নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ বিলোনীয়া, ২২ ডিসেম্বর৷৷ রাজ্যের পৃথক স্থানে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে চবিবশ ঘন্টায়৷ রাজ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে মন্তব্য করা হয়েছে৷
সংবাদে প্রকাশ, গলায় পরনের ওড়না জড়িয়ে আত্মহত্যা করেছেন বছর কুড়ির গৃহবধূ৷ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ত্রিপুরার কদমতলা থানাধীন ভিতরগুল গ্রামে৷ আত্মঘাতী গৃহবধূ রেজওয়ানা পারভিন৷ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তদন্তে নেমেছে৷
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, বছর দেড়েক আগে স্থানীয় লালছড়া গ্রামের রেজওয়ানা পারভিন নামের এক যুবতীকে প্রেম করে বিয়ে করে ভিতরগুল গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে কয়েস আহমেদ ওরফে রাজু৷ দাম্পত্য জীবনের শুরুতে উভয়ের মধ্যে মধুর সম্পর্ক ছিল৷ তবে বছর খানেকের মাথায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কারণে-অকারণে ঝগড়া-বচসা লেগেই থাকত, শোনা গেছে গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে৷ এদিকে গত লকডাউনের সময় স্বামী কয়েস আলির ব্যবসায় ভাঁটা পড়ে৷ আর্থিক অনটনের ফলে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ আরও বাড়তে থাকে৷
ইত্যবসরে লকডাউন শিথিল হওয়ার পর কাজের তাগিদে গত ১২ ডিসেম্বর স্বামী কয়েস বেঙ্গালুরুতে পাড়ি দেন৷ কিন্তু স্বামী বেঙ্গালুরু যান তাতে স্ত্রী রেজওয়ানার নাকি মত ছিল না৷ তার ইচ্ছা ছিল, স্বামী এখানে থেকেই রোজগার করুন৷
এদিকে স্বামী বেঙ্গালুরুতে পৌঁছার মাত্র আটদিনের মাথায় গত রবিবার সকালে ফোনে স্ত্রীর সাথে দীর্ঘক্ষণ বার্তালাপ হয়৷ এদিন বেলা দেড়টা নাগাদ স্ত্রী রেজওয়ানা সুযোগ বুঝে পরিবারের লোকদের চোখের আড়ালে তার শয়নকক্ষে সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না জড়িয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন৷ এই দাবি করছেন মৃতের শ্বশুর বাড়ির লোকজন৷ তবে রেজওয়ানার দেহে প্রাণ আছে মনে করে পরিবারের সদস্যরা কদমতলা হাসপাতালে নিয়ে যান৷ কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷
ঘটনার পর কদমতলা পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে রেজওয়ানার মৃতদেহ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ময়না তদন্তের পর পরিবারবর্গের হাতে তুলে দেয়৷ পুলিশ রেজওয়ানার মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে ঘটনাকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে মামলা রুজু করেছে৷
ঘটনার পরেরদিন সোমবার সকালের দিকে রেজওয়ানার বাবার বাড়ির লোকজন ছুটে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ তাঁরা তাঁদের মেয়ের মৃত্যুর জন্য তার শ্বশুর শাশুড়ি স্বামী ও দেবরকে দায়ী করে থানায় এক লিখিত এজাহার দাখিল করেছেন৷ বিষয়টি নিয়ে কদমতলা থানার ওসি কৃষ্ণধন সরকার জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরই পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷
এদিকে, জিরানিয়া কৃষ্ণমণি পাড়ায় রেললাইন থেকে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ মৃত যুবকের নাম যীসব দেববর্মা৷মঙ্গলবার সকালে কৃষ্ণমণি পাড়ায় রেললাইনে ওই যুবকের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন মাতারবাড়িতে খবর দেন৷ খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুটে এসে মৃতদেহ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন৷ তারপর খবর পাঠানো হয় জিরানিয়া থানার পুলিশকে৷পুলিশ এসে রেললাইন থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায়৷জিরানিয়া থানার পুলিশ প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যু জনিত একটি মামলা গ্রহণ করে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷তবে পরিবারের লোকজনের অভিযোগ করেছেন এটি অস্বাভাবিক মৃত্যু জনিত কোন ঘটনা নয় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের তরফ থেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে৷জিরানিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে৷
মৃত যুবকের পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয় গতকাল রাতে সে ক্রিং উৎসবে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল৷ বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর রাতে বাড়িতে ফিরে আসেনি৷ স্বাভাবিক কারণেই আশঙ্কা করা হচ্ছে তাকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়েছে৷জিরানিয়া কৃষ্ণমণি পাড়ায় রেললাইন থেকে যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের সংবাদে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে৷
অন্যদিকে, বিলোনিয়া আজ সকালে প্রায় সাড়ে দশটার সময় বিলোনিয়া থেকে আগরতলা মূল সড়কে বনকর ঘাট এলাকায় একটি কালভার্টের নিচে তমালের মৃতদেহ দেখতে পায় এলাকাবাসী৷ সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় বিলোনিয়া থানায় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করে৷ বাড়িতে পাশাপাশি তমালের বড় ভাই অরুন বিশ্বাস জানায় সে মূক-বধির এবং কিছুটা মানসিক বিকারগ্রস্ত৷ প্রায় সময় স্থানীয় বনকর বাজারে ঘোরাফেরা করে৷ কিন্তু গতকাল রাতে বাড়িতে ফেরে নাই৷ আজ সকালে বাড়ির লোকজন খবর পায় বনকর ঘাট এলাকায় একটি কালভার্টের নিচে তার মৃতদেহ দেখতে পেয়েছে এলাকাবাসী৷

