা ভাতা ইত্যাদি পাচ্ছেন৷ এছাড়াও মহকুমার ২২৩টি পরিবার মিনি ডেয়ারি প্রকল্পে উপক’ত হচ্ছে৷ তাছাড়া রেগা, টুয়েপ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, সৌভাগ্য ইত্যাদি প্রকল্পেও এ মহকুমার লোকেরা সুুবিধা পাচ্ছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামীদিনে তেলিয়ামুড়া-খোয়াই হয়ে সাবম হরিনা পর্যন্ত রাস্তার কাজও সম্পন্ন হবে৷ যাতে করে সুুবিধা পাবেন সাধারণ মানুষ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে সরকারের লক্ষ্য প্রকল্পে সুুবিধা পেয়েছেন তেলিয়ামুড়ার শতাব্দী মজমদার এবং সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন৷ যা সত্যি সারা রাজ্যের কাছে গর্বের বিষয়৷ রাজ্য বিধানসভায় সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক বিধায়ক কল্যাণী রায় তার বক্তব্যে তেলিয়ামুড়ায় এ ধরণের রাজ্যভিত্তিক ক’মিনাশক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান৷ বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা জানান, গত ১৬ মার্চ থেকে খোয়াই জেলায় যে ক’মিনাশক ঔষধ ১ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের খাওয়ানো হচ্ছে, তাতে ৯৫ শতাংশ সফলতা পাওয়া গেছে৷ তিনি আরও বলেন, খোয়াই জেলায় ১ লক্ষ ১১ হাজার আয়ুমান কার্ড দেওয়া হয়েছে৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ডা. অতুল দেববর্মা, বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী, খোয়াইর জেলাশাসক মিতা মল, সমাজ সেবক রি’ত সূত্রধর প্রমুখ৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ক’মিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ান৷ তাছাড়া জননী সুুরক্ষা যোজনা এবং আয়ুমান প্রকল্পের তিন জন করে সুুবিধাভোগীকে মুখ্যমন্ত্রী চেক ও কার্ড তুলে দেন৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খোয়াই জিলা পরিষদের সভাধিপতি জয়দেব দেববর্মা৷ স্বাগত ভাষণ দেন খোয়াই জেলার সি এম ও নির্মল সরকার৷ অনুষ্ঠানের পর মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিরা তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করেন৷