জেলা সদরগুলিতে ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপিত, রাজ্যের পিছিয়ে পড়া মানুষের কল্যাণে সরকার কাজ করছে : উপমুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ জানুয়ারি ।। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সদরে আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৭২তম প্রজাতন্ত্রদিবস উদযাপিত হয়েছে। সিপাহীজলা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলার মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বিশ্রামগঞ্জ মিনি স্টেডিয়ামে। অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা। পতাকা উত্তোলনের পর উপমুখ্যমন্ত্রী আরক্ষা কর্মীদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে উপমুখ্যমন্ত্রী প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারতের সংবিধান হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ সংবিধান। ভারতীয় সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে মৌলিক অধিকার দিয়েছে। ভারতকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে পৌছে দিতে প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্ব নিতে হবে।

উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতিতেও রাজ্য সরকার রাজ্যের জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। সরকার পিছিয়েপড়া মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পের সুবিধা রাজ্যের অন্তিম মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের মানুষের কল্যাণে রাজ্য সরকারও বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়িত করছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার জনজাতি অংশের মানুষের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছে। ইতিমধ্যেই ১২টি রককে অ্যাসপিরেশন্যাল ব্লক হিসেবে চিহ্নিত করে সামগ্রিক উন্নয়নের কাজ চলছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মানুষকে প্রশাসনের কাছে আসতে হবেনা, প্রশাসন মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। সেই দিশাতেই কাজ করছে সরকার। উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজ্য প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। পর্যটন শিল্পের বিকাশেরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্য সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয়জল, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃষি, মৎস্যচাষ প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গঠন করার কাজ করছে। এই কাজে সব অংশের মানুষকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। পরে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী বাহিনীগুলিকে পুরস্কৃত করা হয়। জেলা, মহকুমা এবং ব্লক স্তরে বিভিন্ন দপ্তরের ১৫ জন কর্মচারিকে তাদের কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে সিপাহীজলা জেলার জেলাশাসক বিশ্বশ্রী বি, পুলিশ সুপারসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রজাতন্ত্র দিবস পালন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর ত্রিপুরা জেলায় মূল অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় বীরবিক্রম ইনস্টিটিউশন মাঠে। সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর উপাধ্যক্ষ সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে উপাধ্যক্ষ শ্রীসেন দেশের বীর সেনানীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমাদের দেশ প্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তেমনি রাজ্যেও কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যােগাযােগ ব্যবস্থা প্রভৃতির সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। রাজ্যের উন্নয়নে এগিয়ে আসার জন্য তিনি সব অংশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্যারেডে অংশগ্রহণকারীদের পুরস্কৃত করা হয়। তাছারাও প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সমাজকর্মী, বিভিন্ন গ্রাম প্রধান এবং স্বেচ্ছাসেবীর সংগঠনকে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে উত্তর ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি ভবতোষ দাস, উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক নাগেশ কুমার বি., পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী, মহকুমা শাসক কমলেশ ধর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গোমতি জেলার মূল অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় উদয়পুর কে বি আই মাঠে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়। তিনি বিভিন্ন বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রী প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা রূপায়ণের কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গোমতি জিলা পরিষদের সভাধিপতি স্বপন অধিকারী, বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘোষ, উদয়পুর পুর পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন শীতল চন্দ্র মজুমদার, গোমতি জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক তরুণ কুমার রায়, পুলিশ সুপার লাকি চৌহান, মহকুমা শাসক অনিরুদ্ধ রায় প্রমুখ।

প্রজাতন্ত্র দিবস অনুষ্ঠান শেষে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় কেবিআই মাঠের উত্তর প্রান্তে ওপেন জিমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। যুববিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর এবং উদয়পুর পুর পরিষদের সহায়তায় স্থাপিত এই জিমের উদ্বোধন করে তিনি সুস্থ দেহ ও সুস্থ মন গঠনে শরীর চর্চার গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গােমতী জিলা পরিষদের সভাধিপতি স্বপন অধিকারী। সভাপতিত্ব করেন উদয়পুর পুর পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন শীতল চন্দ্র মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুববিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের আধিকারিক মিহির শীল।

ঊনকোটি জেলার মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কৈলাসহরের রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে। সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সমাজকল্যাণ ও সামজশিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সান্তনা চাকমা। তিনি বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। জাতীয় পতাক উত্তোলন করে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী শ্রীমতি চাকমা বলেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার ত্রিপুরার সামগ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছে। তাতে অনেকটা সাফল্য এসেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, বেকারদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে ত্রিপুরাকে দেশের মধ্যে একটি মডেল রাজ্যে পরিণত করার দিশায় সরকার কাজ করছে।

খোয়াই জেলায় ৭২তম প্রজাতন্ত্রদিবস উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় খোয়াই জিলা পরিষদ সংলগ্ন মাঠে। অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া। পতাকা উত্তোলনের পর তিনি আরক্ষা বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জিলা পরিষদের সভাধিপতি জয়দেব দেববর্মা, সহকারি সভাধিপতি হরিশঙ্কর পাল, জেলাশাসক স্মিতা মল, জেলা পুলিশ সুপার ড. কিরণ কুমার সহ পদস্থ আধিকারিকগণ।

অনুষ্ঠানে জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, রাজ্যের জনজাতিদের কল্যাণে সরকার বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জনজাতিদের আর্থসামাজিক মান উন্নয়নে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে বনমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া সহ অন্যান্য অতিথিগণ জেলা হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে ফল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। তাছাড়া আমপুরা অরফেন বয়েজ হােস্টেল ও খোয়াই সংশোধনাগারে আবাসিকদের মধ্যে ফল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এদিকে আজ সকালে জিলা পরিষদ কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সভাধিপতি জয়দেব দেববর্মা। উপস্থিত ছিলেন সহকারি সভাধিপতি হরিশঙ্কর পাল ও অন্যান্য অতিথিগণ। খোয়াই পঞ্চায়েত সমিতি কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান টিংকু ভট্টাচার্য। ভাইস চেয়ারম্যান তাপস দাস সহ অন্যান্য অতিথিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পুর পরিষদ কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পুর পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন উষা ভট্টাচার্য (বিশ্বাস)। জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলাশাসক স্মিতা মল।