নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ ডিসেম্বর৷৷ অপহরণের চারদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও তাকে খুঁজে না পাওয়ায় এবং লিটন দেবনাথের মৃতদেহ পাওয়া গেছে বলে গুজবে দামছড়ার বাজার বার মঙ্গলবার বিশাল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ জানা গেছে ৩০ শতাংশ ব্যবসায়ীই আজ বাজারে আসেনি৷ সন্ধ্যা নামার আগেই বাজার প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়৷ সবাই আতঙ্কে নিজেদেরকে নিজনিজ ঘরে আবদ্ধ করে ফেলে৷
আবার কেউ কেউ নিজ বাড়ি ছেড়ে পাড়ার কারোর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে৷ অর্থাৎ গুজবকে কেন্দ্র করে দামছড়া ব্লকের ১৩টি এডিসি ভিলেজেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ এলাকার বিধায়ক বনয় ভূষণ দাসও এলাকা পরিদর্শন করেন৷ লিটন দেবনাথের পরিবারের সাথে তাদের বাড়িতে গিয়েই মিলিত হন৷ দামছড়াতে বিএসি চেয়ারম্যান উপেন্দ্র রিয়াং, ব্লক আধিকারিক পিযুষ দেব, দামছড়া থানার ওসি অমল দেববর্মা এবং এলাকার বিশিষ্টজন৷ জাতি-উপজাতিদেরকে নিয়ে বিধায়ক এক সভা করেন৷ ওসি অমল দেববর্মা তল্লাসীর অগ্রগতি তুলে ধরেন৷
অমলবাবু জানান, পুলিশ আশাবাদি কারণ ইতিমধ্যেই কিছু ক্লু পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেছে৷ গতকাল রাতে সন্দেহজনক তিনজনকে ডেকে এনে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়েছে৷ এই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ আগে দামছড়া শান্তিপূর্ণ ছিল৷ পরবর্তীতে দামছড়াতে শান্তিপূর্ণ রাখতে ১৩টি ভিলেজের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটা ত্রিস্তরীয় কমিটি গঠন করা হবে৷ সন্ধ্যায় বিজেপি দলের পক্ষ থেকে বিজেপি-র উত্তর জেলা এসটি মোর্চার চেয়ারম্যান শচীন লড়াই চৌধুরী এবং স্থানীয় শাসকদলীয় নেতা পার্থ দেবের নেতৃত্বে লিটন দেবনাথের বাড়িতে গিয়ে চাল, ডাল, কম্বল, শীতবস্ত্র-সহ ত্রাণ দিয়ে আসা হয়৷ পুলিশ দিনরাত তল্লাসী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে৷ তবে ২০১৯-এর জুলাই মাসে বনসুলে মৃতদেহ পাওয়া৷
হাতির মাহুতের নির্মমভাবে হত্যা কান্ড সংগঠিত করা, রমেন্দ্র সিন্হার মৃতদেহ উদ্ধার, ইদানিং লিটন দেবনাথ অপহরণ, পরপর চারটি ঘটনা দামছড়াবাসীকে আতঙ্কের গহ্বরে নিয়ে গেছে৷ এই চারটি ঘটনাই সমগ্র ত্রিপুরা রাজ্যে তোলপাড় করেছে৷ তবে লিটন দেবনাথ অপহরণের পেছনে কোন বড় উগ্রবাদি গোষ্ঠী জড়িত আছে বলে স্থানীয়রা জানতে নারাজ৷ কারণ লিটন দেবনাথ বিভিন্ন সময়ে ড্রাগসের কারবারের সাথে জড়িত আছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে৷
ড্রাগস্ সংক্রান্ত লেনদেন থেকেও এই অপহরণ সংগঠিত হয়েছে বলে বিজ্ঞজনদের মতামত৷ তা না হলে ২০২০-এ মাত্র দেড় লক্ষ টাকা মুক্তিপণ একেবারেই বেমানান৷ দামছড়াতে ২০০৭ সালে সূর্যরাম রিয়াং-এর নেতৃত্বে বিএনএলএফ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল৷ আসামের মেখলীছড়া থেকে তখন দুইজনকে অপহরণ করেছিল তারা৷ তারপর থেকেই দামছড়ার পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করে৷ তারাও সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যায়৷ তাই কোন গোষ্ঠীর কাজ না বলেই বিশেষজ্ঞরা বলছে৷

