আগরতলা, ১৪ ডিসেম্বর (হি.স.)৷৷ দেশ যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিশায় এগোচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাওবাদী, কমিউনিস্টরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে৷ কৃষক আন্দোলনের বিরোধিতায় এভাবেই কটাক্ষ করলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সোমবার দক্ষিণ জেলার চেলাগাং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনে গিয়ে পূর্বতন সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন, মানসিকতার পরিবর্তনে তিন মাস সময় চেয়ে পূর্ত দফতর এক মাসে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেছে৷
আজ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চেলাগাং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নবনির্মিত ভবনের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি৷ এক মাস আগে এসে এই ভবন চালু করার কথা বলেছিলাম৷ আজ সেই শুভক্ষণ এসেছে৷ তাঁর কথায়, এই ভবন নির্মাণে প্রথমে পূর্ত দফতর তিন মাস সময় চেয়েছিল৷ কিন্তু সেই তিন মাসের কাজ তারা এক মাসে সম্পন্ন করেছে৷ তাতেই নতুন ত্রিপুরার প্রমাণ মিলেছে৷ তিনি বিদ্রুপের সুরে বলেন, অতীতে তিন মাসের কাজ শেষ হতে ছ’মাস লেগে যেত৷ মাঝে আবার আন্দোলন করতে হতো৷ সেই একই পূর্ত দফতর রয়েছে৷ শুধু মানসিকতা বদলে গেছে৷
তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, পরিকাঠামো, রাস্তা, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ত্রিপুরা সরকার এখন সব দিকে কাজ করছে এবং অগ্রসর হচ্ছে৷ উষ্মা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তবে কেউ কেউ ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করে৷ অথচ দেশের মধ্যে ত্রিপুরাই একমাত্র রাজ্য যেখানে ১১৬টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে সরাসরি মহাকরণের নিত্যনৈমিত্তিক যোগাযোগ রয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্বতন সরকার শুধু আন্দোলনের নামে মানুষকে পিছিয়ে রেখেছিল৷ কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিচারধারার সরকার ত্রিপুরায় স্থাপিত হয়েছে৷ ফলে, মানুষকে পিছিয়ে রাখার বদলে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ জোর কদমে চলছে৷ এদিন কটাক্ষের সুরে বলেন, দেশ যখন প্রধানমন্ত্রীর দিশায় এগোচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাওবাদী, কমিউনিস্টরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে৷ দুনিয়ায় যদি গরিবকে শোষণ করার দল থাকে তা-হলে সেটা কমিউনিস্ট পার্টি, তোপ দাগেন তিনি৷
তাঁর কথায়, এখন ত্রিপুরার কৃষকরা স্বাভিমানী হয়েছেন৷ ২ লক্ষ ২২ হাজার কৃষকের অ্যাকাউন্টে বছরে ছয় হাজার টাকা করে পৌঁছে যাচ্ছে৷ এর জন্য কোনও আন্দোলন করতে হয়নি৷ এটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিন্তাধারার সরকারের পরিচয়৷
প্রসঙ্গত, নবনির্মিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবন উদ্বোধনে চেলাগাংয়ে গিয়ে মানুষের উষ্ণ অভ্যর্থনায় আপ্লুত ও অভিভূত হন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, যে ভাবে মানুষ কর্মস্থলে এবং রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থেকে আমায় অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তা অত্যন্ত উতাাহব্যঞ্জক৷ তাঁদের এই আন্তরিকতা আমায় কাজ করতে আরও উতারহ জোগাবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সকল অংশের মানুষের সহায়তায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে৷ করোনা আক্রান্তদের সুুস্থতার হার গতকাল পর্যন্ত ছিলো প্রায় ৯৮ শতাংশ৷ তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যের ১১৬টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে সরাসরি হেলথ ডিরেক্টরেট থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে৷ যারফলে মানুষ আরও ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করতে পারছেন৷ তিনি আরও বলেন, গত নভেম্বর মাসে চেলাগাঙ সফরে এসে যে সকল সমস্যাগুলির কথা জানতে পেরেছিলাম সেগুলি সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী চেলাকাহাম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক দেওয়া হয়েছে৷ সুকলের বাউণ্ডারি ওয়াল নির্মাণের জন্য ৬ লক্ষ ৮০ টাকা, বাজারের পাশে স্টিল বিজ নির্মাণের জন্য ১২ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা এবং রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ খুব শীঘই এই কাজগুলি শুরু হবে৷
তিনি বলেন, এখন প্রকৃত ভাতা প্রাপকরাই সামাজিক ভাতা পাচ্ছেন৷ বাদ পড়া ১০,২৭৭ জন এপিএল ভুক্ত ভাতা প্রাপকদের রাজ্য সরকার থেকে ভাতা প্রদান করা হবে৷ অতিরিক্ত ৩০ হাজার নতুন সামাজিক ভাতা প্রদানের জন্য কাজও চলছে৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রোগ প্রতিরোধ ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ডা: রাধা দেববর্মা৷ সভাপতিত্ব করেন করবুক ব্লকের ব্লক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান অসীম ত্রিপুরা৷ অনুষ্ঠানে শুরুতে পদ্মশ্রী বেণীচন্দ্র জমাতিয়ার প্রয়াণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়৷

