সাংবাদিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা ও ভর্তুকিতে ঋণের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ ডিসেম্বর৷৷ গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভ যদি একসাথে কাজ করে তবেই দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই চারটি স্তম্ভকেই শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছেন৷ আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত ফোরাম ফর ডেভেলপমেন্ট এণ্ড প্রোটেকশন অব মিডিয়া কমিউনিটির প্রথম রাজ্য সম্মেলনে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সাথে তিনি রাজ্যের সাংবাদিকদের জন্য আয়ুষ্মান ত্রিপুরা যোজনার সুবিধা এবং আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল সাংবাদিকদের পরিবার-কে স্বনির্ভর করার জন্য ভর্তুকি-তে ঋণের ঘোষণা দেন৷ তাঁর মতে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে সমাজকে সুুষ্ঠভাবে পরিচালনা করাই ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের কাজের অভিমুখ৷ বর্তমানে সাংবাদিকতার মধ্যে পেশাদারিত্ব এসেছে৷ সংবাদ জগৎ এখন শিল্প৷ এক্ষেত্রে আরও পারদর্শিতা নিয়ে আসা প্রয়োজন৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের কল্যাণের মাধ্যমেই সমাজের উন্নয়ন হয়৷ সেই দিশাতেই বর্তমান সরকার কাজ করছে৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সমাজ কল্যাণ, খাদ্য প্রতিটি দপ্তরেই সরকারের কাজের সফলতা এসেছে৷ রাজ্যে মাথাপিছু আয় ২০১৭ সালের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে৷ শিক্ষিত বেকার যুবকরা স্বনির্ভর হতে চাইছে৷ উদ্যান, মৎস্য ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হচ্ছে রাজ্যের যুবকরা৷ রাজ্যের মানুষের এই মানসিকতাই স্বনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা নেবে৷ রাজ্যের ক্যুইন আনারস, সুুগন্ধি লেবু এখন বহিঃদেশে রপ্তানি হচ্ছে৷ বর্তমান সরকার এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ ত্রিপুরায় তৈরি বাঁশের বোতল দুবাই-এ সমাদরে বিক্রি হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে রাজ্যের কৃষকরাও উপকৃত হয়েছেন৷ সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করছে৷ রাজ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষককে প্রধানমন্ত্রী ফসলবীমা যোজনার আওতায় আনা হয়েছে৷ রাজ্যের বর্গাচাষীদেরকেও কেসিসিতে ঋণ দেওয়া হয়েছে৷ কৃষকদের সয়েল হেলথ কার্ড দেওয়া হয়েছে৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে গুণগত শিক্ষার প্রসারে সি বি এস ই পাঠক্রম চালু হয়েছে৷ পূর্ত দপ্তরেও কাজের পরিধি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে৷ পূর্ত দপ্তর এবং এন এইচ আই ডি সি এল মিলে আগামী ৫-৬ বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করা হবে৷ সাবমে মৈত্রি সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুুবিধা নেওয়া যাবে৷ তাছাড়াও সাব্রুমে স্পেশাল ইকোনমিক জোন, লজিস্টিক হাব, আই সি পি ইত্যাদি গড়ে উঠলে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে এ রাজ্যে৷ শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সাংবাদিকগণও এর অংশীদার৷ কাজের মাধ্যমে তাদেরকেও শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ার কাজে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিন তিনি ঘোষণা দেন সাংবাদিকদের জন্য আয়ুষ্মান ত্রিপুরা যোজনার সুবিধা প্রদান করা হবে৷ তাতে, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ ওই যোজনা থেকে উপকার পাবেন তারা৷ পাশাপাশি তিনি আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল সাংবাদিকদের পরিবারকে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য ভর্তুকি-তে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, একবছর এই সম্মেলনের মঞ্চে কতজন সাংবাদিকের পরিবার স্বনির্ভর হয়েছেন সেই খোঁজ নেবেন বোপলী জানিয়েছেন৷


আগরতলা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক তথা ফোরাম ফর ডেভেলপমেন্ট এণ্ড প্রোটেকশন অব মিডিয়া কমিউনিটির সদস্য প্রণব সরকার বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সংবাদ মাধ্যমের প্রতি সর্বদাই আন্তরিক৷ রাজ্যে দ’জন সাংবাদিক হত্যার সময়ও তিনি জিবি হাসপাতালে গিয়েছিলেন৷ আই এল এস হাসপাতালে একজন সাংবাদিক মারা যাওয়ার পর চিকিৎসার বিল পরিশোধ করতে না পারার জন্য তার দেহ আটকে রাখা হয়েছিল৷ সেদিন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীই এই বিল পরিশোধ করে ঐ সাংবাদিকের পরিবারের হাতে তার দেহ তুলে দিয়েছিলেন৷ সাংবাদিকদের অবসরকালীন পেনশন এক হাজার থেকে বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা করেছে বর্তমান সরকার৷ সাংবাদিকদের জ্যাকেট দেওয়া হয়েছে৷ মহকুমার সাংবাদিকদেরকেও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ ইলেকট্রনিক চ্যানেল ও ওয়েব মিডিয়ার সাংবাদিকদেরকেও এর আওতায় আনা হয়েছে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থে যখন যা চাওয়া হচ্ছে বর্তমান সরকার তা পূরণে সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছেন৷ সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য বীমা করে দেওয়ার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবে৷ তিনি বলেন, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের স্বার্থে যতগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, অতীতে কখনও তা করা হয়নি৷ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথও উপস্থিত ছিলেন৷ অনুষ্ঠানে তাছাড়াও বক্তব্য রাখেন, জাগরণ পত্রিকার সম্পাদক পরিতোষ বিশ্বাস, ভূপেন দত্ত ভৌমিক ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সঞ্জয় পাল, সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্যী, নর্থ-ইস্ট কালার পত্রিকার সম্পাদক সঞ্জিব দেব প্রমুখ৷ ফোরাম ফর ডেভেলপমেন্ট এণ্ড প্রোটেকশন অব মিডিয়া কমিউনিটির আহ্বায়ক সেবক ভট্টাচার্যী বলেন, রাজ্যের সাংবাদিকদের সার্বিক স্বার্থে কাজ করবে এই ফোরাম৷ এদিনের সম্মেলনের প্রথমার্ধে বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরাও আলোচনা করেন এবং সাংবাদিকদের স্বার্থে বিভিন্ন দাবি জানান৷