ত্রিপুরা এখন আত্মনির্ভতার দিকে চলেছে : রাজ্যপাল

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ জানুয়ারি৷৷ কেন্দ্রীয় সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচি রূপায়ণের ফলে ত্রিপুরা এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে৷
আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং প্রেক্ষাগৃহে রাজ্যপাল রমেশ বৈস ও মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য মর্যাদা পাবার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা উল্লেখ করেন৷ শুধু উত্তর পূর্বাঞ্চল নয় উন্নয়নের নিরিখে ত্রিপুরা ভারতের বড় রাজ্যগুলির মধ্যেও জায়গা করে নেবে বলে উভয়েই আশা প্রকাশ করেছেন৷ ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে এবারই প্রথম রাজ্য সরকার রাজ্য নাগরিক সম্মান-২০২১ ও পূর্ণরাজ্য দিবস পুরস্কার-২০২১ চালু করেছে৷ আজকের অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিশিষ্টজনদের হাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এই পুরস্কারগুলি তুলে দেওয়া হয়৷ রাজ্য নাগরিক সম্মান পেয়েছেন পাঁচজন এবং পূর্ণরাজ্য দিচবস পুরস্কার পেয়েছেন নয়জন৷


প্রথমবার ত্রিপুরা বিভুষণ সম্মান পেয়েছেন পদ্মশ্রী দীপা কর্মকার ও ত্রিপুরা ভুষণ সম্মান পেয়েছেন ক্রীড়াবিদ আর্শিয়া দাস৷ আজকের অনুষ্ঠানে ’বিকাশের পথে ত্রিপুরা’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, ক’ষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া, খাদ্যমন্ত্রী মনোজকান্তি দেব, মুখ্য সচিব মনোজ কুমার, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক ভি এস যাদব, তথ্য ও সংস্ক’তি দপ্তরের বিশেষ সচিব অভিষেক চন্দ্রা, তথ্য ও সংস্ক’তি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷

ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে রাজ্যপাল রমেশ বৈস পূর্ণরাজ্য দিবসকে একটি খুশির মূহুর্ত হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা লাভ করার পিছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস৷ ত্রিপুরাতে গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিবর্তনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া বেগবান হয়-১৯৪৯ সালের ৫ অক্টোবর ত্রিপুরার ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর৷ কিভাবে ত্রিপুরার শেষ রাজা বীর বিক্রম মাণিক্য স্বাধীনতার আগেই ভারত ইউনিয়নের সাথে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তার মৃত্যর পর মহারাণী কা’নপ্রভা দেবী ভারতভুক্তির চুক্তির স্বাক্ষর করেন এবং কিভাবে ত্রিপুরায় প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, জনজাতি কল্যাণে স্ব-শাসিত জেলা পরিষদের জন্ম, ত্রি-স্তরীয় প’ায়েতী রাজ, নগর উন্নয়নে পুর পরিষদের সৃষ্টি ইত্যাদি প্রক্রিয়ার কথাও রাজ্যপাল তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন৷


রাজ্যপাল রমেশ বৈস বলেন, বিগত বছর কোভিড-১৯ এর কারণে রাজ্য তথা সবাই এক সংকটপূর্ণ সময়ের সম্মখীন হয়েছে৷ এখনো আমরা সেই কঠিন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি এবং সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বিশেষ করে প্রথম সারির যোদ্ধাদের পরিষেবা ও কাজের মাধ্যমে আমরা শীঘই এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ তিনি তার ভাষণে বিগত আড়াই বছরে রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনায় প্রায় ২.৫ লক্ষ এবং প্রধান মন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় ৩ লক্ষ কৃষক উপকৃত হয়েছেন৷ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন আয়ুমান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা, ত্রিপুরা হেলথ অ্যাসিউর্যান্স স্কীম ফর পুওর ইত্যাদি প্রকল্পে৷
মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখ করেন সি বি এস ই পাঠক্রম চালু করা, ২৮টি বাংলা মিডিয়াম বিদ্যালয়কে ইংলিশ মিডিয়ামে রূপান্তরিত করা, বছর বাঁচাও, সুুপার-৩০ লক্ষ্য, মুখ্যমন্ত্রী বি এড অনুপ্রেরণা যোজনা ইত্যাদি প্রকল্পের কথা৷ তিনি বলেন, তেমনি ছাত্রছাত্রীদের পেশাদারী ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়াতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আগরতলা বিমানবন্দরকে মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দর হিসেবে নতুন নামাকরণ করে উন্নয়নের কাজ চলছে, ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে এবং সরকার আরও নতুন নতুন সড়ক জাতীয় সড়কে উন্নীত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তেমনি বিভিন্ন নাগরিক কেন্দ্রিক পরিষেবাকে অনলাইন করা হয়েছে৷ যেমন গণবন্টন ব্যবস্থায় আধার ভিত্তিক বায়োমেট্রিক লেনদেন ব্যবস্থা, ই-পয়েন্ট অব সেল, ’ওয়ান নেশন ওয়ান কার্ড’ ইত্যাদি পরিষেবা চালু হয়েছে৷


জনজাতিদের উন্নয়নে বর্তমান রাজ্য সরকারের উদো্যগের কথা উল্লেখ করে রাজ্যপাল বলেন, স্ব-শাসিত জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ২৮ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার৷ ১২টি জনজাতি অধ্যুষিত ব্লককে ’অ্যাসপিরেশন্যাল ব্লক’ হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে এবং তাদের জন্য গুণগত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে ১৮টি নতুন একলব্য বিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে৷ উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের নাম জনজাতি কল্যাণ দপ্তর করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা এম এস এম ই আবাসন, পানীয় জল, গ্রামীণ উন্নয়ন, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে৷ তাছাড়া রাজ্যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনায় দরিদ্রদের জন্য আরও কিছু বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ এখন রাজ্যেও কোভিড-১৯ এর টিকাকরণ শুরু হয়েছে৷ সমস্ত সমস্যা পেরিয়ে আগামী দিনগুলিতে রাজ্যের উজ্জল সময় আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷